ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

মহানগরীজুড়ে বর্তমানে সাজ সাজ রব। উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত হলেও লাখ লাখ ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারসহ নানা নির্বাচনী প্রতীক-মার্কাসহ সাজসজ্জায় সুশোভিত রাজধানী। ঢাকা মহানগরী যেন রীতিমতো উৎসবের রূপ নিয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে দিন-রাতব্যাপী মাইকিং-মিছিল-সমাবেশ-জনসভা-পথসভা, অলি-গলি-বাড়িতে-বাড়িতে প্রার্থীদের চষে বেড়ানো; দরজায় কড়া নাড়া, লাল-নীল-হলুদ-সবুজ আলোকসজ্জা, গান-বাজনা-নাচ, এমনকি বৃহন্নলা নৃত্যও বাদ যাচ্ছে না। এই বিপুল-ব্যাপক উৎসব আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটবে ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটিতে দুই মেয়র এবং ১২৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার মেয়র প্রার্থীর সরব ও উল্লাসমুখর প্রচার-প্রচারণা যদিও সমধিক দৃশ্যমান ও আলোচিত তবু, অন্যান্য মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী কম যাচ্ছেন না কোন অংশে। এমনকি সংরক্ষিত নারী আসনে পিছিয়ে নেই নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে যেটি দৃশ্যমান তা হলো মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের কথার ফুলঝুরি। প্রকারান্তরে যাকে বলা যায় স্বপ্নের বেসাতি বা ফেরিওয়ালা। প্রায় প্রত্যেকেই নানা আহা-বাহা মাধুরী মেশানো কথা বলছেন। স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসীকে। কেউ বলছেন তিনি নির্বাচিত হলে রাজধানীর খাল-বিল পুনরুদ্ধার করবেন। জলাবদ্ধতা থাকবে না। ময়লা-আবর্জনা-বর্জ্য দূর করে মশকমুক্ত করবেন রাজধানীকে। কেউ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যানজটমুক্ত রজধানীর। হকার ও বস্তি উচ্ছেদের। ফুটপাথ কেবল হবে পথচারীদের জন্য। রকমারি প্রতিশ্রুতিসহ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কথাও শোনা যাচ্ছে। এসবই ভাল এবং ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে। এও সত্য যে, নগরবাসী ঢাকা শহর পত্তনের প্রায় শুরু থেকেই শুনে আসছেন এসব প্রতিশ্রুতি তথা প্রচার-প্রচারণার কথা। এসব যে নিছক কথার কথা তথা নির্বাচনী বুলি অথবা অন্য কথায় বলা যায় মিথ্যার বেসাতি তাও তারা জানেন বিলক্ষণ। তবু তারা সানন্দে ও সাগ্রহে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন দুই মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে। ভোট উৎসব বলে কথা! দুঃখজনক হলো- মেয়র আসেন মেয়র যান। হা-পিত্যেশ করা নগরবাসীর প্রত্যাশা আর পূরণ হয় না। অবশ্য নগরবাসী এবারও আশা নিয়ে ভোট দিতে যাবেন স্বপ্ন পূরণের জন্য। সর্বাগ্রে সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, রাজধানীর সমস্যা অনেক। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির প্রমাণ দিতে গিয়ে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। প্রায় দুই কোটি অধিবাসী অধ্যুষিত রাজধানীতে নেই পর্যাপ্ত আবাসন, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সর্বোপরি গ্যাস-পানি-বিদ্যুত, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তদুপরি আছে মাত্রাতিরিক্ত বাস, ট্রাক, টেম্পো, লরি, মাইক্রো, প্রাইভেটকার, লেগুনা ইত্যাদি। সেই অনুপাতে নেই খোলা জায়গা, মহানগরীর ফুসফুস বলে খ্যাত পার্ক, গাছপালা, নদী-নালা। নেই মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য পর্যাপ্ত উপাদান ও ব্যবস্থা। তথাকথিত উন্নয়নের প্রয়োজনে আমরা অনেক আগেই দখল করেছি রাজধানীর খাল-নালা ও ছোট-বড় পার্কগুলো। সুতরাং নগরবাসীর এখন হাঁসফাঁস অবস্থা। এবারের নির্বাচনকে ঘিরেও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে নবনির্বাচিত মেয়রদ্বয় ও কাউন্সিলরদের এসব সমস্যার সমাধানে আন্তরিক মনোনিবেশ করতে হবে। যানজট সমস্যা, জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন, মশকনিধন, ফুটপাথ ও বস্তি উচ্ছেদ, সর্বোপরি ডেঙ্গুর ভীতি থেকে রক্ষা করতে হবে রাজধানীবাসীকে। বিজয়ীরা যেন এসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি কখনই ভুলে না যান। বহু কথিত নগর সরকারের কথা শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। কবে হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা কে জানে। আপাতত না হয় ঢাকা ওয়াসা, বিআরটিএ, বিটিআরসি, বিদ্যুত বিভাগ, ডিএমপি, ডিসি অফিস, রাজউকসহ ১৬টি সংস্থার মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় হোক, যার সার্বিক তত্ত্বাধান করবেন দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয়।
×