ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই আজ

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই  আজ

মিথুন আশরাফ ॥ পাকিস্তান সফরে হযবরল অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। টানা দুই টি২০ ম্যাচ হেরেছে। খুবই বাজে হার। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ হার হয়ে গেছে। আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বিকেল তিনটায় হতে যাওয়া তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে হারলে হোয়াইটওয়াশও হবে বাংলাদেশ দল। সঙ্গে একাদশ নিয়েও মহাভাবনা চলছে। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে একাদশে একাধিক পরিবর্তনও হতে পারে। দলের যে কিছুই হচ্ছে না। পরিবর্তন এনে যদি ভাল কিছু মিলে। এই ভাবনাতেই আছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল দ্বিতীয় টি২০তে ৬৫ রানের ইনিংস খেললেও তার মন্থর গতিতে ব্যাটিং সমালোচনায় পড়েছে। তার সঙ্গে থাকা নাঈম শেখ ভারত সফরে উজ্জ্বলতা ছড়ানোর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টি২০তেও ৪৩ রান করেন। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তেই ব্যর্থতার বৃত্তে আটকা পড়েন তিনি। লিটন কুমার দাস (৮ ও ১২ রান) দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হন। মেহেদী হাসান বিপিএলে দারুণ ব্যাটিং করেন। তাই মোহাম্মদ মিঠুনের (৫*) পরিবর্তে মেহেদীকে দ্বিতীয় টি২০তে সুযোগ করে দেয়া হয়। শুরুতে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে যদি দলকে কিছু উপহার দিতে পারেন। কিন্তু মেহেদী (৯) সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। আফিফ হোসেন ধ্রুব দ্বিতীয় টি২০তে (২১) আলো ছড়ালেও প্রথম টি২০তে (৯) দলের হাল ধরতে ব্যর্থ হন। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৯ ও ১২ রান) নিজেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। সৌম্য সরকারকে (৫* ও ৭ রান) শেষদিকে নামানোর উদ্দেশ্যই হলো হার্ডহিটিং করে কিছু রান দ্রুত তুলে দেবেন। কিন্তু তিনিও পারেননি। ব্যাটসম্যানদের অবস্থা এতটাই কাহিল হয় যে প্রথম টি২০তে ১৪১ রান করার পর দ্বিতীয় টি২০তে ১৩৬ রানেই দম ফুরায়। অথচ শোয়েব মালিক, বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজরা কি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করে গেছেন। প্রথম টি২০তে বোলাররা উজ্জ্বলতা দেখানোয় পাকিস্তানকে ১৯.৩ ওভার পর্যন্ত খেলায় নিয়ে যাওয়া যায়। আবার ৫ উইকেটও হারায় পাকিস্তান। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তে ১৬.৪ ওভারেই খেলা শেষ হয়ে যায়। ১ উইকেটের বেশি বোলাররা শিকার করতে পারেননি। প্রথম টি২০তে বোলাররা ভাল করেন। ব্যাটিং আর ফিল্ডিংটা বাজে হয়। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। কোন বিভাগেই ভাল কিছু করে দেখাতে পারেনি। মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে অনেক ভাবনায় পড়ে গেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রথম টি২০তে প্রতি ওভারে (৪ ওভারে ৪০ রান) ১০ রান করে দেন। দ্বিতীয় টি২০তে (৩ ওভারে ২৯ রান) প্রায় ১০ রানের কাছে দেন। মুস্তাফিজের ধার যে নেই তা আবার বোঝা যাচ্ছে। শফিউল ইসলাম সেই তুলনায় নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন। প্রথম টি২০তে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। দ্বিতীয় টি২০তে ৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে পাকিস্তানের পড়া একমাত্র উইকেটটি শিকার করেন। আল-আমিন হোসেনও দারুণ বোলিং করছেন। রান কম দিচ্ছেন। কিন্তু উইকেট শিকার করাও যে জরুরী, সেই কাজটিই করতে পারছেন না। স্পেশালিস্ট স্পিনারের মধ্যে শুধু আমিনুল ইসলাম বিপ্লবই আছেন। তিনিও উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলেছেন। ব্যাটিং আর বোলিংয়ে এমনই অবস্থা হয়েছে, রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা ক্রিকেটাররা আজ সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। সফরে থাকা ১৫ ক্রিকেটারের মধ্যে ১২ ক্রিকেটারের খেলা হয়ে গেছে। এখন বাকি আছেন আর তিনজন। বিপিএলে নজর কাড়েন পেসার হাসান মাহমুদ। তিনি এবার জাতীয় দলের নতুন চমক। ঘণ্টায় ১৪২ কিমি গতির বেশি বোলিং করতে পারেন। তিনিসহ আরেক পেসার রুবেল হোসেন ও ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত এখনও একাদশে সুযোগ পাননি। বিপিএলে দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেট থাকা শান্ত আজ তৃতীয় ও শেষ টি২০তে খেলতে পারেন। তিনি সৌম্য সরকারের পরিবর্তে খেলতে পারেন। যতদূর জানা গেছে সৌম্য ইনজুরিতে পড়েছেন। তাই আজ তিনি একাদশে থাকছেন না। তার পরিবর্তে শান্ত খেলবেন। ব্যাটিংয়ে এই একটি পরিবর্তনই আজ হতে পারে। তবে বোলিংয়ে একাধিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। মুস্তাফিজ ও আল-আমিন হোসেনকে একাদশের বাইরে রেখে রুবেল হোসেন ও হাসান মাহমুদকে খেলানো হতে পারে। একাধিক পরিবর্তন নিয়েই আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তৃতীয় টি২০তে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। দলে যে পরিবর্তনের হাওয়া ভালভাবেই লাগবে তা প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোই বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। আমরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে। তিন খেলোয়াড় এখনও সুযোগ পায়নি, তারা অবশ্যই দলে আসবে এবং আমরা আরও পরিকল্পনা করব।’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে খেলা খেলছে বাংলাদেশ, এর পরিবর্তন না হলে জয় পাওয়া মুশকিল। যতই একাদশে পরিবর্তন আনা হোক, জিততে হলে সববিভাগেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের ভাল করতে হবে। তা না হলে জয় সম্ভব নয়। আর আজও যদি জয় না মিলে তাহলে হোয়াইটওয়াশ হয়ে যাবে বাংলাদেশ। একবারও যে পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ খেলতে গিয়ে ম্যাচ জেতা যায়নি, সেই ব্যর্থতার ধারা বজায় থাকবে। হোয়াইটওয়াশ হয়েই দেশে ফিরতে হবে। আজ বাংলাদেশের এই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচ।
×