ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ ইটভাঁটি

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 অবৈধ ইটভাঁটি

রাজধানী ঢাকা অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দায়ভারে বিপর্যস্ত। পরিবেশ দূষণেও নাকাল রাজধানীবাসী। আর ফসলি-আবাদি জমি নষ্ট করে ইটভাঁটি তৈরির দুঃসহ পরিস্থিতিও দেশব্যাপী দৃশ্যমান। কেরানীগঞ্জেরই প্রায় আড়াইহাজার ইটভাঁটির পরিবেশ ও বায়ু দূষণ থেকে শুরু করে কৃষি অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাতে শুধু আবাদি জমিই কমছে না, তার চেয়েও বেশি আশপাশের শস্যক্ষেতও বিপর্যয়ের আবর্তে পড়ে যাচ্ছে। এ শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জের দুর্ভোগ নয়, সারা বাংলাদেশে এমন কত ইটভাঁটি পরিবেশের ভারসাম্যকে বিনষ্ট করছে তারও একটি যথাযথ তদন্ত হওয়া খুব জরুরী। খোদ ঢাকাতেই যদি এমন দুরবস্থা হয়, তাহলে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের যে কি সঙ্গীন অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। এসব ইটভাঁটি বন্ধের দাবিতে অভিযোগপত্রও দাখিল করেছে স্থানীয়রা। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই এসব অবৈধ ইটভাঁটি তৈরি করতে মালিক পক্ষ কোন আইনী বিধানকেই তোয়াক্কা করেনি। এছাড়া পরিবেশকে ক্রমাগত দূষণ পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রতিনিয়ত যে কালো ধোঁয়া ও অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধ নির্গত হয় সে ব্যাপারেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাঠ, রাবার, গাড়ির টায়ার ও কয়লা পোড়ানোর অবৈধ কাজ যে বিধিসম্মত নয় সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার দায় বোধ করেনি। দুর্ভাগজনক হলো পরিবেশ অধিদফতর এসব অভিযোগপত্রকে আমলেই নেয়নি। ফলে অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হয়নি কারও। প্রশাসনিকভাবে কিছু ইটভাঁটির ওপর অর্থদন্ড জরিমানা করলেও কোন কূলকিনারা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের কাছে পরিবেশ দূষণ নির্মূলের ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশ এলেও তা এখন অবধি পালন না করার অভিযোগ আছে। ইটভাঁটি নদীর নাব্য নষ্টসহ শিল্প-কারখানার বর্জ্য পদার্থ যে মাত্রায় পানির ওপর দূষণের মাত্রা ছড়িয়ে দেয় তাও পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশকে সঙ্কটাপন্ন করে তোলে। এ বছরের শুরুতে হাইকোর্ট পুনরায় পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে সতর্ক করে ৩০ কার্যদিবসে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণে জড়িত কারখানা ও বাতাসের দূষণ প্রতিরোধে সমস্ত ইটভাঁটি বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবে দেখা যায়নি। অবকাঠামো উন্নয়নে ইট অতি প্রয়োজনীয় নির্মাণ উপাদান হলেও আধুনিকতার সম্প্রসারিত বলয়ে নতুন প্রযুক্তি ও উপকরণ ভবন কিংবা কলকারখানা তৈরিতে যুগান্তকারী অবদান রাখছে। কংক্রিট বা সিমেন্টের ব্লক দিয়েও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ভবন নির্মাণ এখন সময়ের যৌক্তিক চাহিদা। এতে ভবন শক্ত ও মজবুত হওয়া ছাড়াও নির্মাণাধীন প্রকল্পে কোন পারিপার্শ্বিক বিপন্নতার আশঙ্কা থাকে না। প্রকৃতির নির্মল আর মুক্ত পরিবেশকে সুরক্ষা দিয়ে মানুষ শুধু চারপাশের ভয়াবহতাকে বাঁচাবে না, নিজের অস্তিত্ব সঙ্কটকেও যথাসম্ভব টিকিয়ে রাখবে। পরিবেশের সঙ্গে তার কোলের সন্তানদের সুরক্ষাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সঙ্গত কারণেই প্রকৃতি ও মানুষের অবিচ্ছিন্ন সঙ্কট থেকে উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রয়েছে দায়বদ্ধতা। এমন আওয়াজ সব সময়ই শোনা যায় নদী, জমি আর পরিবেশ বাঁচলেই মানুষ নিরাপত্তার বলয়ে সুরক্ষিত থাকবে। সেভাবেই নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জনঘনিষ্ঠ বাংলাদেশ নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি।
×