ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেকসই ও বিশ্বমানের আধুনিক নগর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

টেকসই ও বিশ্বমানের আধুনিক নগর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেকসই ও বিশ্বমানের আধুনিক নগর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। সোমবার গুলশান-১ এ অবস্থিত ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। ইশতেহারে তিনি ১৯ দফা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তাবিথের ১৯ দফার মধ্যে রয়েছে ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা, মশা নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ পানি ও খাদ্য নিশ্চিত করা, আবাসন সঙ্কট ও নগর প্রশাসন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন এতে। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে বিএনপির এই প্রার্থী ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, আমাকে সহযোগিতা, সমর্থন করুন, পাশে দাঁড়ান। আপনাদের সহানুভূতি চাই। কথা দিচ্ছি, অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়ে কখনও আপস করব না। নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা কখনও করব না। পশ্চাৎপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা থাকবে সম্মুখ প্রসারী ও আধুনিক। এছাড়া এদিন ইশতেহার ঘোষণা করা ছাড়াও সোমবার তাবিথ উত্তর খান এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এ সময় তিনি, ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে আজ মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন। নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা অবাসযোগ্য শহরের তালিকায় এক নম্বরে। মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের খেদমত এবং তাদের উন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করব। এই ঢাকায় আমার বেড়ে ওঠা। এই সমস্যাগুলোর মধ্যেই আমি বেড়ে উঠেছি। বলতে চাই, এই শহরকে বাসযোগ্য করার জন্য যা যা করণীয় সব করব। তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী ইশতেহার নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে সোমবার ঢাকা উত্তরের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তার ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে তিনি ১৯ দফা ঘোষণা করেন। এসব দফার মধ্যে মেয়র নির্বাচিত হলে আধুনিক মানের বসবাসযোগ্য ও টেকসই নগর গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। তার এই ইশতেহারের আরও যেসব বিষয় অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম চালাবেন। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচী শুরু করবেন। রাসায়নিক কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন। আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন উত্তরে তিনি যথাযথ সবুজায়ন করা হবে। ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেন’ প্রকল্প চালুর পাশাপাশি নগরবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে তার। পরিবেশবান্ধব দালানগুলোকে সনদ দেয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে নগরীর আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য ‘আধুনিক স্লটার হাউজ’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ঢাকার রুটগুলোকে ঢেলে সাজানো, ইলেকট্রিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস, রাত্রিকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ এবং নগর ঘিরে রাজউকের রিংরোড তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা বলেন। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ‘রিমোট ও ভার্চুয়াল’ চিকিৎসাসেবা, মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট’ স্থাপন, নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ‘বিশেষ নারী সেল’ গঠন এবং নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। বলেন, নিরাপদ ও সুপেয় পানির বন্দোবস্ত, প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অপরাধ দমনে ইমারজেন্সি পোর্টাল স্থাপন ও ক্রাইম ম্যাপিং চালু করার বিষয় তার ১৯ দফার প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন এবং আবাসন খাতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনলাইন সার্ভিস চালু করার প্রতিশ্রুতিও দেন। তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ভোটারহীন নির্বাচনে যারা মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন তারা কোন কাজ করেন না। সিটি কর্পোরেশন অতীতে যেসব সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে তারা যখন দেখবেন ৩০ লাখ ভোটারের জনপ্রতিনিধি তাদের সামনে রয়েছে তখন সংস্থাগুলো মানতে বাধ্য হবে। জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব। এমন কোন প্রতিশ্রুতি দেইনি যা মেয়রের ক্ষমতার বাইরে। যতটুকু দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে তার মধ্যে এই দায়িত্ব পালন করা হবে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি এখনও দেশে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় ইশরাকের এদিকে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন জাতীয় প্রেসক্লাবে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের খেদমত এবং উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করব। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৮ দিন ধরে আপনারা নির্বাচনী প্রচারের কাজ নিরলসভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। সেজন্য সাংবাদিক ভাই- বোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমি মুক্তিযুদ্ধের ধারণায় বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, জনগণ হবে একটা দেশের প্রকৃত মালিক। জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক। তিনি বলেন, বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী। নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। যেখানে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। রবিবার নিজের প্রচারের হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালিয়ে আসছিলাম। বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেছি। সবাই সাদরে গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে আমি দেখা করেছি। কথা বলেছি। মতবিনিময় করেছি। কিন্তু প্রচার শেষে ৪১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরের নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে দিয়ে আসার সময় বাসার ছাদ থেকে অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়। এতে তিন সাংবাদিকসহ ১২ নেতাকর্মী আহত হন। তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশঙ্কা করেছিলাম নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করবে। সেটাই হয়েছে। ওয়ারী থানায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আসামি করে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, নির্বাচনের প্রচার সমানভাবে করার সুযোগ দেয়া হোক। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×