স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে নিয়মতিভাবে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু করলো ডায়াবেটিক সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ছেলে শরীফুল ইসলামের লিভারের অংশ তাঁর মা জাহানারা খাতুনের দেহে সফল লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমেই শুরু হয় নিয়মিতভাবে লিভার প্রতিস্থাপন কার্যক্রম। ৩০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রত্যেক রোগীকে লিভার প্রতিস্থাপন করাতে ৭৫ লাখ টাকা দরকার পড়লেও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল নিবে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা।
আর ভারতে তা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালাতে স্থাপন করা হয়েছে মজবুত অবকাঠামো এবং গড়ে তোলা হয়েছে প্রশিক্ষিত স্থায়ী চিকিৎসক টিম। বর্তমানে লিভার প্রতিস্থাপন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এ্যান্ড ইনস্টিটিউট হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে অরগ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির একটি প্রকল্প।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম, ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফ উদ্দিন, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক জাফর আহমেদ লতিফ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিইও অধ্যাপক এম এ রশীদ, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।
লিভার প্রতিস্থাপন সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের চীফ সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে লিভার প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য দক্ষ জনবল এবং অত্যন্ত ব্যয় বহুল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের আন্তরিকতা ও অবদানে একটি স্থায়ী লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। ইউনিটটি পূর্ণাঙ্গভাবে গতে তুলতে সরকার ১০ কোটি টাকা, ডাচ বাংলা ব্য্যাংক লিমিটেডের মালিক ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বারডেম ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল দিয়েছে ১৫ কোটি টাকা।
প্রতি মাসে দু’জন বা তার বেশি রোগীর লিভার প্রতিস্থাপন করানো সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ২০১০ সালের ৩ জুন প্রথম সফল লিভার প্রতিস্থাপন করি। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৬ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো লিভার প্রতিস্থাপনেও সফল হয়েছি। ওই দু’টি প্রতিস্থাপন কার্যক্রমে বিভিন্ন জায়গায় থেকে যন্ত্রপাতি ও জনবল ভাড়া করতে হয়েছে। এসব কারণে এটা নিয়মিত করা যায়নি। বর্তমানে সেই সমস্যা দূর হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছেএকটি মজবুত লিভার প্রতিস্থাপন ইউনিট। বিভিন্ন তবে এখন থেকে আমরা নিয়মিত লিভার প্রতিস্থাপন করবো।
লিভারদাতা ও গ্রহীতার বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, লিভার রোগের শেষ চিকিৎসা হিসাবে লিভার প্রতিস্থাপন বর্তমান বিশ্বে একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। যার সুফল পেয়ে পৃথিবীতে লাখ লাখ লিভার ফেইয়িারে আক্রান্ত মানুষ নতুন জীবন পেয়ে থাকেন। তার করার পর দাতার অবশিষ্ট লিভার তার দেহে পুনরায় বর্ধিত হতে থাকে।
এটি মাত্র ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তার পূর্বের সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। আর প্রতিস্থাপিত লিভার গ্রহীতার দেহে অনুরূপভাবে দ্রুত বর্ধিত হতে থাকে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পচিালনার জন্য একটি সুস্থ লিভারের মতই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে থাকে।
ডা.আলী বলেন, লিভার প্রতিস্থাপনে সব থেকে বড় বাধা ডোনার। রোগীরা ডোনার ম্যানেজ করতেই হিমশিম খায়। লিভারের রোগীদের আত্মীয়রা ডোনার হিসেবে এগিয়ে আসলে এ কাজ আরো সহজ হবে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে আমরা তৃতীয় রোগী হিসেবে জাহানারা খাতুনের লিভার প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করি এবং আমরা সফল হই। জাহানারা খাতুনকে লিভারের একটি অংশ দান করেছেন তার ছেলে এডভোকেট শরিফুল ইসলাম। লিভারদাতা ও গ্রহীতা দুজনেই সুস্থ আছেন।
এ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনারা দেশেই চিকিৎসা করান। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের দেশে এখন অনেক ভালো ভালো ডাক্তার আছে। চিকিৎসা সেক্টরের সফলতার দিকসমূহ তুলে ধরার জন্য তিনি সাংবাদিকদের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং দক্ষজনবল তৈরির লক্ষ্যে ভারতের বিখ্যাত ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আলোকে বাংলাদেশের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারির প্রথিকৃৎ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও ভারতের খ্যাতিমান লিভার ট্র্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক সুভাষ গুপ্ত যৌথভাবে কাজ করবেন।
তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের লিবার ফেইলিয়ারে আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে তার জীবন রক্ষাকারী শেষ চিকিৎসা হিসাবে নিজ দেশে লিভার প্রতিস্থানের সুফল পেয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন।
