সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বছর দুয়েক আগেই। ইতোমধ্যে হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি পণ্য রফতানির হার বেড়েছে। দেশে তৈরি মোবাইল ও ল্যাপটপ রফতানি হচ্ছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশে খুব শীঘ্রই রফতানি বাণিজ্যে তৈরি পোশাক খাতের জায়গা করে নেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সময়ে ২০ লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী বা মানবসম্পদ তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এজন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা কাজ করতে পারেন এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলমান। এসবই দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের জন্য সুসংবাদ। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব। আউটসোর্র্সিংয়ে বিশেষ প্রণোদনার নীতিও গ্রহণ করা হয়েছে।
দ্রুত গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করায় বিপিও খাত থেকে প্রতিবছর ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করা সম্ভব বলেই প্রতীয়মান হয়। আশা করা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে এক লাখ তরুণের কর্মসংস্থান হবে বিপিওতে। তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনও আইটি দক্ষতার অভাব রয়েছে। এই কাজে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে পারলে তা দেশের সমৃদ্ধির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টর বিগত কয়েক বছর যাবতই বড় স্বপ্ন ও আশা-ভরসার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটা একটা সুখবর। এখান থেকে উপার্জনের বহু পথ বেরিয়ে আসছে। আউটসোর্সিং কর্মবাজারে প্রবেশ লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর সামনে আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে বদলে যাচ্ছে অনেক বেকার তরুণ-তরুণীর ভাগ্য। এ থেকে মাসে ন্যূনতম ত্রিশ হাজার টাকা থেকে শুরু“করে সর্বোচ্চ দু-তিন লাখ টাকা উপার্জনের পথ খুলে গেছে। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তরুণরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ঘরে বসে স্বাধীনভাবে ঝুঁকিহীন কাজ করার সুবিধার কারণে নারীদের জন্য এই ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং ক্রমশ প্রিয় হয়ে উঠছে।
শুধু শহরেই নয়, জেলা-উপজেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে ‘ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র’ দেশব্যাপী গ্রামের মানুষকে অভাবিত সেবা দিয়ে চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তি যেমন স্বকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, তেমনি আগামীতে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। মানবসম্পদকে সত্যিকারভাবে সুযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য নানা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাতে অর্থসংস্থান আরও চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠছে। একমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই দেখা যাচ্ছে আশার উজ্জ্বল আলো। ডাক ও টেলিযোগযোগমন্ত্রীর কথা সত্য প্রমাণিত হোক। ২০৪১ সালের মধ্যে এই সেক্টর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের চেয়ে অনেক বেশি আয় অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা আসুক।
শীর্ষ সংবাদ: