স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেছেন, বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে কৃষি জমি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। এই তিনটি বিষয় দেশের খাদ্য উৎপাদনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এই সরকার প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এ কারণে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ। তবে নিরাপদ ও পুষ্টিজাতীয় খাবারের নিশ্চয়তাও এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ এর সেমিনার হলে এক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন। অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিষ্ট ফোরাম ও কৃষি তথ্য সার্ভিস যৌতভাবে ‘জলাবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চিয়তায় করনীয় শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে বিরোধী দলকে নির্বাচন পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে লাভ নেই, গনতন্ত্রে বিশ্বাস করলে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করলে আমরা তা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী বলেন, নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নানাবিধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং এটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিজমি কমে যাওয়ায় সরকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে সারের একাধিকবার মূল্য হ্রাসে করেছে। একইসঙ্গে কৃষি ঋণ বিতরণ, গবেষণায় অগ্রাধিকার ও প্রণোদনা দেওয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা। খাদ্য নিরপত্তার আগে মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। এজন্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলত জরুরি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যতই সমালোচনসা করুক না কেন তাদেরকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের সমস্যা। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ স্থানে। তাপমাত্রা ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা ইত্যাদির কারণে শুধু কৃষিই নয়, মানুষের চিরচেনা স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহই ব্যহত। দেশের ৪০ শতাংশ লোক কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ভবিষ্যৎ মেধাবী জাতি গঠনে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত জরুরি।
তিনি বলেন, খাদ্য ঘাটতির জন্য পৃথিবীতে অনেক মাইগ্রেশন হয়েছে। আর খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য অনেক যুদ্ধও হয়েছে। এদেশেও খাদ্য নিয়ে একসময় মানুষ অনেক কষ্ট করেছে। ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য সংকট দূর করাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এছাড়া প্রত্যেকটা লক্ষই আমরা ভালো করেছি। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সরকারও এ বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও সরকার অনেক কাজ করেছে। চাষীদের ঋণ দেয়াসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে এই সরকার প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। খাদ্য ঘাটতি নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষতায় এসেই প্রথম বৈঠকেই সরকার খাদ্য উৎপাদনের বাড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছি। এজন্য কৃষিখাতে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বাড়ছে। তাই পৃথিবীর সব দেশ ও মানুষ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে এটাকে মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। যদিও কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে খাদ্য উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন পুরোপুরি রোধ করা যায় না। তবে লাগসই প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত করা যায়। সে কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের রয়েছে অস্তিত্বের সম্পর্ক। দেশের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত অনেক নদীর গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছে। কোথাও নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পানিসেচ বিঘ্নিত হচ্ছে। অনাবৃষ্টি ও খরার প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষির উৎপাদন। বাংলাদেশের শস্যখাতে অভিযোজন কর্মসূচি মোটামুটিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। খরা, বন্যা, তাপ, লবণাক্ত জলমগ্নতা ও পরিবেশ সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষিকে প্রক্রিয়াজাত, লাভজনক ও যান্ত্রিকীকরণে কাজ করছে কৃষিবান্ধব সরকার।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আডিইবির সভাপতি একেএমএ হামিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচলক ড. মো. আব্দুল মুঈদ। আলোচক হিসেবে ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. আসাদুল্লাহ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিজেএফের সাধারণ সম্পাদক মোগাহার হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সভাপতি কাওসার রহমান।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বিভিন্ন ঘাত সহনশীল জাতসহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা এ পর্যন্ত ১০২টি জাত উদ্ভাবন করেছি। ফলে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের জন্য গত বছর আমরা ৩ কোটি ৭৮ লাখ খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এখন ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন দ্বিগুন করার পরিকল্পনা করছি। এদেশের মানুষ আর কোন দিন খাদ্যের অভাব অনুভব করবে না।
ড. আব্দুল মুঈদ বলেন, জলবায় পরিবর্তনের খাপ খাওয়াতে আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এতে জলবায়ু অভিঘাত সত্তে¡ও দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
ড. এম আসাদুজ্জাতান বলেন, জলবায় পরিবর্তন ঝুকি মোকাবেলায় সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। সনমাধান হাতেই রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সমন্বিত কোন কাজ হচ্ছে না। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজতি ক্ষতিকর প্রভাব মোকাকেবলায় সরকারকে সমন্বিতভাবে কাজের আহ্বান জানান।
বিশেষ প্রতিনিধি \
##
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: