সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পালের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধা জানান পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কলকাতার কেওড়াতলায় গান স্যালুট, চোখের জলে চির বিদায় তাপসকে। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটের পর তাপস পালের শেষকৃত্য শুরু হয়। বুধবার চোখের জলে ‘সাহেব’কে চির বিদায় জানাল বাঙালি। এর আগে এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ গল্ফ গ্রিনের বাড়ি থেকে রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাওয়া হয় তাপস পালের দেহ। সেখানে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন একাধিক নেতামন্ত্রীও। এ দিন বেলা একটার পর রবীন্দ্রসদন থেকে কেওড়াতলায় নিয়ে যাওয়া হয় তাপস পালের মরদেহ। সেখানে প্রথমে তাঁকে গান স্যালুট দেয়া হয়। তখন উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়সহ টালিগঞ্জের শিল্পী, পরিচালক ও কলাকুশলীরা।
১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দন নগরে জন্ম তাপস পালের। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। ১৯৮০ সালে তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘দাদার কীর্তি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয়। মাত্র ২২ বছর বয়সে মুক্তি পায় তার প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র ‘দাদার কীর্তি’। বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকরা তাকে ‘গুরু দক্ষিণা’ চলচ্চিত্রের জন্য আজীবন মনে রাখবে। বিশেষ করে ওই চলচ্চিত্রে কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাপসের যুগলবন্দী রীতিমতো কাঁদিয়েছিল সবাইকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাপসকে। একের পর এক সুপারহিট চলচ্চিত্র ভক্তদের উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা। ‘মায়া মমতা’, ‘সুরের ভুবনে’, ‘পারাবত প্রিয়া’, ‘সমাপ্তি’, ‘চোখের আলো’, ‘অন্তরঙ্গ’, ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, ‘বলিদান’ ‘কড়ি দিয়ে কেনা’র মত অসংখ্য বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তাপস। অভিনয় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮১ সালে ‘সাহেব’র জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান। বাংলা চলচ্চিত্রের মতো বলিউডেও কাজ করছেন তাপস পাল। ‘অবোধ’ চলচ্চিত্রে মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৯ সালে ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে টিকিট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে কৃষ্ণনগরে সংসদ সদস্য (এমপি) হন তিনি। তবে ২০১৬ সালের শেষের দিকে রোজ ভ্যালি নামে একটি চিট ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার ভোরে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাপস পালের মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে তাপস পাল নার্ভের রোগ ও অনিদ্রাজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক এই সংসদ সদ্যসের বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে মুম্বাই গিয়েছিলেন তাপস পাল। সেখান থেকে কলকাতা ফেরার পথে মুম্বাই বিমানবন্দরে পৌঁছালে বুকে ব্যাথা অনুভব করেন এই অভিনেতা। এরপর তাকে দ্রুত মুম্বাইয়ের জুহু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মঙ্গলবার ভোর ৪টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।