ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে যদি র‌্যাঙ্কিংয়ে উপরে উঠতে চাই

‘আমাদের অনেক কিছুই নেই’

প্রকাশিত: ১২:০৬, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

‘আমাদের অনেক কিছুই নেই’

রুমেল খান সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিদায় এবং প্রচার-প্রচারণার অভাবে দর্শকখরায় শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের বিশেষ আসর। এমনটাই জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সে হতাশ তিনি। সামনের টুর্নামেন্টগুলোতে ভাল করতে ফুটবলারদের পাশাপাশি টিম ম্যানেজম্যান্টকেও আরও সতর্ক হওয়ার জন্য বলেছেন তিনি। মুজিববর্ষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বিশেষ আয়োজন আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। নামে আন্তর্জাতিক হলেও শুরু থেকেই সমালোচনা হয়েছে টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দেশগুলোর নাম নিয়ে। এরপর গোটা আয়োজন জুড়ে স্টেডিয়াম ছিল দর্শকখরায়। ফাইনাল রং হারিয়েছে আগেই। নেই স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফাইনাল ম্যাচ সন্ধ্যায় আয়োজনের কথা থাকলেও অনুষ্ঠিত হয় বিকেলে। কম ছিল প্রচার-প্রচারণাও। অখ্যাত বুরুন্ডির কাছে হেরে বিদায় স্বাগতিক বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের প্রাক-বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে দারুণ পারফর্মেন্সের পর দেশের মাটিতে জামাল ভূঁইয়াদের অপ্রত্যাশিত-ধারাবাহিক বাজে পারফর্মেন্স। আর যাতে হতাশ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। সামনে মুজিববর্ষে বাফুফের রয়েছে নানা টুর্নামেন্ট। ভাল করতে শুধু ফুটবলার নয়, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শÑ দল নিয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে টিম ম্যানেজম্যান্টকে। টুর্নামেন্টের দল বাছাই থেকে শুরু করে, সার্বিক বিষয়ে আরও মনোযোগী হয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বাফুফে, প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাজে পারফর্মেন্সের পর ঢাকার প্রেসক্লাবে বসেছিলেন দেশের সাবেক ফুটবলাররা। দেশের ভঙ্গুর ফুটবল দশা থেকে উত্তরণের জন্য বৈঠক শেষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন তারা। আশার খবর হলো, আলোচনা শেষে ইতিবাচক ফল মিলেছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ নিয়ে আশাহত প্রধানমন্ত্রীও শীঘ্রই সাবেক ফুটবলাদের একটা দলের সঙ্গে সাক্ষাতে বসতে পারেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। অঢেল টাকা ঢাললেও দেশের ফুটবলের কোন উন্নতি লক্ষণীয় নয়। বিগত আট বছরে জেলাগুলোতে হয়নি কোন বড় ফুটবল লীগ। গত ১২ বছরে দল ১৪০তম থেকে পৌঁছেছে ১৮৭তম অবস্থানে। যেই ভুটানকে একসময় বলে-কয়ে হারাতো আসলাম-চুন্নুরা, তাদের কাছে এখন হেরে আসে লাল-সবুজ বাহিনী! এসব নিয়ে যারপরনাই ক্ষুব্ধ সাবেকরা। সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্ন বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলার ফুটবলকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছে।’ বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায় বলেন, ‘নেতৃত্বে পরিবর্তন খুবই জরুরী। আমি তার সঙ্গে (কাজী মো. সালাউদ্দিন) কাজ করেছি। নিজের স্বার্থে তিনি সবকিছু ব্যবহার করেন। ওই চেয়ারটা নিজের কাজে ব্যবহার করেন।’ এই বৈঠকের পর সাবেক ফুটবলারদের একটা দল যায় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইতে। প্রতিমন্ত্রীও হতাশ করেননি। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওনারা (সাবেক ফুটবলাররা) প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী খেলাকে ভালবাসেন। সেই সঙ্গে খেলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকেও ভালবাসেন।’ ধারাবাহিক ব্যর্থতার মাঝে ২০১৯ সালে দেশের ফুটবলে জেগে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। পুরো বছরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রশংসনীয় পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কিন্তু ডিসেম্বরে এসএ গেমস থেকে আবারও সঙ্গী হয়েছে ব্যর্থতা। যে প্রমাণ আরেকবার মিলেছে সদ্যসমাপ্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ এই আসরে নির্লজ্জ ব্যর্থতার স্বাক্ষর রেখেছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে কোনরকমে সেমিফাইনালের টিকেট পেলেও ফাইনালে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন জামাল, আশরাফুল, সাদ, মতিনরা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন হলেও সফলতার দেখা পায়নি কোচ জেমি ডে’র দল। বাফুফের কর্তারা ফাইনাল ম্যাচে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আনতে পেরেই যেন খুশি। অথচ আসল কাজে তারা শতভাগ ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন ক্রীড়ামোদীরা। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ব্যর্থ হওয়া ও দর্শখরার জন্য বাফুফের অদূরদর্শিতাকেই দুষছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও সাবেকরা। প্রকৃতিগতভাবে স্টার না জন্মালে সাফল্য পাওয়া কঠিন। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের ফুটবলে প্রকৃতি প্রদত্ত ফুটবল তারকা এখন তেমন চোখে পড়ে না। যে কারণে গোলের খেলা ফুটবলে ভালমানের স্ট্রাইকারের অভাবটা প্রকট। কিন্তু স্ট্রাইকার খুঁজে পেতে বাফুফের তেমন তৎপতরতাও নেই। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে মূলত গোল না করতে পারার ব্যর্থতার কারণেই সেমি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। বুরুন্ডির বিরুদ্ধে দলগত পারফর্মেন্স খুব বেশি মন্দ ছিল না বাংলার টাইগারদের। কিন্তু ডি বক্সে যেয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন সাদ, জামালরা। কিন্তু বুরুন্ডি হাফ চান্সকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচ জিতে নেয়। আসর শেষে গোল করতে না পারার এই আক্ষেপই পোড়াচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’ও, ‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছি। গোল করে এগিয়ে যেতে পারলে দৃশ্যপটটা বদলে যেতে পারত। আমি হতাশ, আর কি বলব?’ মূল জায়গায় কাজ না করলে এমন হা-পিত্যেই বার বার করতে হবে। কেননা দেশে খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ফুটবল ফেডারেশনের নিজস্ব কোন একাডেমি নেই। যেখানে বছরব্যাপী অনুশীলনের পর অনুশীলন করে তৈরি হবে গোল করার মতো খেলোয়াড়। আবার ক্লাবের জার্সিতেও ঘরোয়া লীগে স্ট্রাইকারদের খেলার সুযোগ কম। প্রতি মৌসুমেই লীগে বিদেশী ফরোয়ার্ডদের দাপট দেখা যায়। অনেকের মতে ২০১৯ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে হওয়া শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল দর্শকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। ১৯ থেকে ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বসেছিল শহীদ শেখ কামালের নামে আয়েজিত আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলের তৃতীয় আসর। ফাইনাল মহারণের মধ্য দিয়ে সফলভাবে শেষ হয় আসর। দেশীয় ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও জমজমাট পারফর্মেন্স ছিল উল্লেখ করার মতো। শুধু মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস বাদে বাকি সাতটি দলই ছিল চৌকস। যে কারণে প্রায় প্রতিটি ম্যাচই হয় উপভোগ্য। ম্যাচগুলো দেখতে গ্যালারিতে দর্শক উপস্থিতিও ছিল প্রত্যাশামতো। বিশেষজ্ঞদের মতেÑ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলের চেয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ছিল সফল। শেখ কামাল কাপের প্রতিটি দলই ছিল মানসম্পন্ন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে নামকাওয়াস্তে দল আনা হয়। কয়েকটি দলের নামই ঠিকমতো জানতেন না ফুটবলপ্রেমীরা। