ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে

চীনে অনলাইন নির্ভরতা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 চীনে অনলাইন নির্ভরতা বাড়ছে

চীনের সরকার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লোকজনকে বাড়িতে থাকতে বলেছে। সম্প্রতি সেদেশে অনলাইন খাদ্য বিক্রেতাদের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বড় বড় অনলাইন সরবরাহ কোম্পানিগুলোর ড্রাইভাররা মাস্ক ও সুরক্ষামূলক পোশাক পরে ক্রেতাদের বাড়ি গিয়ে পণ্য বিলি করছেন। এপি ও রয়টার্স। ওয়াং ফেং নামে এক নারী ক্রেতার বাড়িতে জেডি. কমের এক ড্রাইভার বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন। ওয়াং মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ড্রাইভারের কাছ থেকে দুধসহ অন্যান্য পণ্য বুঝে নেন। ওয়াং বলেন, ড্রাইভাররা সত্যিকার অর্থেই কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং এটি বিপজ্জনক। তাদের সেবা ব্যতীত আমরা প্রকৃত অর্থেই বাঁচতে পারব না। জেডি. কম এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পিন্ডুডো, মিস ফ্রেশ ও আলিবাবা পের হেমাসহ অন্যান্য কোম্পানি তাদের লক্ষ্য পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, একই সঙ্গে তাদের কর্মীদের সুরক্ষার চেষ্টাও করছে। জানুয়ারির শেষ দিক থেকে ভাইরাস ঠেকাতে চীনজুড়ে কলকারখানা, রেস্তরাঁ, সিনেমা হল, অফিস ও দোকানপাট বন্ধ এবং অটো তৈরি ও আবাসন ব্যবস্যা স্থবির হওয়া শুরুর পর ই-কমার্স ফুলেফেঁপে উঠেছে। সরকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। তবে তাদেরই কাজ করেতে বলেছে যারা বাড়িতে থেকেই কাজকর্ম করতে পারবে। কিছু শহর এমনও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেছে যেখানে প্রতিদিন একটি পরিবারের একজন সদস্যকে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। এটি অনলাইন বিনোদন ও শপিংয়ের জন্য একটি রেডি মার্কেট। ওয়াংয়ের প্রতিবেশী চেন গুয়াং বলেন, আমি বাইরে যেতে পারি না এবং কাজেও যেতে পরি না। এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের জন্য প্রবেশ পাস পরা চেন বলেন, তিনি রান্নাঘরের সরবরাহ পূরণ করতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার অনলাইনে শপিং করেন। জেডি ডট কম বলছে, গত কয়েক মাসে তাদের চালকরা ৭১ হাজার ৫০০ টন চাল, আটা ও অন্যান্য খাদ্য শস্য বিলি করেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। ২৭ মিলিয়ন রান্নার তেল এবং ৫০ হাজার টন মাংস, ডিম, সবজি, এবং অন্যান্য সতেজ পণ্যও তারা বিলি করেছে। পিন্ডোডো বলেছে যে, তাদের ৫ লাখ ৮৬ হাজার কৃষিপণ্য বিক্রয়কারীর কাছ থেকে আপেল, স্ট্রবেরি এবং অন্যান্য তাজা ফলের অর্ডার জানুয়ারিতে ১২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য এশিয়ান বাজারগুলিতে ভাইরাসের আশঙ্কাও খাদ্য এবং স্বাস্থ্যকর পণ্য সরবরাহে ই-কমার্সের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনলাইন মাস্ক বিক্রয় এক বছর আগের তুলনায় জানুয়ারিতে ৩৭ হাজার শতাংশ বেড়েছে। চীনা ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কোম্পানিগুলোর তুলনায় ক্রেডিট কার্ড, নির্ভরযোগ্য বিতরণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য সুবিধায় ঘাটতি ছিল। তারাই এখন চীনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোম্পানিগুলোর কর্মচারী এবং চালকরা প্যাকেজ, যানবাহন এবং তাদের বিতরণ কার্যালয়গুলো জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করে এবং দিনের বেলা বারবার হাত ধুয়ে ফেলেন। সবাইকেই মাস্ক ও গ্লোভস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগে মুখোশ পরা অবস্থায় লোকের সঙ্গে কথা বলা অভদ্রতা বলে বিবেচিত হতো। তবে এখন এটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, আরও ১৩৬ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে নতুন রোগীর সংখ্যা আরও কমে আসায় ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আসার আশা দেখছেন চীনা চিকিৎসকরা। গত ডিসেম্বরের শেষে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর মঙ্গলবারই প্রথম নতুন রোগীর চেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মূল ভূখন্ডে আরও ১ হাজার ৭৪৯ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ হাজার ৮২৪ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৫ জনে। আর অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার চীনে মোট ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১৩২ জন। তাতে চীনের মূল ভূখন্ডে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০৪ জনে।
×