ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির ভাষণ আলোচনা

‘নেতা ভুল করলে দল ছত্রখান হয়ে যায়, খালেদা সেই কাজটিই করেছেন’

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

‘নেতা ভুল করলে দল ছত্রখান হয়ে যায়, খালেদা সেই কাজটিই করেছেন’

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বিএনপিকে ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি মানেই হচ্ছে ’বাংলাদেশ নাও পাকিস্তান’ (বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান)। একজন ডাক্তার ভুল করলে একজন রোগী মারা যান, কিন্তু কোন নেতা ভুল করলে সেই দলটি যে ছত্রখান হয়ে যায়, খালেদা জিয়া অত্যন্ত সফলতার সঙ্গেই তার দলের মধ্যে সেই কাজটি করেছেন। তাই বিএনপিকে বলব- গণতন্ত্রের চর্চা করুন, ষড়যন্ত্র বাদ দেন। অন্ধকারের পথ ছেড়ে আলোর পথে আসুন। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। বেগম মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফুল আলী খান খসরু, সরকারী দলের আবদুল হাই, এস এম শাহজাদা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সিমিন হোসেন রিমি, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুঁইয়া, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী। সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী মুজিববর্ষে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সংবিধানকে বেয়নটের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত করে স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আনা হয়। বিএনপি মানেই হচ্ছে ’বাংলাদেশ নাও পাকিস্তান’। এ দলটি গঠন করে জিয়া পাকিস্তানকে জানিয়ে দিল, তারা পরাজিত দেশটির সঙ্গেই আছে। দেশকে পাকিস্তানের পথেই নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, বিএনপি ক্যাসিনো নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু ক্যাসিনোর প্রতিষ্ঠাতাই হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। জাতির পিতা দেশে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বিসমিল্লাহ বলে সেই মদ-জুয়া ও লাকি খানের ঝাঁকি নৃত্যের প্রথম লাইসেন্স দেন এই জিয়াউর রহমান। আর তার পুত্র লন্ডনে পলাতক থাকা তারেক রহমানও তার আয়ের উৎস্য হিসেবে ক্যাসিনো থেকে আয় দেখিয়েছে। তিনি বলেন, বন্দুকের নলে ক্ষমতায় আসা, বন্দুকেই বিনাশ। হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমানকে সেই পথেই যেতে হয়েছে। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, হাওয়া ও খোয়াব ভবন খুলে তারেক জিয়া কী করেছে তা দেশের মানুষ জানে। বিদ্যুত নেই, অথচ খাম্বা বাণিজ্য করেছে। আজ তারা গণতন্ত্রের কথা বলে? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভী রহমানসহ ২১ জনকে হত্যা করা হলো। এটা কার নির্দেশে করা হয়েছে তাও আদালতে প্রমাণ হয়েছে। যেমন বাবা-মা, তেমনি ছেলে (তারেক রহমান)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের মানুষ কিছু পায়। ৯৯-২০০০ সালেই বাংলাদেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ন্যায়ের পথে রাজনীতি করুন। ডাক্তার যখন ভুল করে একটা রোগী মারা যায়, আর নেতা যখন ভুল করে, তখন সেই দল ছত্রখান হয়ে যায়। আর হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে নিপতিত হয়। যেটি খালেদা জিয়া অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তার পার্টি এবং দেশের ভেতরে করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি অনেক নেতা এখনও পাকিস্তানের জন্য মায়াকান্না করেন, কিন্তু পাকিস্তানের সংসদে বলা হয়- হ্যামকো বাংলাদেশ বানাদো’। তাই এখনও সময় আছে বিএনপির উচিত অন্ধকারের পথ ছেড়ে আলোর পথে আসা, ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে দেয়া। বিএনপিকে বলব- গণতন্ত্রের চর্চা করেন, ষড়যন্ত্র বাদ দেন। সাতবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৮৮ সালে লালদীঘি ময়দান, ২১ আগস্টসহ মোট ২১ বার হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিটি হামলার সময় তিনি কখনোই ভীত হননি, বরং অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। অন্ধকারে নিমজ্জিত পুরো দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে মোশাররফ বলেন, আমরাই জিয়াকে ধরে এনে ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করাই। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মুক্তিযুদ্ধের সময় টর্চার সেল ছিল, সেখানে পার্ক করে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এটা উচ্ছেদ করে মুজিববর্ষে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসকে জিয়া সার্কিট হাউসের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর নির্মাণের জোর দাবি জানান তিনি। জাতীয় পার্টির ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু দেশে ধনী-গরিবের চরম বৈষম্য রয়েছে, এটা দূর করতে হবে। ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন হচ্ছে, লুটের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। অর্থ লুণ্ঠন করে বিদেশে সেকেন্ড হোম করছে। ধনাঢ্য হতে গিয়ে অনেকেই দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। ঘুষ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, মধ্যস্বত্বভোগী, দুর্নীতির কারণে আমরা আয় বৈষম্য কমাতে পারছি না। মুজিববর্ষে মন্ত্রী-এমপি-আমলা-প্রশাসনের সবাইকে শপথ নিতে হবে আমরা কেউ দুর্নীতি করব না, প্রশ্রয়ও দেব না। এমন শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানান। বিকল্পধারা বাংলাদেশের আবদুল মান্নান বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন অনন্য উচ্চতায় দাঁড়িয়েছে, সারাবিশ্ব দ্বিধাহীনচিত্তে বাংলাদেশের বিস্ময়কর এই উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সমাজের প্রত্যেক নাগরিককে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। দেশে শিল্পায়নের প্রধান বাধা ব্যাংকের উচ্চ সুদ। তাই এই সুদের হার কমাতে হবে। দেশীয় শিল্পখাতকে বাঁচাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম অর্ধেক কমাতে হবে।
×