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো সিশেলস ও বুরুন্ডি। এ কারণে অনেকেই বলেছেন, এসব দল না এনে দক্ষিণ এশিয়ার পরিচিত দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন করলেও দর্শক উপস্থিতি বেশি হতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাফুফের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার যেসব দল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলেছে সেগুলো মানসম্পন্ন ছিল না। যেনতেনভাবে আসরটা করাই যেন লক্ষ্য ছিল বাফুফের। গত বছর নেপালে অনুষ্ঠেয় এসএ গেমস ফুটবলে ভারত-পাকিস্তান ছিল না বিধায় সবাই ধরেই নিয়েছিলেন ওই আসরে হেসেখেলেই স্বর্ণপদক জিতবে বাংলাদেশ অ-২৩ জাতীয় দল। কিন্তু হতাশাজনক খেলে বাংলাদেশ জেতে তা¤্রপদক। সেই দুঃখ উপশমের ভাল সুযোগ ছিল সদ্যসমাপ্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে। কেননা এক বাংলাদেশ বাদে অংশ নেয়া বাকি ৫টি দলেই সিনিয়র ফুটবলারদের অভাব ছিল। বলা যায় নামেমাত্র জোড়াতালি দিয়ে প্রতিটি দেশই তাদের জাতীয় দল পাঠায়। ফলে বাংলাদেশ দলের ফাইনালে খেলার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু এখানেও ব্যর্থ হয় তারা। সেমিতেই শেষ হয়ে যায় তাদের সব স্বপ্ন-আশা। স্বাভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কেন বাংলাদেশ দলের এই অধঃপতন। এর জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ফুটবলার ও বর্তমানে ক্লাব বেকাচ শফিকুর ইসলাম মানিক। বুরুন্ডির বিপক্ষে সেমির ম্যাচে ফুটবলারদের দায়বদ্ধতার অভাব ছিল বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। যে কারণে ম্যাচ হেরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে লাল-সবুজ বাহিনীর। ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশি স্ট্রাইকারের প্রাধান্য থাকায় দেশীয় স্ট্রাইকাররা ভাল করতে পারছেন না, এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লীগে যারা সামনে খেলে, তারা সবাই বিদেশী। তাহলে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রা কিভাবে গোল করবে?’ এই কথাটাই ফুটবল বিশ্লেষক-সমালোচকরা বলছেন দিনের পর দিন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে হয়েছে বিস্তর লেখালেখি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! দেশের স্ট্রাইকাররা করতে পারেন না গোল, একের পর এক গোল মিসে, ম্যাচ হেরে মাথা নুইয়ে ছাড়তে হয় মাঠ। সবশেষ নজির বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বুরুন্ডির বিপক্ষের ম্যাচ। ৩-০ গোলে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় জামাল ভূঁইয়াদের। অথচ ম্যাচের তথ্য-উপাত্ত বলছে, বুরুন্ডির চেয়ে বল দখল কিংবা গোলের সুযোগ তৈরিতে ঢের এগিয়ে ছিল বাংলাদেশই। প্রতিপক্ষের রক্ষণে বার বার থমকে যাওয়ার স্বভাবই আরও একবার হারের কারণ, বলছেন বিশ্লেষকরাও। এ প্রসঙ্গে কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘গোল পেতে গেলে সুযোগ কাজে লাগাতে হয়। সুযোগগুলো যে কাউকেই কাজে লাগাতে হবে। সাবেক ফুটবলার চুন্নু বলেন, ‘ফুটবল হলো গোলের খেলা। গোল না করতে পারলে জিতব কিভাবে? ওরা সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। আমরা পারিনি। আমাদের খেলোয়াড়রা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না।’ ঘরের মাঠ কিংবা পরের মাঠ, আন্তর্জাতিক ফুটবলে কেবলই হতাশা সঙ্গী হচ্ছে বাংলাদেশের। এমন সঙ্কট থেকে উত্তরণে বাফুফের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি ফুটবলারদের মাঝেও দায়বদ্ধতা থাকা খুব জরুরী। