ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাউফলের চর রায় সাহেব গুচ্ছ গ্রামের অর্ধশত শিশু স্কুলে যায় না

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

বাউফলের চর রায় সাহেব গুচ্ছ গ্রামের অর্ধশত শিশু স্কুলে যায় না

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২৯ জানুয়ারি ॥ পটুয়াখালীর বাউফলের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন উত্তর চর রায় সাহেব গুচ্ছ গ্রামের অর্ধ শত শিশু স্কুলে যায় না। তাদের বসতির ৬-৭ কিলোমিটারের মধ্যে কোন স্কুল নেই। তাই ওই সব শিশু বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করে। এখানের ছেলেরা বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে নদীতে যায়। আর মেয়েরা মায়ের সঙ্গে গৃহস্থালির কাজ করে। ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সুমা, শিমু আর দিন ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিশু বাড়ির আঙ্গিনায় ইচিং-বিচিং খেলছে। তাদের মতো ওই গুচ্ছ গ্রামের আরও অর্ধশত শিশু আছে যারা স্কুলে যায় না। তবে লেখাপড়া করার আগ্রহ আছে তাদের। এদের মধ্যে ৮ বছর বয়সী শিশু শিমু বলে, ‘আমরা পড়া লেখা করতে চাই, আমাগোরে একটা স্কুল কইরা দিয়েন।’ নদী ভাঙ্গনে সর্বস্বান্ত হয়ে স্ত্রীসহ চারটি ছেলেমেয়ে নিয়ে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নেয়া ষাটোর্ধ আব্দুর রাজ্জাক চৌকিদার জানান, দু’বছর আগে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। এখানে ৬০টি পরিবারের জন্য সরকার ঘর তুলে দিয়েছে। কিন্তু যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় তাদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। নৌকাই হচ্ছে তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে তারা। তেমনি গুচ্ছ গ্রামের ওইসব পরিবারের অর্ধশতাধিক শিশু বেড়ে উঠছে অক্ষর জ্ঞানহীন ভাবে। এখানে ছেলেরা বড় হয়ে বাবার মতো নদীতে মাছ ধরবে আর মেয়েরা মায়ের মতো বছরে বছরে বাচ্চা জন্ম দেবে। আট বছর বয়সী শিশু ইয়ার হোসেন জানায়, তেঁতুলিয়া নদী থেকে উঠে আসা চরের বিভিন্ন খালে মাছধরা ও ফসল মৌসুমে কৃষকের ক্ষেতে ফসল কুড়ায় গুচ্ছগ্রামের শিশুরা। কেউ কেউ আবার নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরাসহ বিভিন্ন চরে মহিষ চড়ানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। পরিবারের আয়ের সহোযোগী হয় তারা। চন্দ্রদ্বীপের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় মেম্বর আবদুল ছালাম শরীফ জানান, ১০টি দ্বীপচর নিয়ে ৫৫ বর্গমাইলের নবগঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এই চন্দ্রদ্বীপে প্রস্তাবিত একটি প্রাইমারী স্কুলসহ মোট ৬টি প্রাইমারী ও ১৯৯৫ সালে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আর দুর্গম রায়সাহেব চরে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গুচ্ছগ্রামের স্কুল উপযোগী ৪-৯ বছর বয়সী অর্ধশতাধিক শিশু। পাশের চরের সঙ্গে যোগাযোগে গুচ্ছগ্রামের পাশ দিয়ে তেঁতুলিয়া থেকে উঠে আসা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণসহ শিশুদের শিক্ষার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরী।
×