ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট না নিয়ে ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। শনিবার সকালে মিরপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ইভিএমে ভোট কারচুপির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা এই পদ্ধতিতে ভোট না নিয়ে প্রচলিত নিয়মে ব্যালটে ভোট নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ভোট কারচুপির জন্য ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা চাই ব্যালটের মাধ্যমেই ভোট নেয়া হোক। তবে আমরা বার বার দাবি করার পরও নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট নেয়ার পক্ষেই অবস্থান করছে। তাই এখন আমরা দলীয় নেতাকর্মীদের ইভিএমের বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচার শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গোপীবাগের নিজ বাসার সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের জড়ো করে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি নির্বাচনের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। এর পর তিনি পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে ইশরাক হোসেন সিটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করার জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই সতর্ক থাকবেন। এ নির্বাচনে কোন প্রার্থী বা পরিবারের প্রভাব পড়বে না। কারণ, দেশটা কারও পারিবারিক সম্পত্তি নয়। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক হোসেন বলেন, আমি যতটুকু জানি উনি (তাপস) একজন সজ্জন ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক এবং আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, নির্বাচনে কোন প্রকার প্রভাব বিস্তার করবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকবেন তারা নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এরপরে নির্বাচনী ফল যা হবে আমরা তা মেনে নেব। কিন্তু নির্বাচনে কোন কারচুপি হলে জনগণ কোনভাবেই সেটা মেনে নেব না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আপনাদের ওপর হামলা বা প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইশরাক হোসেন বলেন, আমার পাশে এখনও মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। উনার নাম আমিনুল ইসলাম, উনি ৫৬ নং ওয়ার্ডের কামরাঙ্গীরচর এলাকার আমাদের একজন কর্মী। শুক্রবার ধানের শীষ প্রতীকের প্রচার চালানোর সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালায়। আর কে অস্বীকার করল না করল সেটাতে কিছু যায় আসে না। বাস্তবতা তো থেকেই যায়। তার মতো আরও অনেককেই আহত করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাদের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীকেও আহত করা হয়েছে। আমি এ বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তারপরও বলবেন অভিযোগ সঠিক নয়! দেশটা কারও জমিদারি নয় মন্তব্য করে ইশরাক বলেন, আমরাও কারও কথায় পরোয়া করিনা। উনারা কি বললেন, না বললেন সেটা তো কিছু যায় আসে না। যেটা দৃশ্যমান সেটা সবাই দেখছেন। এটা কারও একার দেশ না। এটা আমাদেরও দেশ। এখানে কারও জমিদারি চলবে না। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সবার সমান অধিকার। ইশরাক বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে আমার প্রতিপক্ষ কোন পরিবারের সেটা আমি বড় করে দেখতে চাই না। কারণ, এই দল থেকে যারা মনোনয়ন পাবে সবাই তো দলের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা পাবে। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ, তারা তো রাষ্ট্রযন্ত্র দলীয়করণ করেছে। এই দেশটার মালিক হচ্ছে জনগণ। এ দেশটা কারও পরিবারের সম্পত্তি নয়। আমি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই স্বৈরাচারকে বিদায় করব। ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে কি না এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেয়েছেন জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন বলেন, খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। প্রথম দিকে প্রচারের সময় তারা আমাদের বলেছিলেন, আমরা কি ভোট দিতে পারব? তারা গত নির্বাচনের আলোকে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে ভোটাররা নিজেরাই সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন এবার ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং ধানের শীষে ভোট দেবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, ভোট কেন্দ্রে পাহারা বলতে কোন কিছু নেই। কেউ যদি বলে থাকে সেটা ইনফরমাল ল্যাঙ্গুয়েজে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়। এবারও আমরা সেটা করব। এবার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা নিযুক্ত থাকবেন তারা সততার সঙ্গে এবং জনগণের সঙ্গে কাজ করবেন বলে আমি আশা করি। কারণ তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে জনগণের প্রতি। তারা কোন দলীয় ক্যাডার বাহিনী নয়। আমরা তাদের সহযোগিতা করব। আমরা আশা করছি সবার সার্বিক সহযোগিতায় একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এ সময় ইশরাক হোসেনের সঙ্গে ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ। তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচার শনিবার বেলা ১১টায় মিরপুর ৬নং সেকশন কাঁচাবাজার এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এরপর তিনি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন। গণসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের সঙ্গে আপোস করেননি বলেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। ১ ফেব্রুয়ারি ধানের শীষে ভোট দিলে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ তরান্বিত হবে। তাঁকে আর আটক রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে দেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। ধানের শীষের প্রচারকালে হামলা ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তাবিথ আউয়াল বলেন, দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। এ জন্য সামগ্রিকভাবে নির্বাচনে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমাদের মনোবল শক্ত আছে, আমরা ইতিবাচক ভূমিকায় আছি, এ ভূমিকায়ই থাকব। তিনি বলেন, ভোটারদের মন এখন ১ ফেব্রুয়ারির দিকে, ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে আমরা জয়লাভ করব। তাবিথ আউয়াল বলেন, ইভিএমের বিষয়ে আমাদের জোর আপত্তি রয়েছে, আমরা ইসিকে অনুরোধ করছি, আমরা বলেছি সব যুক্তিগুলো আমলে নিয়ে ইভিএম এ নির্বাচন বন্ধ রাখুন। অন্তত এ নির্বাচনে ব্যালটে ভোট নিন। ভবিষ্যতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা যাবে। তিনি বলেন, মিরপুরে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা চলছে। আমরা বিজয়ী হলে এসব নির্মূলে কাজ করব। কাউকে অন্যায় করতে দেয়া হবে না। মিরপুর গার্মেন্টস শিল্প এলাকা। এখানে গার্মেন্টস কর্মীদের নিরাপত্তা নেই। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করব। তাবিথ আউয়াল বলেন, বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করতে বারবার পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে বস্তিবাসীরা অনেক কষ্টে আছেন। আমরা নির্বাচিত হতে পারলে তাদের পুনর্বাসন করব। তিনি বলেন, আমরা ভোটারদের মাঝে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি, আর কোন অঘটন ঘটুক তা আমরা চাই না। যত বাধা আসুক আমরা শৃঙ্খলা ভাঙ্গব না। কারণ আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে জনগণ, তারা আমাদের সঙ্গে আছেন। প্রচারে নেমে আমরা জনগণের ব্যাপক সাড়া আমরা পাচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমাদের প্রচারে লোকজন বাড়ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। এ সময় তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাহফুজ হোসাইন খান সুমন, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক এবিএম রাজ্জাক, যুবদল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন প্রমুখ।
×