ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষে কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মুজিববর্ষে কর্মসংস্থান

মুজিববর্ষ দেশের বেকারদের জন্য নিয়ে আসছে সুসংবাদ। আগামীতে আর কেউ যেন বেকার বা অলস বসে না থাকে, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে যারা লেখাপড়া করছে, জ্ঞানার্জন করছে, যাদের মেধা আছে তাদের জন্য যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা স্বল্পশিক্ষিত অথবা তেমন লেখাপড়া জানেন না, তারাও বেকার বসে থাকবেন না। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বকর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। অর্থমন্ত্রী এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানত দৃশ্যমান পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে। কোন অঘটন কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে পদ্মা সেতু নির্মাণ যথাসময়ে শেষ হতে পারে। এর পাশাপাশি চলছে নদী শাসনসহ সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও। দেশের মহাসড়কগুলো ১০ লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। নির্মিত হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের এক্সপ্রেসওয়ে। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ দশটি মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় সরকার মুজিববর্ষে প্রতি ঘরে আলো পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে স্বভাবতই শিক্ষা ও প্রযুক্তির বহুমুখী বিস্তার ঘটবে। পদ্মার দুই তীরে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হলে এবং সর্বত্র বিদ্যুত পৌঁছে গেলে নিশ্চিতভাবে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প, কলকারখানা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিসহ কৃষি পণ্য বিপণন ব্যবস্থা। ফলে প্রায় সর্বত্র ছোটবড় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে হ্রাস পাবে বেকারত্ব। বর্তমানে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী প্রায় ৬১ ভাগ, যা দেশের উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক। অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ২৫ শতাংশ মানুষ দীর্ঘ সময় বেকার বসে থাকে। তাদের জন্য লাগসই ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে কেউ অলস ও বেকার বসে থাকবে না আগামীতে। সরকারের এ উদ্যোগ-আয়োজন অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন এবং মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সরকার আসন্ন বাজেটের আকার-আয়তন বৃদ্ধির পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হচ্ছে, যা চলতি বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি। প্রাক্কলিত বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ওপর। এর জন্য শিল্পঋণের বিপরীতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এর বাইরে রেমিটেন্সের টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যে গৃহীত হতে পারে বিশেষ পলিসি। ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে চলতি বাজেটে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা, যা ব্যবহৃত হচ্ছে নানাবিধ কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ সৃষ্টিতে। বর্তমান সরকার গত কয়েক বছর ধরেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে যথাযথ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সর্বশেষ লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ছাড়া হয়েছে বাংলা বন্ড। বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ মুনাফা বা ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে সুদ বা বিনিয়োগের মুনাফার হার নমনীয়-সহনীয় হওয়া মানেই তা বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব হবে। বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ। দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ায় বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে ইতোমধ্যে। এর পাশাপাশি সবিশেষ জোর দিতে হবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ সৃষ্টির ওপর, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য যা অপরিহার্য।
×