ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মূত্রনালীতে পাথর

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

মূত্রনালীতে পাথর

মানব দেহে কয়েকটি স্থানে পাথর হয়, যেমন- কিডনী, মুত্রনালী, পিত্তথলী (পিত্তনালী-লিভারের ভিতরে), অগ্নাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি। মানব দেহে যে পাথর হয় তার প্রধান উপাদান হলো ক্যালসিয়াম কর্বোনেট, অক্সালেট, সাইট্রেট-অক্সালেট, ফসফেট। যা মানব দেহের রক্তের উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি থেকে হয়। এ পাথরগুলো নরম থেকে অতীব শক্ত হয়ে থাকে, অনেক সময় কাঁটা কাঁটা হয়ে থাকে যা থেকে ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হয়। মূত্রনালীতে সাধারণত * ইনফেকশন জনিত রোগ * চিকন হয়ে যাওয়া * পাথর এসে পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া * টিউমার হতে পারে * প্রস্রাবের পথে শুরুতে পুরুষদের প্রোস্টেট গ্লান্ড বড় হলে পথ বন্ধ হতে পারে। পাথর কেন হয়? এখন পর্যন্ত মানব বিজ্ঞানীগণ সম্পূর্ণরূপে আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে- * রক্তে অতীব পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান সমূহ নরমালের তুলনায় অধিক পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে। * থাইরয়েড গ্রন্থি অতি পরিমাণ কাজ করলে। * খাদ্যে বেশি বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে যদি কিডনি সেপরিমাণ প্র¯্রাবের সঙ্গে বের না হলে। * দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য, অস্থিমজ্জা, ছোট মাছ, কলিজা, মগজ, সিমের বীজ, বাধা কপি, ক্যালসিয়াম টেবলেট, কামরাঙ্গা ও কিছু মাটির নিচের খাদ্য দ্রব্য ইত্যাদি। * ঘন ঘন কিডনি ইনফেকশন এবং সময়মতো চিকিৎসা না নিলে * মানব দেহে জ্বিনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত কারণে পাথর হয়ে থাকে। * যেমন- মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের অতীব গরমের কারণে দ্রবণ ও দ্রাবকের অসামঞ্জস্য হয়ে পাথর হয়। লক্ষণগুলো কি কি? মূত্রনালীতে পাথর হলে এটা কোন লক্ষণ নাও হতে পারে (এসিমটোনেটিক)। আর যে সব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো- ১। ব্যথা যেদিকে পাথর হবে সে দিকের কিডনিতে ব্যথা অনুভব হবে এবং নিচের দিকে থেকে প্র¯্রাবের নল পর্যন্ড ব্যথা অনুভব হবে। ২। প্র¯্রাবের নালী জ্বালা-যন্ত্রণা করবে। ৩। বারং বার প্র¯্রাবের অনুভব হবে। ৪। বমি বা বমি বমি ভাব হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি? কিডনি, কিডনির নলসহ থলিতে পাথর হলে প্রথমত পরীক্ষা করতে হবে যাকে বলে- ১। প্রস্রাব পরীক্ষা জগঊ ও ঈ/ঝ ২। রুটিন মাইক্রোশকপিক পরীক্ষা ৩। এক্সরে ৪। আইভিইউ ৫। আল্ট্রাসনোগ্রাম ৬। এমন কি সিটি স্ক্যান ও করা হতে পারে। চিকিৎসা কি? মূত্রনালী ছোট্ট পাথর ৪ মিলিমিটারের নিচে হলে সাধারণত প্র¯্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায় ঐ সময় প্রচ- ব্যথা হয়। পাথর বড় হলে বা মূত্রনালী সমপূর্ণ রূপে বন্ধ হলে দ্রুত অপারেশন প্রয়োজন। একদিকের নল বন্ধ হলে সাধারণত শরীরের ক্রিয়েটিনিন বাড়বে না, কিন্তু সে ক্ষেত্রে পাথরজনিত কিডনিটি ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পরে। যন্ত্রের মাধ্যমে (আইসিপিএল) লেজার, ল্যাপারোসকপিক বা কেটে অপারেশন করা