ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত সৌদি বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

স্বাগত সৌদি বিনিয়োগ

অকপটে স্বীকার করতে হবে যে বর্তমানে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চেহারাটা মোটেও ভাল নয়। ইরান-মার্কিন উত্তেজনা তথা প্রায় যুদ্ধাবস্থা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। এর পাশাপাশি ইয়েমেনে সৌদি আরব-ইরানের হস্তক্ষেপে, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের বিবদমান টানাপোড়েন, উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধ, সর্বোপরি চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, অর্থনৈতিক অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি প্রায় সমগ্র বিশ্বকে বিপর্যস্ত ও অসহায় করে রেখেছে। এতে শেষ পেরেক ঠুকেছে চীনের করোনা ভাইরাস কভিড-১৯। প্রধানত এসব কারণেই বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে অথবা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত-চীনও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশই জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে ৮.১৫-এর ওপরে। এই অবস্থায় দেশে বিশাল সৌদি বিনিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক নিঃসন্দেহে। সৌদি আরব থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যেটি দেশবাসীর জন্য এক আনন্দের সংবাদ হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই সৌদি আরবের বিনিয়োগ দেশে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা, প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে রোডম্যাপ গ্রহণ, বিনিয়োগে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা, ভিশন-২১ এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যমাত্রার মতো কর্মসূচীতে আকৃষ্ট হয়েছে সৌদি আরব। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি যৌথ কমিশন গঠনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চ মাসে বিদ্যুত, জ্বালানি ও জনশক্তিসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। অবকাঠামোসহ কয়েকটি উৎপাদনশীল খাতে সৌদি আরবের কাছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী তেল অর্থনীতির এই দেশটি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। এসব চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের সৌদি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর অন্যতম সৌদি আরব। সারা দুনিয়ায় তাদের শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও দেশটির সুদীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। রয়েছে ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সৌদি বিনিয়োগ প্রায় হয়নি বললেই চলে। এখন থেকে সৌদি বিনিয়োগ আসবে বাংলাদেশে, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এর জন্য বিদ্যুত, জ্বালানি, কৃষি ও সড়ক উন্নয়ন, সেবা খাত অবকাঠামো নির্মাণসহ ১৬টি বৃহৎ প্রকল্প চিহ্নিত করেছে সরকার। বর্তমানে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় শ’ কোটি ডলারেরও কম। তার মধ্যে আমদানির পরিমাণই বেশি। উভয় দেশ সচেষ্ট হলে এই পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে সৌদি আরব থেকেই। প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক। সৌদি আরবের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল পাঠানো গেলে বাংলাদেশের বহু যুবকের সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তখন প্রবাসী আয়ের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতে এত বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন, যেটি কোন একক অর্থনৈতিক সংস্থার পক্ষে মেটানো সম্ভব হয় না। গত বছর লন্ডনের জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত সরকারপ্রধানদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগও বাড়ছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচীর সুফল আসতে শুরু“করেছে। সেই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের বিশাল বিনিয়োগকে অবশ্যই স্বাগত জানাতে হবে।
×