ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামীণফোনে প্রশাসক বসাতে সরকার প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

গ্রামীণফোনে প্রশাসক বসাতে সরকার প্রস্তুত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সোমবারের মধ্যে বিটিআরসিকে এক হাজার কোটি টাকা দিতে হবে গ্রামীণফোনকে৷ আদালতের এই নির্দেশ না মানলে গ্রামীণফোনে সরকার প্রশাসক বসাবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার৷ তিনি আরো বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগের সব প্রস্তুতি আমাদের আছে৷ যিনি গ্রামীণফোনের প্রশাসক হবেন তিনি হবেন ওই প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) পদ মর্যাদার৷ আমরা এমন একজনকে নিয়োগ করব যিনি গ্রামীণফোনকে কব্জায় আনতে পারেন৷ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে গ্রামীণফোনের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়৷ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন৷ পাওনা নিয়ে বিটিআরসির সাথে গ্রামীণফোনের এই লড়াই চলছে এক বছর আগে থেকে৷ বিটিআরসি ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে গত বছরের ২ এপ্রিল গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়৷ কিন্তু ওই দাবি উপেক্ষা করে গ্রামীণ ফোন শুরু থেকেই আইনি পথে হাঁটে৷ তারা প্রথমে নিম্ন আদালতে ওই দাবির বিরুদ্ধে মামলা করে৷ গত বছরের ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত গ্রামীণফোনের আবেদন খারিজ করে দিলে তারা হাইকোর্টে আপিল করে৷ আর গত অক্টোবরে তারা বিটিআরসির টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞাও পায় হাইকোর্ট থেকে৷ কিন্তু বিটিআরসি ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করলে গত ২৪ নভেম্বর তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার আদেশ দেন আপিল বিভাগ৷ ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে গ্রামীণ ফোন৷ সেই রিভিউ আবেদন বৃহস্পতিবার খারিজ হলো৷ আপিল বিভাগের এই রায়ের আগে গ্রামীণফোন দুই হাজার কোটি টাকার বিপরীতে বিটিআরসিকে মাত্র ১০০ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল৷ বিটিআরসি তা প্রত্যাক্ষান করে৷ গ্রামীণ ফোনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম আমীন উদ্দিন বলেন, আমাদের মূল আইনি লড়াই শেষ হয়নি৷ কারণ, বিটিআরসির দাবি তো অনেক টাকা৷ আপিল বিভাগ যে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন তার এক হাজার কোটি টাকা এখন সোমবারের মধ্যে দিতে হবে৷ আমি আমার মক্কেল গ্রামীণ ফোনকে আদালতের এই চূড়ান্ত আদেশ জানিয়ে দিয়েছি৷ এখন তারা কী করবেন সেটা তাদের বিষয়৷ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আপিল বিভাগের এই রায়ের পর বলেন, ‘গ্রামীণ ফোনকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে এই দেশের আইন মেনে করতে হবে৷ তারা এই দেশে ব্যবসা করে, কিন্তু এই দেশের আইন-আদালতের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা নেই৷ তারা এর আগে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধেও উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে৷ তাদের এই ধরনের ঔদ্ধত্বপূর্ণ মানসিকতা এই দেশে ব্যবসা করার জন্য ক্ষতিকর৷ এ দেশে ব্যবসা করার মানসিকতা তাদের আছে বলে মনে হয় না৷’ তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোনে প্রশাসক নিয়োগের অনুমোদন আমরা আগেই নিয়ে রেখেছি৷ এখন নিয়োগ করলে বোঝা যাবে পরিচালনায় কোনো সমস্যা হয় কিনা৷ সমস্যা হলে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’ এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণফোনের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে তাদের আইনজীবী এ এম আমীন উদ্দিন বলেছেন, ‘সর্বশেষ আদেশ চূড়ান্ত৷ এখন এটা গ্রামীণফোন মানবে কি মানবে না তা আমাকে এখনো জানায়নি৷’ অবশ্য সন্ধ্যায় গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়, ‘আপীলেট ডিভিশনের আদেশের বিষয়ে আমরা অবগত৷ রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে আমরা প্রত্যাশিত ফলাফল পাইনি৷ এই মুহূর্তে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই৷’ গ্রামীণফোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর৷ সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তাদের গ্রাহক প্রায় আট কোটি৷ অন্যদিকে বিটিআরসি বাংলাদেশের টেলিকম্যুনিকেশন খাতে সরকারের রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান৷ সূত্র: ডয়েচ ভেলে
×