ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ আত্মসাতের মামলায় লিজেন্ড হোল্ডিংসের মালিকের দুই পুত্র আটক

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অর্থ আত্মসাতের মামলায় লিজেন্ড হোল্ডিংসের মালিকের দুই পুত্র আটক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে-লিজিং এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিপ ব্রেকিং প্রতিষ্ঠান লিজেন্ড হোল্ডিং লিমিটেডের কর্ণধার সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের দুই পুত্রকে আটক করেছে মতিঝিল থানা পুলিশ। তারা হলেন-আহাদ সাদমান হাই (২৮), আরিক রাফাজ হাই (২৬)। মতিঝিল থানার মামলা নং-৮/৪০। মতিঝিল থানা পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন জানালে বিজ্ঞ আদলত জেল-হাজতে প্রেরণপূর্বক তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি প্রদান করেন। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আরও তিন ব্যাংকের ৩৮৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে প্রায় শতাধিক মামলা দায়ের করেছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাই বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতের। জানা যায়, ব্যাংক খাতের শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চট্টগ্রামের লিজেন্ড হোল্ডিং লিমিটেড। শিপ ব্রেকিং খাতের এ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪০২ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর এ প্রতিষ্ঠানের মালিক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এসএম আবদুল হাই। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করায় গত বছর নবেম্বরে চট্টগ্রামের লিজেন্ড হোল্ডিংসের ৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা অনাদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে এবি ব্যাংক। অন্যদিকে লিজেন্ড হোল্ডিংসের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পাওনা গত বছরের ডিসেম্বরে সুদাসলে দাঁড়ায় ১৭৫ কোটি টাকার অধিক। ওই পাওনার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক এসএম আবদুল হাই, মিসেস নিলুফার আকতার হাই, ডাক্তার রওশন আক্তার, সৈয়দা ফাতেমা নার্গিস, মিসেস সৈয়দা হাসনা আক্তার, মিসেস সৈয়দা খাদিজা আক্তার প্রকাশ খাদিজা কাদির এবং মিসেস সৈয়দা শাহেদা আক্তার প্রকাশ শাহেদা সালামের মালিকানাধীন মোট ১৮ একর ৫৬ ডিসিমেল জমি বন্ধক দেয়, যা নিলামে বিক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হলেও আগ্রহী কোনো ক্রেতা না থাকায় বিক্রয় করতে পারেনি ব্যাংকটি। আর বন্ধকিতে থাকা মাত্র ৬৫ ডিসেমাল জমি শহরের পতেঙ্গা মৌজায় আর বাকিগুলো হাটহাজারী উপজেলার জঙ্গল উদালিয়ায় অবস্থিত। বারবার তাগাদার পরও ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এদিকে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করায় ২০১৮ সালে জুনে চট্টগ্রামের লিজেন্ড হোল্ডিংসের ১৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা অনাদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে সাউথইস্ট ব্যাংক। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। অন্য একটি সিআর মামলায় পিবিআইএ’র সুপারিশের প্রেক্ষিতে মেসার্স লিজেন্ড হোল্ডিংস গ্রুপের মালিক ও তার পরিবার সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে-লিজিং এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ১৬ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ঋণ নেয় লিজেন্ড হোল্ডিংস লিমিটেড। সহযোগী প্রতিষ্ঠান লিজেন্ড টেক্সটাইল ও এল.এম মাসিনারা এই ঋণের কর্পোরেট গ্রান্টার ছিল। ঋণের টাকা খেলাপি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাই ও তার দুই ছেলে আহাদ সাদমান হাই (২৮), আরিক রাফাজ হাই (২৬) এবং আত্মীয় মোর্শেদ শাহানুর হাসিন হিমাদ্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করে বে-লিজিং। সম্প্রতি সৈয়দ মোহাম্মাদ আব্দুল হাইয়ের দুই ছেলেকে আটক করে মতিঝিল থানা পুলিশ। মতিঝিল থানার মামলা নং-৮/৪০। পরে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন জানালে বিজ্ঞ আদলত জেল-হাজতে প্রেরণপূর্বক তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি প্রদান করেন। প্রসঙ্গত, আসামীগণ চট্টগ্রাম ভিত্ত্কি কোম্পানি কে.ডি.এস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দৌহিত্র। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে এক বছরের অধিককাল ধরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধ রেখেছে লিজেন্ড হোল্ডিংস লিমিটেড, যা আগ্রাবাদের আস-সালাম টাওয়ারে ছিল। এর মাঝে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় অগোচরে সরিয়ে নেয়া হয়। সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড ব্যবসার পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রামের হালিশহরের ইপিজেট এলাকায় এলএম মাসিনারা এশিয়া লিমিটেড এবং লিজেন্ড টেক্সটাইল লিমিটেড নামে পোশাক কারখানাও ছিল। এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১ নম্বর তালিকায় স্থান পায় লিজেন্ড হোল্ডিং লিমিটেড। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনে বিভিন্ন ব্যাংকে লিজেন্ড হোল্ডিংসের খেলাপী ৩৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে দুই অর্থবছরের প্রতিষ্ঠানটি জাহাজ কাটার জন্য কোন জাহাজ আমদানি করেনি। ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত অক্টোবর পর্যন্ত এবি ব্যাংকের পাওনা ৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পাওনা গত বছরের ডিসেম্বরে সুদাসলে দাঁড়ায় ১৭৫ কোটি টাকার অধিক। এছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংকের পাওনা আছে প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি পণ্য সরবরাহের কথা বলে তিনি আরও কিছু মানুষ থেকে অগ্রিম টাকা নেন। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএস আবদুল হাইয়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
×