ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিডিএফ বৈঠকে সহজশর্তের ঋণ ও বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

বিডিএফ বৈঠকে সহজশর্তের ঋণ ও বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘কার্যকর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন’ স্লোগান সামনে রেখে ঢাকায় বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) দুদিনব্যাপী বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকের প্রথম দিনে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহজশর্তের ঋণ ও বিনিয়োগ চাওয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কার্যকর অংশীদারিত্ব দাবি করে বলা হয়, এতে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। এছাড়া দারিদ্র্য দূরীকরণ ও দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে এখন অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, কার্যকর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে পুরোপুরিভাবে এসডিজি অর্জনে সাফল্য পাবে বাংলাদেশ। এর আগে বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিএফ বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সরকারী-বেসরকারীখাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চারটি কর্ম অধিবেশন চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিডিএফের এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইউএনডিপি, এআইআইবি, জাইকাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের মোট ৭০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন। শেরে-বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এবারের বৈঠক অনুষ্ঠানের আয়োজর করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এবারের সম্মেলনে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত রয়েছেন। উন্নয়ন সহযোগীদের সংগঠন লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) পক্ষে জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এবং ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মোট আটটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের আলোচনার বিষয়গুলো হচ্ছে-বেসরকারী খাতকে উন্নয়নে অংশগ্রহণ ও বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থায়ন, স্বনির্ভর বাংলাদেশের জন্য নতুন অর্থায়ন ব্যবস্থা, গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে সবার জন্য সুযোগ তৈরি করা, স্বাস্থ্যসেবা, অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা প্রদান, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য জ্বালানী নিরাপত্তা, টেকসই নগর, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর সুরক্ষায় সেবা দেয়া এবং সবার জন্য মান সম্পন্ন শিক্ষা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি। এদিকে, এবারের বৈঠকটি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সম্মেলনের চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের বৈঠক নিয়ে আশাবাদী ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ। তিনি বলেন, উন্নয়নে অর্থায়ন একটি বড় ব্যাপার। দাতাদেশগুলো সহজশর্তে ও কমসুদে ঋণ দিলে দ্রুত বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু দাতারা বেশিরভাগ সময় ঋণ প্রদানে কঠিন শর্তের আরোপ করে থাকে। এতে সমস্যা তৈরি হয়। তিনি জানান, রূপকল্প-২১, রূপকল্প-৪১, মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হলে সহজশর্তের ঋণ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এলক্ষ্যে সরকার দাতাদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্মেলনের প্রথম দিনে জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. জুনিচি ইয়ামাদা, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. হার্টউইগ শেফার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিক্সিন চেনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতারাসহ ৩০-৪০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বিডিএফের মূল প্রবন্ধ হিসেবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম দিনে চারটি অধিবেশনে পৃথকভাবে অংশগ্রহণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিবেশ ওবন মন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন, কেবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বেজা’র নির্বাহী পরিচালক পবন চৌধুরী, পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ দাতা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। এদিকে, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম এবার এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে এগিয়ে চলেছে। এখন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষপর্যায়ে রয়েছে। একই সঙ্গে সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখীসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবার ফোরামে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার রূপরেখা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকারের পদক্ষেপগুলো বা বিভিন্ন আর্থসামাজিক অগ্রাধিকার খাতে সরকারের মধ্যমমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।
×