ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এক ঘণ্টা বেশি কাজ

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

এক ঘণ্টা বেশি কাজ

বাঙালী একেবারে কর্মবিমুখ না হোক অন্তত কাজের প্রতি একনিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রাণÑ এমন বলা যাবে না। বহির্বিশ্বে বাঙালীর কর্মসংস্কৃতির তেমন সুনাম নেই। সুদূর সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই বিলম্বে অফিসে আসা এবং অফিস টাইমের আগে কর্মস্থল ত্যাগের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ‘লেট লতিফ’ কথাটিরও প্রচলন ঘটে সেই আমলে। আজও এই অপসংস্কৃতির অবসান ঘটেছে এমন কথা জোর দিয়ে বলার অবকাশ নেই। অধুনা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ও বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অফিসে নিয়মিত যথাসময়ে আসা এবং প্রস্থানের ব্যাপারেও এসেছে ডিজিটাল পরিবর্তনÑ ফিঙ্গার প্রিন্ট, বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ইত্যাদি। এসব করেও যে কাজের পরিবেশের উন্নতি, কাজের মাত্রা ও পরিমাণ, তদুপরি কাজের গতির উন্নতি ঘটেছে তাতে সন্দেহ করা চলে বিস্তর। এর পাশাপাশি বহুকথিত ঘুষ-দুর্নীতির চিত্র তো রয়েছেই। লালফিতার দৌরাত্ম্যের বিষয়টিও বহুল প্রচলিত। এটি মূলত অর্থকরী তথা উৎকোচ প্রদানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বলা চলে। মোটকথা, টাকা না দিলে ফাইল নড়ে না, এমনকি তা ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত- এই ধারাবাহিকতা সত্যি বলতে কি বজায় রয়েছে অদ্যাবধি। এই প্রবণতাও বলা বাহুল্য, বাঙালীর কর্মসংস্কৃতিকে শ্লথগতি করে দেয়। এর পাশাপাশি ‘হয় কথায় নয় কথায়’ ছুটি নেয়ার প্রবণতা তো আছেই। তবু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আস্তে-ধীরে হলেও সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে ও ঘটছে। বর্তমান সরকার সব রকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করায় এর পরিমাণ কমে এসেছে অনেকাংশে। এর প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে। সার্বিকভাবে কর্মপরিবেশ তথা কর্মসংসন্থানেরও উন্নতি ঘটেছে। সরকার ইতোমধ্যে বিশেষ করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে বহুলাংশে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অফিসে আসা এবং যথাসময়ে প্রস্থানের ক্ষেত্রেও সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা বেড়েছে সর্বস্তরে। তদুপরি উন্নতি ঘটছে কর্মস্পৃহার। এরই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ মিলেছে সম্প্রতি। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে অতিরিক্ত কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। এর জন্য তারা অতিরিক্ত পারিশ্রমিক বা সম্মানী নেবেন না। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। উল্লেখ্য, এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অতিরিক্ত এক ঘণ্টা কাজ করা শুরু করেছেন। পল্লী বিদ্যুতের উদ্দেশ্যটি যে মহৎ তাতে দ্বিমতের অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন যে, মুজিববর্ষে তার সরকার দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেবে আলো। আর শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যেই নিরলস কাজ করে চলেছে বিদ্যুত বিভাগ। ইতোমধ্যে দেশের শহরাঞ্চলের শতভাগ এলাকায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুত। মাত্র ৫২ ভাগ উপজেলা বাইরে রয়েছে বিদ্যুতায়নের। জুন ২০২০-এর মধ্যে গ্রিড এলাকায় এবং ডিসেম্বর ২০২০-এর মধ্যে অফগ্রিড এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হবে। দেশব্যাপী আলোর ফেরিওয়ালার মাধ্যমে আবেদনের পাঁচ মিনিটের মধ্যে দেয়া হবে বিদ্যুত সংযোগ। তদুপরি আরইবি সেবার সম্প্রসারণই কেবল নিশ্চিত করেনি, সেবার মানও উন্নতি করেছে। এখন তারা কর্মসংস্কৃতিসহ কর্মপরিবেশও উন্নত করতে সদিচ্ছুক। এর যেন অন্যথা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে আরইবি কর্তৃপক্ষকে। তদুপরি মুজিববর্ষে অনুরূপ দৃষ্টান্ত ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগকেও। তা হলেই কেবল সার্থক ও সমুজ্জ্বল হয়ে উঠবে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালন।
×