ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গত পাঁচ মাসে ৫৮৪১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি;###;আগের বছরের একই সময় বিক্রি হয় ২১৬৬২ কোটি টাকার

এত টাকা গেল কই? সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে বিপুল পরিমাণে

প্রকাশিত: ১০:১৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

এত টাকা গেল কই? সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে বিপুল পরিমাণে

রহিম শেখ ॥ বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন সার্টিফিকেট এবং ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে সুদ কমিয়ে দেয়ায় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে লাগছে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। প্রকৃত গ্রাহকদের হাতে সঞ্চয়পত্র পৌঁছাতেই এমন সব উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু গত জুলাইয়ে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অস্বাভাবিক স্থবিরতা নেমে এসেছে। যার ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেক কমে গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের নবেম্বরে প্রতিদিন নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ১২৮ কোটি টাকার। গত বছরের নবেম্বরে তা ১০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের অর্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে আসেনি ব্যাংকে আমানত হিসেবে। তবে কালো টাকার বড় অংশই প্লট বা ফ্ল্যাট ক্রয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজার থেকে নগদ ডলার কিনে নিয়েও জমা করছেন অনেকে। এছাড়া দেশের বাইরে পাচার হওয়ার কথাও বলছেন অনেকেই। জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটার টান শুরু হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিনই। গত বছরের আগস্ট থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ওই মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি এক লাফে কমে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর তা আরও কমে সেপ্টেম্বরে ৯৮৫ কোটি, অক্টোবরে ৮২২ কোটি ও সর্বশেষ নবেম্বরে ৩২০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। সঞ্চয়পত্র অধিদফতর থেকে ডিসেম্বরের হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। মূলত বিভিন্ন পক্ষের দাবিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে এ খাতে প্রকৃত বিনিয়োগকারী বের করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্য একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যত তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি নেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির বুথে। অল্প ক’জন গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছেন। খুব অল্প সময়েই গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র কিনে ফিরে যাচ্ছেন। কিছু ক্রেতা এসেছেন মুনাফা তুলতে। অথচ ছয় মাস আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য দিনভর লাইনে দাঁড়াতে হতো গ্রাহকদের। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়েও। সোনালী ব্যাংক ছাড়াও এ কার্যালয়ে সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর একটি শাখা রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে ওই কার্যালয় থেকে দুই-একজন গ্রাহককে সঞ্চয়পত্র কিনতে দেখা যায়। জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ মোদাচ্ছের হাসান জানান, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে আগের মতো চাপ নেই। তিনি বলেন, প্রতিদিন অল্প কিছু গ্রাহক হলেও সঞ্চয়পত্র কিনছেন। পেনশনারসহ প্রকৃত গ্রাহকরা বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন। অটোমেশন চালু হওয়ার পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সব অনিয়ম বন্ধ হয়ে গেছে। আগে বড় অংকের সঞ্চয়পত্র বিক্রির জন্য প্রভাবশালীরা তদবির করতেন, এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেসব তদবির বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। সর্বশেষ নবেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি মাত্র ৩২০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। যদিও ২০১৮ সালের নবেম্বরে নিট ৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। ২০১৯ সালের নবেম্বর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে বলে মনে করেন জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের পরিচালক মোঃ আবু তালেব। তিনি বলেন, আগে কে কত টাকার সঞ্চয়পত্র কিনছে, কেন্দ্রীয়ভাবে তা জানার সুযোগ ছিল না। এখন অটোমেশনের কারণে সঞ্চয়পত্রের সব ক্রেতার তথ্য কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে সংরক্ষিত হচ্ছে। কেউ চাইলেই সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না। এছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট জমা দিতে হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বরসহ অর্থের উৎস জানাতে হচ্ছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে স্বচ্ছতা এসেছে। ফলে এ খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের পথও বন্ধ হয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এতটা কমে যাওয়াটাও কাক্সিক্ষত নয়। