ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতি ঘরে আলো

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 প্রতি ঘরে আলো

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী বাংলার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আরও অন্তত ২৩টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, দেশের একটি ঘরও অনালোকিত অর্থাৎ অন্ধকারে থাকবে না। মুজিববর্ষে বাংলার প্রতিটি ঘরে জ্বলবে আলো। আর কে না জানে যে, আলো মানেই দূরীভূত অন্ধকার। এই আলো প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানের আলো। মন ও মননের বহ্নিশিখা, যা মানুষের চিন্তা-চেতনাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করে, বুদ্ধিদীপ্ত ও মননশীল করে গড়ে তোলে। দেখায় মুক্তি, যুক্তি ও প্রজ্ঞার পথ। দূর করে কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও সামাজিক অচলায়তন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় এর চেয়ে আকাক্সিক্ষত আর কি হতে পারে! আর বিদ্যুত মানেই নতুন শিল্প-কারখানা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, আধুনিক চাষাবাদসহ সচল অর্থনীতির চাকা। ইতোমধ্যে বিদ্যুত উৎপাদনে চাহিদা অনুপাতে প্রায় শতভাগ সক্ষমতা অর্জনের পর বাংলাদেশ এবার ভারতে বিদ্যুত রফতানির আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে শীত মৌসুমে এখন ৬৫ ভাগ এবং গ্রীষ্মে ৪৫ ভাগ বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকে। ভারতের বিশেষ করে সুদীর্ঘ সীমান্ত অধ্যুষিত এলাকায় সেদেশে বিদ্যুত বিক্রি তথা রফতানির সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। তবে এক্ষেত্রে দুদেশে বিদ্যমান সঞ্চালন লাইনের ফ্রিকোয়েন্সিতে তারতম্য থাকায় এর সমাধানে যৌথ কারিগরি সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। ভারত সম্প্রতি আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত বাণিজ্যের নীতি সংশোধন করেছে। এর ফলে বিদ্যুত বিনিময়ের পথও সুগম হয়েছে। অর্থাৎ ভারত শুধু বিদ্যুত রফতানিই নয়, প্রয়োজনে বিদ্যুত আমদানিও করতে পারবে। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশই হতে পারে সবদিক থেকে সুবিধাজনক, ব্যয় সাশ্রয়ী ও সুলভ। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করে, যা আসে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে। সম্প্রতি ত্রিপুরা থেকে আরও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যা বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যয় সাশ্রয়ী না হওয়ায়। আগামী দুই বছরের মধ্যে বড় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করলে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুত উৎপন্ন হবে দেশে। সে দিকটি মাথায় রেখেই মূলত মুজিববর্ষে ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়ার আয়োজন। দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো এখন পর্যন্ত ডিজেল ও কয়লাভিত্তিক হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ে। তদুপরি এগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। সে অবস্থায় সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, পছন্দনীয় ও পরিবেশবান্ধব হতে পারে নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে বিদ্যুত উৎপাদন ও পারস্পরিক আমদানি-রফতানি। নেপাল ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেদেশে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব সরকারী ও বেসরকারী উভয়ই হতে পারে। এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ে কারিগরি কমিটির আনুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে। উল্লেখ্য, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত ও খর স্রোতা নদ-নদী পরিবেষ্টিত নেপালে পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুত উৎপাদনের রয়েছে সুবিশাল সম্ভাবনা, কমপক্ষে ৪২ হাজার মেগাওয়াট। অথচ বর্তমানে হচ্ছে মাত্র এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। সেদেশে জলবিদ্যুত উৎপাদনে খরচও খুব কম, প্রতি কিলোওয়াট মাত্র ৮০ পয়সা বাংলাদেশী মুদ্রায়। অপরদিকে বাংলাদেশে কয়লা-ডিজেলচালিত বিদ্যুত উৎপাদনে প্রতি কিলোওয়াটে ব্যয় হয় ২২ টাকার বেশি। তদুপরি তা পরিবেশবান্ধব তো নয়ই, বরং পরিবেশ দূষণসহ ডেকে আনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়। যে কারণে বাংলাদেশও এখন কয়লা ও ডিজেল বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান এক্ষেত্রে সর্বাধিক পছন্দনীয় ও অনুকূল অবশ্যই। বিদ্যুত সেক্টরে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর সরকার এবার বিশেষ জোর দিয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে, যার মধ্যে অন্যতম জলবিদ্যুত, সৌর ও বায়ুবিদ্যুত। এর মধ্যেও সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে তা দেশে এনে ব্যবহারের ওপর। এতে সাশ্রয়ী দামে যেমন জলবিদ্যুত পাওয়া যাবে, তেমনি তা হবে পরিবেশবান্ধব। নেপাল ও ভুটানের পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুত বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর পাস্পরিক উন্নয়নে প্রস্তুত সহায়ক হবে নিশ্চয়ই।
×