ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্প বাজার

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিকল্প বাজার

মানুষের নিত্যদিনের চাহিদা অনুযায়ী তা পূরণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে রাষ্ট্র। পণ্যের জন্য বাজারের ওপর নির্ভর করতেই হয়। বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বব্যাপী রয়েছে বাজার। একটি দেশ তার নাগরিকদের প্রয়োজন পূরণে সুসম্পর্ক রয়েছে এবং সহজে পণ্য আমদানি করা সম্ভব এমন দেশটিকেই বাজার হিসেবে বেছে নেয়। একটি পণ্যের জন্য একাধিক দেশের বাজার অনুসন্ধান বিচক্ষণতারই বিষয়। একটি নির্দিষ্ট বাজারে ঘাটতি বা সমস্যা দেখা দিলে বাধ্য হয়ে ভিন্ন বা বিকল্প বাজারের সন্ধান অসঙ্গত নয়। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো যে দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে সে দেশটির এতে প্রতিক্রিয়া কি রকম হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে সাময়িক অসুবিধায় পড়েছে অর্থনৈতিক বিচারে শক্তিশালী দেশ চীন। বিশ্বের বহু দেশই নানা পণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশও একাধিক নিত্যপণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। চাহিদা ও সরবরাহের নীতিটি সমুন্নত রাখতে হলে আমদানি বজায় রাখা আবশ্যক। দেশে আদা-রসুনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীনের বিকল্প বাজারে সরকার নজর রাখছে- বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, চীন থেকে পণ্য আমদানি কমালে সেটি হবে দুঃখজনক। এমন একটি পরিস্থিতিতে দেশের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করছেন। সামনে পবিত্র রমজান। ওই সময়ে দেশে কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। রমজান উপলক্ষে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, খেজুর, তেল, চিনি, ছোলা টিসিবির পক্ষ থেকে গতবারের চেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে, এটা সত্য। তবু চাহিদা মেটাতে বিকল্প বাজারের কথা তুলছেন অনেকেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক নিত্যপণ্য আমদানিতে চীনের বিকল্প বাজার খোঁজা হচ্ছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন। শুধু তো নিত্যপণ্য নয়, তৈরি পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির প্রয়োজনে চীনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল বাংলাদেশ। ফলে দেশের ব্যবসায়ীরা কিছুটা যে বিপাকে পড়েছেন, এটি বাস্তবতা। বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক নতুন নয়, বহু পুরনো। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে যে সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন সেটা আরও বিকশিত করতে চান তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম সহযোগী চীন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কৃষি, বিনিয়োগ এবং শিল্প-বাণিজ্যে মহাচীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিস্তার চায় সরকার। আগামী এক থেকে দেড় দশকে চীন বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুত ও যোগাযোগ খাতে ৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে বলে আশা রয়েছে। চীন মনে করে সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন চীন বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হবে। বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক যে অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে চীন। এছাড়াও সামরিক ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ক পৌঁছেছে অন্য মাত্রায়। বর্তমান সরকারের অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য হলো একই সঙ্গে প্রতিবেশী দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা, যা অনেকটাই দুঃসাধ্য। সবদিক বিবেচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মিত্রদেশ চীনের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সম্পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে। আবার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কিছু করাও অসম্ভব। অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিকল্প বাজার খোঁজার কোন বিকল্প কি রয়েছে- এমন প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। যদিও সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আরও কিছুটা সময় হাতে রয়েছে। সময়ই সমাধান এনে দেবে, এবং এক পর্যায়ে চীনও তার বন্ধুপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের প্রয়োজন বুঝতে সমর্থ হবেÑ এমনটাই পর্যবেক্ষক মহলের প্রত্যাশা।
×