ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করলেও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। একশ’ ইয়াবাসহ আটকের পর মাদক বিক্রেতা ওই নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতের নাম ইয়াসমিন বেগম (৪০)। সে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সদর থানার ভাওয়াল গাজীপুর গ্রামের আবদুল হাইয়ের স্ত্রী। নিহতের ছেলে আরাফাত রহমান জিসান ও স্বজনরা জানান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের একটি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ বাড়ির কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। পুলিশ সদস্যরা গৃহকর্তা আবদুল হাইকে না পেয়ে তার স্ত্রী ইয়াসমিনকে মারধর করে এবং আটক করে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। রাতে ইয়াসমিনের মোবাইলে ফোন দিলে অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে তার ছেলে জিসানকে প্রথমে ডিবি অফিসে এবং পরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। পরে জিসান ও পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে ইয়াসমিনের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। এ সময় স্বজনদের হাসপাতালের ভেতরে যেতে পুলিশ বাধা দেয়। নিহতের ছেলেসহ স্বজনদের অভিযোগ পুলিশের ব্যাপক নির্যাতনে গৃহবধূ ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ইয়াসমিন হৃদরোগী ছিলেন বলে নিহতের ছেলে জিসান জানিয়েছে। তিনি জানান, পূর্বেও ইয়াসমিন স্ট্রোক করেছিল। তার হার্টে দুটি ব্লক ছিল । গাজীপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের উপ কমিশনার মনজুর রহমান পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সদর থানার ভাওয়াল গাজীপুর এলাকার আবদুল হাইয়ের বাড়িতে মাদক বেচা কেনা হচ্ছে। এ গোপন সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে অভিযান একাধিক মাদক মামলার আসামি ইয়াসমিনকে একশ’ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার মাদক ব্যবসায়ী স্বামী পালিয়ে যায়। গ্রেফতারের পর ইয়াসমিনকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হলে ইয়াসমিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ইয়াসমিনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতিকালে ইয়াসমিন মারা যান। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে ইয়াসমিনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার বুকে ব্যথা ও প্রচ- শ^াসকষ্ট ছিল। হাসপাতালে তার ইসিজিও করা হয়। লক্ষণ থেকে প্রাথমিকভাবে বোঝা গেছে, তিনি স্ট্রোক করেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তুতিকালে রাত ১১টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান। এদিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আজাদ মিয়াকে প্রধান করে বুধবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন- অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আবদুল হানিফ মিয়া ও সহকারী পুলিশ কমিশনার আহসান হাবিব। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
×