যায়। কিভাবে অপারেশন হবে তা নির্ভর করছে কিডনির নলের পাথর কত মিলিমিটার বা সেন্টিমিটার এবং রোগীর বয়সের ওপর। অনেক সময় ছোট্ট পাথর মেডিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে বের হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসা অনেকটা সমস্যাগুলোর ওপর নির্ভর করে। * ইনফেকশন হলে এ্যান্টিবায়োটিক। * চিকন হলে যন্ত্রের মাধ্যমে মোটাকরণ বা মুখের ভিতরের চামড়া এনে লাগানো। * পাথর বা টিউমার হলে যন্ত্রেও মাধ্যমে অপসারণ। * পুরুষদের প্রোস্টেট বড় হলে ঃঁৎঢ় করলে স্বাভাবিক প্র¯্রাব হয়ে থাকে। * অতি বয়স্ক মা-বোনদের অনেক সময় জড়ায়ু নিচে নেমে গেলে প্র¯্রাবের পথ বাধাগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে জড়ায়ু অপসারণ করলে রোগী সবদিক থেকে সুস্থ হয়ে উঠেন। রোগীর কি কি প্রস্তুতির প্রয়োজন? মানব দেহে যে কোন অপারেশনের জন্য রোগীর প্রস্তুতি প্রয়োজন এক্ষেত্রে তার কোন ব্যতিক্রম নেই তবে মানসিক প্রস্তুতি একটা বিরাট ব্যাপার। যে কোন বড় অপারেশন সাধারণত স্পাইনাল বা জেনারেল এনাসথেসিয়া দিতে হয়। সেক্ষেত্রে অপারেশনের জন্য কিডনির পরীক্ষা বাদে, ডায়াবেটিস কন্ট্রোল আছে কিনা, বুকের এক্সরে, ইসিজি প্রয়োজনে ইকো-কার্ডিও গ্রাফী, প্র¯্রাবে ইনফেকশন আছে কিনা সেজন্য কালচারসহ কিছু হরমোন টেস্ট প্রয়োজনে করা হয়। রোগীর প্রস্তুতি সাধারণত অপারেশনের ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা খালিপেটে থাকতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে কন্ট্রোল রাখতে হবে। সকাল বেলা সাবান দিয়ে গোসল করে অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে ওটি ড্রেস পরে প্রস্তুতি নিতে হবে। অপারেশনের সফলতা ও খরচ মূত্রনালীর পাথর কেন, মূত্রনালীর যে কোন অপারেশনের সফলতা একশত ভাগ। তবে এটা মনে রাখতে হবে মূত্রনালীর পাথর কিডনি বা থলি থেকে আসে এক্ষেত্রে সেগুলো পাথরও নির্মূল প্রয়োজন। মূত্রনালীর অপারেশনে পাথর সাধারণত যন্ত্র দিয়ে বের করা হয়। রোগীর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই আর খরচ খুবই সামান্য। সরকারী হাসপাতালে পাঁচ হাজার টাকার উর্র্ধে নয়। অপারেশন পরবর্তী নিয়ম-কানুন অপারেশন তেমন কোন নিয়ম মেনে চলার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ২ দিন পর থেকে শুরু করতে পারবেন। পাথর হওয়া থেকে বিরত করতে হলে অপসারিত পাথর পরীক্ষা, ক্যালসিয়াম জাতীয খাবার থেকে বিরত থাকা, প্র¯্রাবে ইনফেকশন হলে সুচিকিৎসা করা ইত্যাদি। মূত্রনালীতে পাথর হবে না এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া খুবই কঠিন। কারণ এটি একটি মেটালিক কারণও বটে। পরিশেষে একথা সকলের মনে রাখতে হবে যে, চিকিৎসা শাস্ত্র বিশেষ করে ইউরোলজিক্যাল অপারেশন প্রযুক্তি এখন আর সনাতনধর্মী পদ্ধতীতে হয় না। পৃথিবীর যে কোন উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। এখানে এন্ডোসকপি, ল্যাপারোসকপি ও লেজার ঢাকাসহ অনেক শহর-এ প্রাপ্য, তবে খরচ একটু বেশি। সরকারী উদ্যোগ নিলে আরও অতিকম খরচে ইউরোলজির মডার্ন টেকনিক ও টেকনোলজি বাংলার মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া যাবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবার মান আরও উন্নয়ন সম্ভব। ডাঃ মোঃ অলিউল ইসলাম মারুফ সহযোগী অধ্যাপক জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
×