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছুই নেই। আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে যদি র‌্যাঙ্কিংয়ে উপরে উঠতে চাই। বর্তমান কিংবা সাবেক, সবার কণ্ঠেই একই সুর, ফুটবলে একটা জাগরণ প্রয়োজন খুব। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত জিতেছে ৫টি ট্রফি। ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে জেতে এসএ গেমস ফুটবল, ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ এবং ১৯৯৫ সালে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ফুটবল টুনামেন্টের শিরোপা। তার মানে শেষ শিরোপা জিতেছে ২০১০ সালে, ১০ দশ বছর আগে। সর্বশেষ কোন আসরের ফাইনালে উঠেছিল ৫ বছর আগে, এই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেই। এখন দেখার বিষয়, ষষ্ঠ শিরোপা জেতার জন্য আরও কত বছর অপেক্ষায় থাকতে হয় লাল-সবুজ বাহিনীকে। রেফারি মিজানুর রহমান খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই দুই দলের একাধিক ফুটবলার মাটিতে বসে পড়লেন হাঁটু গেঁড়ে। কেউ জয়ের চিত্তসুখে, কেউ হারের হতাশায়। একটু পরেই জয়ী দলের কোচ মাকরাম দাবুবকে চ্যাংদোলা করে শূন্যে ছুড়ে শিরোপা জয়ের আনন্দ উদ্যাপন করলো ফিলিস্তিনের ফুটবলাররা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা জিতল তারা। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা অনায়াসেই হারায় বুরুন্ডিকে, ৩-১ গোলে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়েছিল। এ নিয়ে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ফিলিস্তিন। আগের আসরে (২০১৮) ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ (০-০) গোলে তাজিকিস্তানকে হারিয়ে অভিষেকেই শিরোপাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল তারা। তাদের আগে অবশ্য মালয়েশিয়ার ভিন্ন দুটি দল এই আসরের শিরোপা জিতেছিল। প্রথম আসরে (১৯৯৬-৯৭) মালয়েশিয়া লাল দল এবং তৃতীয় আসরে মালয়েশিয়া অনূর্ধ-২২ জাতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তবে ২০১৮ ও ২০২০ আসরে দু’বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফিলিস্তিনের জাতীয় দল। ম্যাচ শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার ফাইনাল ম্যাচটি ছিল এক অর্থে এশিয়া আর আফ্রিকার লড়াই। একদিকে ‘লায়ন্স অব ক্যানান’ ফিলিস্তিন। অন্যদিকে ‘দ্য সোয়ালোস’ খ্যাত বুরুন্ডি। আগের আসরে শিরোপা জেতা ফিলিস্তিন আত্মবিশ্বাসী ছিল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে। অন্যদিকে অফ্রিকার দল বুরুন্ডিও স্বপ্ন দেখেছিল প্রথমবারের মতো এই আসরে অংশ নিয়ে শিরোপা জিতে ফিলিস্তিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইতিহাস রচনা করতে। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ নেয় গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ফাইনাল ম্যাচের আগে পর্যন্ত একমাত্র গোল হজম না করা দল ছিল ফিলিস্তিন। তাদের সেই গোলপোস্ট অক্ষত রাখার গৌরবটি ধরে রাখতে দেয়নি বুরুন্ডি। এটাই হয়ত তাদের কিঞ্চিৎ সান্ত¦না! শেষ পর্যন্ত অনায়াসেই জয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে ফিলিস্তিন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ফিলিস্তিনের চেয়ে ৪৫ ধাপ পিছিয়ে থাকা বুরুন্ডি র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও এই আসরে ফিলিস্তিনের চেয়ে ঢের ভাল খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। টুর্নামেন্টে তারাই সবচেয়ে বেশি গোল করেছে, ১১টি। ফিলিস্তিন করেছে ৮ গোল। অবশ্য এই আসর শুরুর আগেই ফুটবলবোদ্ধারা অনুমান করেছিলেন ফাইনাল খেলবে ফিলিস্তিন-বুরুন্ডিই। তাদের অনুমানই সত্যি হয়।
×