ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের ব্যাংক ঋণ ॥ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪৭৮ কোটি টাকা বেশি ঋণ

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

সরকারের ব্যাংক ঋণ ॥ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪৭৮ কোটি টাকা বেশি ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজস্ব আদায়ে ভাটা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যয় মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সরকার। ফলে অর্থবছরের সাড়ে ছয় মাস না যেতেই সরকারের ব্যাংকঋণ অর্ধলাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের পুরো সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তিন হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে গত ৯ জানুয়ারি একদিনেই নেওয়া হয়েছে রেকর্ড তিন হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। গত ১০ বছরের মধ্যে এত বেশি ঋণ নেওয়ার নজির এবারই প্রথম। একক কোনো অর্থবছরের হিসাবেও এটি সর্বোচ্চ। এদিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার অস্বাভাবিক ঋণ নেওয়ায় অর্থবছরের মাঝপথে এসেই মুদ্রানীতি সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের (ব্রড মানি) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২.৫ শতাংশ। সেটি বাড়িয়ে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মুদ্রানীতি পলিসি কমিটির (এমপিসি) ৪৫তম সভায় এই সংশোধনী আনা হয়। এর ফলে বাজারে অতিরিক্ত আরো ছয় হাজার কোটি টাকার সরবরাহ বাড়বে বলে জানা গেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত নিরুৎসাহ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একই সঙ্গে ঋণের সুদহারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য বরাবরই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাঁরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের বাজেটে কোনো ভারসাম্য নেই। এর কারণ হচ্ছে, রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধির মাত্রা অনেক কমে গেছে। সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও কমে গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতেই ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে আছে। তার ওপর সরকার বেশি মাত্রায় ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাবে। এর ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির আরো অবনতি হয়েছে। গত ডিসেম্বরে এই খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। এটি গত সাত অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সাধারণত অর্থবছরের শুরু ও শেষের দিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে দেখা যায়। কিন্তু এবার অর্থবছরের শুরুতে যেমন বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে, তেমনি মাঝামাঝি সময়েও প্রায় একই গতিতে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের শেষ সময়েও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকঋণের এই পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
×