ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্ট তৈরি করেন নাইট গার্ড, পিয়ন

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 রিপোর্ট তৈরি করেন  নাইট গার্ড, পিয়ন

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ রাত ১০টার পরে কোন চিকিৎসক কিংবা মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট থাকেন না। ওইসময় একজন নাইট গার্ড, পিওন ও ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট থাকেন। তারপরেও চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। অহরহ ভুল রিপোর্ট প্রদান করা হলেও একজন প্রভাবশালী চিকিৎসকের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিষয়টি জেনেও সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করছেন না। যে কারণে একপ্রকার জিম্মি হয়ে পরেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ঘটনাটি শেবাচিম হাসপাতালের সামনের আবিদ ইসলামিয়া মেডিক্যাল সার্ভিসেস নামের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের করনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) চিকিৎসক কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির তার নগরীর রুপাতলী এলাকার নিজস্ব আব্দুল্লাহ হাসপাতাল এবং শেবাচিমের সামনের আবিদ ইসলামিয়া মেডিক্যাল সার্ভিসেস থেকে রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বাধ্য করছেন। ফলে ডাঃ হুমায়ুন কবিরের কাছে দীর্ঘদিন থেকে জিম্মি হয়ে পরেছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। শেবাচিমের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বলেন, যারা কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করেন না, তারা কিসের চিকিৎসক। তার (হুমায়ুন কবির) আচরণ রোগীদের সঙ্গে প্রহসনমূলক। তার নিজস্ব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে রোগী পাঠানোর বিষয়টি একাধিকবার অভিযোগ আকারে পেয়েছি। এটা কোন চিকিৎসকের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রিন্সিপালের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। পরিচালক আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে সিসিইউ ইউনিট প্রধান ডাঃ জাকির হোসেনও লিখিত অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, আবিদ ইসলামিয়া মেডিক্যাল সার্ভিসেস-এ রাত ১০টার পরে কোন চিকিৎসক কিংবা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ছাড়াই ভুল-ভাল রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে। বিষয়টি সিসিইউ কর্তৃপক্ষ জানলেও ডাঃ হুমায়ুন কবিরের প্রতিষ্ঠানের রির্পোটের কারণে কেউ মুখ খুলছেন না। অভিযোগ রয়েছে, রাতের পরীক্ষা নিরীক্ষায় বেঁচে যাওয়া ডাক্তারের কমিশনের অর্থ সিসিইউর সিএ ও রেজিস্ট্রারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। ফলে ভুল রিপোর্ট প্রদান করা হলেও বিষয়টি চেঁপে যান সিসিইউ সংশ্লিষ্টরা। সূত্রমতে, ভুল রিপোর্টের কারণে ভুল চিকিৎসায় সিসিইউতে যেসব রোগী মারা যায় তার জন্য অনেকটাই দায়ী ডাঃ হুমায়ুন কবির। এসব কারণে শেবাচিম কর্তৃপক্ষ তাকে একাধিকবার নোটিস করা সত্ত্বেও তিনি কোন কর্ণপাত না করে তার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ইউনিট প্রধান ডাঃ জাকির হোসেন তার এ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাঃ হুমায়ুন কবির সিসিইউতে রাউন্ডে গেলে তার ডায়াগনস্টিক আবিদ ইসলামিয়া সার্ভিসেস’র মার্কেটিং প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে যান। যাদের মধ্যে রয়েছে-পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক স্টোর কিপারের পুত্র অপু, প্রতিনিধি রাসেল, আরিফ, রাকিব, শাকিল, নিপু, খাদিজা, রিমা, ফাতেমা ও হাসান। রোগীদের ব্যবস্থাপত্র লিখে তা রোগীর হাতে না দিয়ে ডাঃ হুমায়ুন কবির তার লোকদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। যাতে করে ওই ডায়াগনস্টিক থেকেই রোগীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বাধ্য হয়। যদি রোগী শেবাচিমের প্যাথলজি বা অন্যকোন ডায়াগনস্টিক থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করান তবে তা ছুড়ে ফেলে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে ডাঃ হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিসিইউ ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ডাঃ হুমায়ুন কবির একযুগেরও অধিক সময় ধরে শেবাচিমে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার মতো কতিপয় চিকিৎসকের কারণে ডাক্তারী পেশাকে কলঙ্কিত করে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে বিতর্কিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সিসিইউ ইউনিটে সর্ব সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি (হুমায়ুন কবির) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একাধিক মার্কেটিং প্রতিনিধিদের সিসিইউর অভ্যন্তরে বসিয়ে রাখেন। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপত্র হাত থেকে জোর করে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যার প্রমাণ হিসেবে দেখা যায় সিসিইউর প্রতিটি রোগীর রিপোর্ট ফাইলে আবিদ ইসলামিয়া মেডিক্যাল সার্ভিসেস’র রিপোর্ট গাঁথা রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডাঃ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, আমি আব্দুল্লাহ হাসপাতাল ও আবিদ ইসলামিয়া মেডিক্যাল সার্ভিসেস’র একজন শেয়ার হোল্ডার। কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। যার কোন সত্যতা নেই। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোন ডাক্তারের অভিযোগ নেই। পরে সাংবাদিকদের তিনি আব্দুল্লাহ হাসপাতালে চায়ের আমন্ত্রণ জানান।
×