ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধুলার রাজধানী

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  ধুলার রাজধানী

নানা ধরনের দূষণে ঢাকা মহানগরীর পরিবেশ আজ সঙ্কটাপন্ন। এক এক পরিবেশ দূষণ এক এক রকম বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছে। ধুলা দূষণ আরও একটি অন্যতম পরিবেশ দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ধুলাদূষণ যথাযথবাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ধুলাদূষণ ও এর ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা তৈরির জন্য সরকার, বেসরকারী সংগঠন ও সচেতন মহলকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে মূল উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে। তা নাহলে ঢাকা মহানগরী এক সময় ধুলার নগরে পরিণত হবে। বায়ুতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, সীসা, তামা, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, ধুলিকণা ইত্যাদি থাকে। প্রত্যেকটি উপাদানের একটি সহনীয় মাত্রা রয়েছে। কোন উপাদান এই মাত্রার বেশি বা কোন কোন ক্ষেত্রে কম থাকলে আমরা তাকে বলি বায়ুদূষণ। বাযুতে ভাসমান ধুলিকণার সহনীয় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ ২০০ মাইক্রোগ্রাম। ধুলার পরিমাণের বেশি হলে যে বায়ুদূষণের সৃষ্টি হয় তাকেই বলে ধুলা দূষণ। ধুলিকণার আকার ১০ মাইক্রেনের বেশি হলে বায়ুতে ভেসে থাকতে পারে না; নিচে পড়ে থিতিয়ে যায়। ছোট আকারের ধুলিকণাই বায়ুতে ভেসে থেকে ধুলা দূষণ ঘটায়। ধুলা দূষণ যেভাবে হয় : (১) স্বাভাবিক কারণে প্রতিদিন রাস্তায় কিছু ধুলা জমে যা প্রতিদিন অপসারণ করতে হয়। এই ধুলা ঠিকমত অপসারণ না করার ফলে ধুলা জমতে থাকে। জমে যাওয়া এই ধুলা চলন্ত যানবাহনের গতিতে বাতাসে মিশছে এবং ধুলা দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। (২) গ্যাস, পানি, টেলিফোন, স্যুয়ারেজ ইত্যাদি পরিসেবার ভূগর্ভস্থ সংযোগ প্রায় সকল ক্ষেত্রে রাস্তার নিচ দিয়ে গিয়েছে। এই সব পরিসেবার সংযোগ মেরামত, বৃদ্ধি ও নতুন সংযোগ স্থাপনের সময় রাস্তা খনন করা হয়। খননে সৃষ্ট মাটি রাস্তার উপরেই স্তূপ করে রাখা হয়। নানাভাবে এই মাটি পুরো রাস্তা ও এর আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। (৩) দালান-কোঠা বা অন্য কোন অবকাঠামো তৈরির সময় নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার ওপর বা রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় রাখা হচ্ছে যা থেকে ধুলা দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি নির্মাণ কাজের সময়ও যথাযথ প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে ধুলা দূষণ তৈরি হচ্ছে। দালান-কোঠা বা অবকাঠামো ভাঙ্গার সময়ও যথাযথ পদ্ধতি ও প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নেয়ায় ধুলা দূষণ তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশে সাধারণত দালান-কোঠা বা অবকাঠামো ভাঙ্গার সময় হাতুড়ি বা এই জাতীয় বস্তু ব্যবহার করা হয় যার ফলে ভাঙ্গার সময় ধুলা উৎপন্ন হয়। (৪) বিভিন্ন সামগ্রী ট্রাক বা অন্য কোন বাহনে পরিবহনের সময় ঠিকমত আচ্ছাদন দেয়া হচ্ছে না ফলে তা থেকে বাতাসে ধুলা ছড়াচ্ছে। অনকে সময় এসব বাহনে মাটি, বালি, ইট এ ধরনের জিনিস বহন করা হয় ঠিকমত আচ্ছাদন ও প্রতিরোধক না থাকার ফলে এ থেকে মাটি ও ধুলা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকে সরাসরি বাতাসে ধুলাও ছড়ায়। (৫) রাস্তার পাশের ড্রেন পরিষ্কার করার সময় ড্রেন থেকে তোলা আবর্জনা রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখা হচ্ছে। যা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং শুকিয়ে ধুলায় পরিণত হচ্ছে এবং ধুলা দূষণ সৃষ্টি করছে। (৬) গৃহস্থালি আবর্জনা যথাযথ স্থানে না ফেলে রাস্তায়, খোলা জায়গায় বা এখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে। আবার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের সময় যথাযথভাবে সংগ্রহ করছে না। কিছু ময়লা প্রতিদিন থেকে যাচ্ছে। এবং আবর্জনা পরিবহনের সময় অসাবধানতা ও অবহেলার কারণে আবর্জনা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে যা থেকেও ধুলা দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। (৭) কোন এলাকায় ভাঙাচোরা রাস্তা দীর্ঘদিন মেরামত করা হচ্ছে না। এসব ভাঙাচোরা রাস্তায় প্রচুর ধুলা উৎপন্ন হচ্ছে। বাতাস বা যানবাহনের গতিতে এসব ধুলা সব সময় বাতাসকে দূষিত করে রাখছে। আবার রাস্তা মেরামতেও দীর্ঘ সময় নেয়া হচ্ছে যা থেকেও ধুলা উৎপন্ন হচ্ছে এবং অনুরূপভাবে ধুলাদূষণ তৈরি করছে। (৮) রাস্তার পাশে অবস্থিত দোকানসমূহ পরিষ্কার করার পর এতে সৃষ্ট ধুলা ও আবর্জনা রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। এবং রাস্তার ওপর ও আবাসিক এলাকায় ইট ভাঙ্গার মেশিনে ইট ভাঙ্গার সময় ধুলা উৎপন্ন হচ্ছে এবং ধুলা দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। (৯) নগরের বাইরে থেকে যে সব যানবাহন নগরে প্রবেশ করছে তার চাকা ও শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ ধুলা লেগে থাকে। এই ধুলানগরীর রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং ধুলা দূষণের সৃষ্টি করছে। উত্তরা, ঢাকা থেকে
×