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ানোর বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে যে অর্থে প্রভাবশালীরা সঞ্চয়পত্র কিনতেন, সে অর্থ এখন কোথায় বিনিয়োগ করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের একটি অংশের অর্থ ব্যাংকে আমানত হিসেবে এসেছে। তবে কালো টাকার বড় অংশই প্লট বা ফ্ল্যাট ক্রয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজার থেকে নগদ ডলার কিনে নিয়েও জমা করছেন অনেকে। এছাড়া দেশের বাইরে পাচার তো হচ্ছেই। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বিক্রি ও নির্মাণ বেড়েছে। বর্তমানে আবাসন খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ-সাত হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট নির্মাণ করছেন। এসব ফ্ল্যাট নির্মাণের আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আবার মধ্যবিত্তদের জন্য তৈরি করা ছোট আকারের ফ্ল্যাট অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। যদিও অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে মাসের পর থেকে এই হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি। জানা যায়, অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হতো। ক্রয়সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রও কিনতেন প্রভাবশালীরা। ছিল না সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের কোন কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারও। ফলে কালো টাকা বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হয়ে উঠেছিল সঞ্চয়পত্র। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনায় বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হচ্ছে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ই-টিআইএন সার্টিফিকেট। ফলে কালো টাকার মালিকরা অর্থের বড় অংশই বিদেশে পাচার করছেন। বাকি অর্থ বিনিয়োগ করছেন প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়ে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বিক্রি বেড়েছে। জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৩ সালের পর ফ্ল্যাটের দাম খুব একটা বাড়েনি। ২০১৩-১৭ পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক কমে যায়। ফলে বিপুলসংখ্যক ফ্ল্যাট অবিক্রিত ছিল। তবে দুই বছর ধরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। এখন বিক্রি অনেকাংশেই বেড়েছে। এদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ আসেনি ব্যাংকে আমানত হিসেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত নবেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয় ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কিন্তু ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশের ওপরে। অর্থাৎ আমানত যে হারে বেড়েছে, এর চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। ব্যাংকাররা আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন সঞ্চয়পত্রের ঋণের সুদ। এদিকে বাজার থেকে নগদ ডলার কিনে নিয়েও জমা করছেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর থেকে কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজার) ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে লাভের আশায় অনেকেই নগদ ডলার কিনে রাখছেন। এছাড়া দেশের বাইরে টাকা পাচার হওয়ার কথাও বলছেন অনেকেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশ থেকে বিভিন্ন পথে টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পণ্য আমদানির এলসি খুলে বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে দেয়ার পরও পণ্য দেশে না এনে, আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে, এলসিতে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে কম পণ্য দেশে এনে, বেশি দামের পণ্যের এলসি খুলে কম দামের পণ্য দেশে এনে টাকা পাচার করা হচ্ছে। রফতানির মধ্যে পণ্যের রফতানি মূল্য দেশে না এনে, মোট রফতানির মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেশে এনে, বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য রফতানি করে, বেশি পণ্য রফতানি করে এলসিতে কম দেখানোর মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এর বাইরে অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ের আওতায়ও টাকা পাচার হচ্ছে। এছাড়া হুন্ডি, স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকার পাচার হচ্ছে। এর বাইরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে না এনে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়ায় এখন দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। আগে দেশ থেকে টাকা পাচার হতো হুন্ডি ও চোরাচালানের মাধ্যমে। এতে ঝুঁকির মাত্রা বেশি ছিল। ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাচারের কোন সুযোগ ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাচার হচ্ছে বেশি। পাচার করা টাকার একটি বড় অংশই যাচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও এ ঘটনা ধরা পড়েছে। বিশেষ শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানির নামে টাকা পাচার হচ্ছে বেশি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নানা পথে টাকা পাচার হচ্ছে। আমদানি, রফতানি, হুন্ডি এসব খাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রফতানি মূল্য বা আমদানি পণ্য দেশে না এলে পরবর্তী এলসি খোলায় কঠরতা আরোপ করতে হবে। একই পণ্যের দাম, কি পণ্য আসছে-যাচ্ছে এগুলো তদারকি বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, টাকাকে অলস রাখা যাবে না। বিনিয়োগমুখী করতে হবে। তাহলে পাচার কমে যাবে।
×