মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর সিল্কের ঐতিহ্য ফেরাতে ও রেশম শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বার্ষিক ১০০ মেট্রিকটন রেশম সুতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সম্বলিত মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে রাজশাহী রেশম কারখানায় আরও ২৩টি লুম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০০২ সালে বন্ধ হওয়ার ১৬ বছর পর প্রথমে ৬টি, তারপরে ৫টি, এভাবে এ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ১৯টি লুম চালু করা হয়েছে। তবে আগামী জুলাই মাসের দিকে কারখানায় আরও ২৩টি লুম চালু হতে যাচ্ছে। এই ২৩টি লুম চালু হলে কারখানায় চালুকৃত লুমের সংখ্যা হবে ৪২টি।
জানা গেছে, নতুন করে চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কারখানায় ৭ হাজার ৮৯১ গজ কাপড় তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে কাপড় বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার। আরও কাপড় স্টকে রয়েছে। বর্তমানে কারখানায় গরদ শাড়ি, প্রিন্টের শাড়ি, বিভিন্ন ধরনের থান কাপড়, টাই, টুপিস, ওড়না, হিজাব উৎপাদন হচ্ছে। কারখানায় পর্যায়ক্রমে ৬টি করে ১৯টি লুমে দৈনিক ভিত্তিতে ২২ জন শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে রাজশাহী কারখানায় ১৯টি লুম চালু আছে। এতে দৈনিক ভিত্তিতে ২২ জন শ্রমিক কাজ করেন। ২০১৮ সালে নতুন করে চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কারখানায় ৭ হাজার ৮৯১ গজ কাপড় তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে কাপড় বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার।
রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেন, জুলাই মাসের দিকে সর্বমোট ৪২টি লুম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা দরকার। ইতোমধ্যে এ টাকা চেয়ে প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে। ৪২টি লুম চালু হলে আগামীতে প্রতিবছরে প্রায় ৫৫ হাজার গজের অধিক কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে কিছু টাকা আছে সেটা দিয়ে এ লুমগুলো মেরামত করা হবে। যেহেতু সরকারী টাকায় এতগুলো লুম চালানো সম্ভব না। মেইটেইন্স, লেবার বিলসহ বিভিন্ন খরচ আছে। তাই কারখানা প্রাইভেট পার্টনারশিপে দেয়ারও পরিকল্পনা আছে। এতে আমাদের মালিকানায় চুক্তির মাধ্যমে পাবলিকলি কারখানা চলবে। এতে বহুগুণে উৎপাদন বাড়বে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, রেশম শিল্পের উন্নয়নে বোর্ড বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে বার্ষিক ১০০ মেট্রিকটন রেশম সুতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সম্বলিত মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ হাজার রেশম চাষীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে অর্থ সহায়তা প্রদানসহ চীন, ভারত থেকে উন্নত রেশম কীট ও উন্নত তুঁত জাত আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় এই রেশম কারখানা। রেশমের উন্নয়নে রাজশাহীতেই স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় রেখে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক। সে সময় অনেক আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী। দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৫টি লুম চালুর মধ্য দিয়ে বন্ধ কারখানার চাকা আবারও চালু হয়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ ফজলে হোসেন বাদশা এটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: