ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে হামলার অভিযোগ বিএনপি প্রার্থী ইশরাকের

প্রকাশিত: ১০:২১, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

  নির্বাচনী প্রচারে হামলার অভিযোগ বিএনপি প্রার্থী ইশরাকের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনী প্রচারকালে প্রতিপক্ষ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, রবিবার দুপুরে গোপীবাগে নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারকালে সরকারী দলের লোকেরা তাদের ওপর হামলা করে। তবে এ অভিযোগের প্রতিবাদ জানিছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। তিনি বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয় বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে রবিবার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ভোটের মাধ্যমে এ সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দু’জনই জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচার ॥ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। সেখান থেকে প্রচার চালাতে চালাতে তিনি নিজ এলাকা গোপীবাগে নির্বাচনী প্রচার চালান। সেখানে দুপুরে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হওয়ার পর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিপক্ষের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। বিকেল ৩টায় নিজ বাসায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসনের সঙ্গে বৈঠক করেন ইশরাক হোসেন। শাপলা চত্বরে নির্বাচনী প্রচারকালে ইশরাক হোসেন বলেন, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার কারণে গুলি খেতে হলে শাপলা চত্বরে বুক চিতিয়ে দেব। তবুও মানুষের অধিকার আদায়ের পথ থেকে সরে দাঁড়াব না। এ সময় তার সঙ্গে অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। ইশরাক হোসেনের মতে, শুধু ঢাকা নয়- পুরো দেশে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি সকলে নির্ভয়ে দল বেঁধে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আমরা গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে রয়েছি। এ আন্দোলনের মাধ্যমে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্ত করব। প্রয়োজনে রক্ত দেব, জীবন দেব, তবুও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ। ইশরাক বলেন, এই সরকারে সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধার জাতি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছিল। আমরা কোন তাবেদারি মানব না, কারও জমিদারি মানব না। এই দেশটা কারও পারিবারিক সম্পত্তি নয়। রক্ত দিয়ে যে দেশ স্বাধীন করেছি, প্রয়োজনে আবার রক্ত দিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। শাপলা চত্বরে দাঁড়িয়ে গুলি খাব। তারপরও সত্য এবং ন্যায়ের পথ থেকে সরে দাঁড়াব না। ইশরাক বলেন, জনগণ আজকে জাগ্রত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল, জনগণ হবে রাষ্ট্রের মালিক, জনগণ হবে দেশের মালিক, জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক। জনগণ নির্ধারণ করবে কারা দেশ পরিচালনা করবে, জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। ১ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রাথমিক বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ইশরাক হোসেন তার বক্তব্যে তার যোগ্যতা নিজেই প্রমাণ করেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। ইশরাকের বাবা সাদেক হোসেন খোকা এবং আমি ঢাকা শহরের সাবেক মেয়র ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি ইশরাক হোসেন তার বাবা এবং চাচার যেই অভিজ্ঞতা ও সাহস তা কাজে লাগিয়ে আপনাদের পাশে থাকবে। ইশরাক যেই বক্তব্য দিল আমি বিশ্বাস করি ঢাকা মহানগরীতে এমন কোন প্রার্থী দাঁড়ায়নি যে তার সামনে এসে কথা বলতে পারবে। এটা আমার গর্ব না, এটা আমার অহঙ্কার না, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের জনগণ পরিবর্তন চায়। তারা এই অত্যাচারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী, নিপীড়নকারী, ভোট চোর এবং ব্যাংক লুট- শেয়ারবাজার লুটেরা সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সতর্ক থাকবেন যাতে করে কোন ভোট চোর, ভোট ডাকাত জনগণের অধিকার ছিনিয়ে নিতে না পারে। ভোটের প্রচারের ১৬তম দিনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিকদলের আয়োজনে শাপলা চত্বরে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের গণসংযোগ উপলক্ষে আয়োজিত এ পথসভায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঘটে। এ সময় তারা ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েও তারা স্লোগান দেয়। নির্বাচনী প্রচারকালে ইশরাক হোসেনের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, দলের কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, বিলকিস ইসলাম, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ। ইশরাকের