ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ডেঙ্গু মোকাবেলা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার’

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

‘ডেঙ্গু মোকাবেলা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার পিক মৌসুমের অনেক আগেই ডেঙ্গু মোকাবেলা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার। রবিবার রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য ভবনে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের আগাম বার্তা সংগ্রহের নানা কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা আবশ্যক। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার কামড় ও প্রজনন সম্পর্কে সচেতন থাকলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সফলতা আনতে বড় সহায়ক ভুমিকা রাখবে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারকে একত্রিত করে অভিন্ন ফোর্স হিসেবে গড়ে করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রবিবার বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা ঝোরা, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল হাসান, পরিচালক(এমআইএস) ডা. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্রাকটিশনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক (হেলথ ইমাজেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম) ডা. আয়েশা আক্তার, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানখিনসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টির উপর জোর দিয়ে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নতুন কিছু নয়। তবে গত বছর অস্বাভাবিক সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর পিক মৌসুম হলেও গত বছরের অভিভজ্ঞতায় বছর জুড়েই যেন ডেঙ্গুর মৌসুম। ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু মোকাবেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা আবশ্যক। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার কামড় ও প্রজনন সম্পর্কে সচেতন থাকলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সফলতা আনতে বড় সহায়ক ভুমিকা রাখবে। অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা ঝোরা বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারকে একত্রিত করে অভিন্ন ফোর্স হিসেবে গড়ে করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গুর বিভিন্ন সেরোটাইপ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার রয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনা সৃষ্টির বিকল্প নেই বলে জানান ডা. সানিয়া তহমিনা। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা বলেন, শহরকেন্দ্রিক ডেঙ্গু মোকাবেলা কার্যক্রমে সফলতা আনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে উঠেনি। ডেঙ্গুর প্রজনন ধ্বংস করে মশার কামড় থেকে নগরবাসীকে রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে সিটি করপোরেশ। ডেঙ্গু প্রজননে সহায়ক নগরীর জলাবদ্ধ নিরসনে দায়িত্ব প্রাপ্ত দু’টি প্রতিষ্ঠান হলো সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা। আর এই দু’টি প্রতিষ্ঠানই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণে আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া আবশ্যক। আর আবহাওয়া অধিদপতর রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্ব পড়ে পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপর। এভাবে ডেঙ্গু মোকাবেলায় আরও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু এই সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এখনো সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে উঠেনি। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়ে বক্তারা বলেন, গত বছরের অভিজ্ঞতায় ঢাকার বাইরে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক ডেঙ্গু মোকাবেলার চেয়ে গ্রামাঞ্চলের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকগুণ বেশি কঠিন কাজ। ঢাকার বাইরে মফস্বল শহর ও গ্রামাঞ্চলের ডেঙ্গু মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি থাকার পরামর্শ দেন আলোচকবৃন্দ। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক (ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম) ডা. আয়েশা আক্তার রবিবার জনকণ্ঠকে জানান, সারাদেশে চলতি বছর ১ জানুয়রি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৭৯ জন এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ১৬৮ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১১ জন ডেঙ্গু রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে ২ জন। তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩৫৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৫৬ জন। ২০২০ সালে কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
×