ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ সময়ে সর্দি-কাশি

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

এ সময়ে সর্দি-কাশি

শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ও পরিবেশে শুরু হয়েছে ঋতু পরিবর্তনের খেলা। এতে নববসন্তে একদিকে প্রকৃতি যেমন হাজির হয়েছে নতুন পাতা ও কুঁড়ি নিয়ে, অন্যদিকে ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে সর্দি-কাশি-জ্বর-হাঁচি ইত্যাদি উপসর্গ। তার মানে চিরায়ত বসন্ত কিন্তু শুধুই উপভোগ-আনন্দের নয়, সেই সঙ্গে অল্পবিস্তর দুর্ভোগও বয়ে আনে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য সময়ে সময়ে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এর অবশ্য কারণও রয়েছে একাধিক। যেমন, শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। রাতে ঠান্ডা দিনে গরম এমনও দেখা যায়। সেই সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যায় দেখা যায় ঘন কুয়াশার দাপট। এর পাশাপাশি রাজধানীসহ শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য সমূহ উপদ্রব- প্রচন্ড ধূলিদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ধূলিদূষণের দিক থেকে বিশ্বে প্রায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। স্বভাবতই মানুষকে এই বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেগ পেতে হয়। আর এজন্যই প্রধানত সর্দি-কাশি জ্বরের উপদ্রব- প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে যাকে বলা যায় ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। এবারে এর প্রকোপ কিছুটা হলেও বেশি। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিসাব মতে, এবার গত ১০৮ দিনে শীতজনিত অসুখ-বিসুখে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২১ হাজারেরও বেশি, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর সঙ্গে বাড়তি উপদ্রব তথা প্রায় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে চীন দেশের মহামারীসদৃশ করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯। সরকার অবশ্য এ বিষয়ে সবিশেষ সচেতন ও সতর্ক। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সুচিকিৎসা দিতে আলাদা কেয়ার ইউনিট স্থাপনসহ স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারী হাসপাতালগুলোকে। এর পাশাপশি তিনি সরকারী চিকিৎসকদের বাইরের চেম্বারে নয়, হাসপাতালেই চেম্বার স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। চিকিৎসকরা তা করবেন বলেই জনসাধারণের প্রত্যাশা। ইতোপূর্বে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-২০১৯-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একগুচ্ছ নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেছেন, যা সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। এ সবের মধ্যে অন্যতম দেশের ৮টি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, যা হবে সর্বাধুনিক ও বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য নিবেদিত। বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সারাদেশে মা ও শিশুদের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে ৩০টি মারাত্মক রোগের ওষুধও দেয়া হয় বিনামূল্যে। সরকারের এই জনস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকসহ বহির্বিশ্বে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে। একই সঙ্গে দেশে রোগ নির্ণয়সহ আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সর্বাধুনিক প্যাথল্যাব প্রতিষ্ঠাসহ দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ওপরও যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে দেশে সরকারীভাবে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় খুব কম, জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাজেট বরাদ্দে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত প্রতিটি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার মান ও দক্ষতার উন্নয়ন নিশ্চিত হলে সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্য সেবায় ইতিবাচক অবদান রাখবে নিঃসন্দেহে।
×