সংবাদ সম্মেলন দুপুরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন জানান, গোপীবাগ-দিলকুশা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। এতে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছিলাম। গণসংযোগ শেষে হাটখোলা থেকে টিকাটুলী হয়ে আমার গোপীবাগের বাসার দিকে ফিরছিলাম। এখানে একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে আওয়ামী লীগের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাম্প রয়েছে। ৩৯ নং ওয়ার্ডের এ প্রার্থীর নাম আমি জানি না। তার ক্যাম্পের ২তলা থেকে একদল যুবক বড় বড় ইট নিক্ষেপ করে। এ সময় আমাদের কর্মীরা আহত হয়। এ ঘটনায় ক্যামেরাম্যানও আহত হয়েছেন। ইশরাক বলেন, আমি এগিয়ে গিয়ে তাদের বলি, আপনারা শান্ত থাকেন আমরা চলে যাচ্ছি। এরপর আমার কর্মীরা আমাকে ধরে নিয়ে আসে। তখন আমি জানতে পারি যে আমার এক কর্মীকে তারা আটক করে ভেতরে নিয়েছে, আমি তাকে ছাড়ানোর জন্য এগিয়ে যাই। পরে সম্ভবত আমাদের কর্মীরা তাকে বের করে আনে, আমাকেও নিবৃত্ত করে বাসার দিকে নিয়ে আসে। আসার পথে প্রতিপক্ষের নিক্ষেপ করা কয়েকটা ইট আমার গায়েও লাগতে গিয়েছিল, আমার কর্মীরা আমাকে রক্ষা করে। এ সময় গুলির আওয়াজও শুনতে পাই। এ ঘটনায় ৭-৮ জন আহত হয়েছে বলে আমরা জানি, বাকিদের কথা আমরা জানি না। গুলি আপনাদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কে গুলি করবে? আমাদের তো অস্ত্র থাকতে হবে! এই আমলে কি মনে হয় আমাদের হাতে অস্ত্র আছে? এই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সরকারের হাতেই তো অস্ত্র আছে, এটাতো সবাই জানে। তারা আমাদের জনপ্রিয়তায় ভীত। আমরা তো গণসংযোগ করছিলাম, বিনা উস্কানিতে কেন আমাদের ওপর হামলা করা হলো, আমাদের দিকে গুলি করা হলো? চেয়ার নিক্ষেপ করা হয়েছে, বড় বড় ইট নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইশরাক বলেন, আমাদের গণসংযোগের কর্মসূচী ছিল মতিঝিল হয়ে ইত্তেফাকের মোড় হয়ে আমরা আমার গোপীবাগের বাসার দিকে আসব। আমরা হাটখোলা দিয়ে বাসায় আসছিলাম। আমার কি পৈত্রিক বাসস্থানে আসার সময় ১০-১৫টা থানাকে বলে আসতে হবে যে আমি বাসায় যাচ্ছি। আমি কি গণসংযোগ শেষে বাসায় আসতে পারব না? এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। এ হামলার ঘটনায় আমরা মামলা করব। কিন্তু নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যাব না। আমরা নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাব। তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচার রবিবার বেলা পৌনে ১১টায় মহাখালী থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তিনি মহাখালী ওয়্যারলেস গেট, বেলতলা, কড়াইল বস্তি হয়ে বনানী টি এ্যান্ড টি কলোনি এলাকায় গণসংযোগ করেন। এরপর তিনি আগারগাঁও বিএনপি বাজার এলাকায় গণসংযোগ পথসভা করেন। নির্বাচনী প্রচারকালে তাবিথ আউয়াল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। বস্তিবাসী ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে পুনর্বাসন ছাড়া কোন বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা হবে না। তাবিথ বলেন, গুলশান-বনানীতে সবচেয়ে ধনীরা বসবাস করেন, তার পাশে কড়াইল বস্তিতে সবচেয়ে হতদরিদ্রদের বসবাস। ধনী-দরিদ্রের এমন বৈষম্য থাকতে পারে না। তাই তাদের জন্য আগে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের সমালোচনা করে ভোটারদের উদ্দেশে তাবিথ আউয়াল বলেন, সময় এসেছে অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর। সামনে অনেক ভয়-ভীতি আসতে পারে। ভয়কে জয় করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যালটের মাধ্যমে অপশক্তির বিরুদ্ধে জবাব দেবেন। নিজেদের উন্নয়নে, ঢাকার উন্নয়নে ১ ফেব্রুয়ারি ধানের শীষে ভোট দেবেন। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দিতে হবে। পরিবর্তনের সময় এসেছে। ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ তরান্বিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জায়ে তাথ আউয়াল বলেন, ইশরাকের প্রচারে হামলা হয়েছে। এর আগে তার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আমার গণসংযোগে হামলা হয়েছে। এসব হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় এনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সকল প্রকার ভয়ভীও বাধা উপেক্ষা করে সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। আর ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে গণসংযোগে আরও অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারহমান হা, আতাউর রহমান ঢালী, বিএনপির সিযুগ্ম মহাসরুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, দলের নেতা খন্দকার আবু আশফাক, আহসান উল্লাহ হাসান, সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলটন, ১৯ নং ওয়ার্ডের বিএনপির প্রার্থী ফারুক হোসেন ভূইয়া, ২০ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী পেয়ারা মোস্তফা প্রমুখ।
×