ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াবহ দূষিত হচ্ছে নদী ও পরিবেশ

উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার নেই

প্রকাশিত: ১২:২৪, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার নেই

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার (এফিলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সংক্ষেপে ইটিপি) স্থাপন করা হয়নি। এদিকে উত্তরের সরকারী দশটি চিনিকলের নয়টিতেই ইটিপি নেই। শিল্প প্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত বিষাক্ত তরল রাসায়নিক বর্জ্য সরসরি নদীতে ও ফসলি ভূমিতে পড়ছে। ভয়াবহ দূষিত হচ্ছে জলাশয় নদ নদী। বড় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। বিষাক্ত বর্জ্যে উত্তরের নয়টি নদীর পানির রং কালচে হয়ে গিয়েছে। এইসব নদীর জলে কেউ নামতে চায় না। বগুড়ায় অবস্থিত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতর জানায়, ইটিপি স্থাপন না করায় বগুড়া অঞ্চলের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জারিমানা এবং দ্রুত ইটিপি স্থাপনে তাগাদা দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। চিনিকলগুলো বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে একটি চিনিকল ইটিপি স্থাপন করেছে। অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য পড়ে বগুড়ার করতোয়া নদী সবচেয়ে বেশি দূষিত। দখলদারের কবলে পড়ে ও ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়ে করতোয়া নদী সরু হয়ে গিয়েছে। মনে হবে শহরের বড় ডোবা। যেটুকু পানি আছে তা কালো। শেরপুরের ছোনকা রাইসব্রান ভোজ্যতেল উৎপাদন কারখানা মজুমদার প্রোডাক্ট লিমিটেডের উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় ছোট আকারে ইটিপি স্থাপন করার পর তা বন্ধ রেখে কারখানা চালু রেখেছে। এই কারখানার বর্জ্য সরাসরি বাঙালী নদীতে পড়ছে। পরিবেশ অধিদফতর গতবছর অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৮শ’ টাকা জারিমানা করে। একই অভিাযোগে ২০১৬ সালেও এই কারখানায় ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। মজুমদার প্রোডাক্ট লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের ইটিপি আকারে ছোট তবে বন্ধ থাকে না। বগুড়ার একটি পেপার মিল, তালোড়ার সূচী পাল্প ও পেপার মিল, কাহালুর কিবরিয়া পেপার মিল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ফাঁসিতলায় রাজা পেপার এ্যান্ড বোর্ড মিলে কোন ইটিপি নেই। এইসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সরাসরি করতোয়া, নাগর ও ইছামতি নদীতে পড়ছে। পরিবেশ অধিদফতর সূচী পাল্প মিলে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪শ’ টাকা, আল নূর প্রতিষ্ঠানকে দুই দফায় ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৫শ’ ২০ টাকা কিবরিয়া পেপার মিলকে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করে ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করেছে। এদিকে দেশের চিনিকলগুলোতে চিনিকলগুলোর আখ মাড়াই মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২২ হাজার ঘনমিটার রাসায়নিক বর্জ্য নির্গত হয়। এইসব বর্জ্যে করতোয়া, টাঙ্গন বাঙালী পদ্মা যমুনা আত্রই তুলশিগঙ্গা নারদ ইছামতি নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। বর্জ্যে উচ্চমাত্রায় বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (বিওডি) ও কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (সিওডি) থাকায় নদী ও জলাশয়ের পানিতে অক্সিজেন মাত্রা কমে যাচ্ছে। দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী হাইড্রোজেন সালফাইড নির্গত হয়ে পানির রং কালো হয়ে জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। দেশে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ১৭টি চিনিকল স্থাপিত হয়। এরমধ্যে নয়টি উত্তরবঙ্গে। পরে ৯০’র দশকে একটি স্থাপিত হয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় দশটি। উত্তরাঞ্চলের দশটি চিনিকল বহু যুগ ধরে বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলে দূষণের মাত্রা বাড়িয়েই চলেছে। পরিবেশ অধিদফতর প্রায় ১২ বছর আগে দূষণ রোধে সব চিনি কলে ইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী বর্জ্য পরিশোধনে প্রতিটি চিনিকলে ইটিপি স্থাপনের নির্দেশ দেন। সূত্র জানায়, ২০১০ সালের জুন মাসের মধ্যে নাটোর, ২০১১ সালের মধ্যে রাজশাহী, ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে জয়পুরহাট, শ্যামপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, সেতাবগঞ্জ, রংপুর চিনিকলে ইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে নাটোর ছাড়া কোথাও ইটিপি স্থাপিত হয়নি। পঞ্চগড় চিনিকলে ইটিপি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এক সূত্র জানায় দেশের ১৪টি চিনিকলে ইটিপি নির্মাণে বিএসএফআইসি একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। চলতি বছরের মধ্যে ইটিপি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
×