ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সিঙ্গাপুর থেকে এগিয়ে-

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সিঙ্গাপুর থেকে এগিয়ে-

একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী দিনে প্রধানমন্ত্রী এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে বলে একটি মন্তব্য করেছেন। মনে রাখতে হবে, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া একদিনে তৈরি হয়নি। প্রথমোক্তটি একটি ছোট দ্বীপ দেশ। জনসংখ্যাও সীমিত। তদুপরি একদলীয় শাসন কর্তৃক কঠোরভাবে পরিচালিত। সংবাদপত্রও মাত্র একটি। চার পাশে সমুদ্র পরিবেষ্টিত সিঙ্গাপুর প্রধানত বন্দরের ভাড়া এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিবিধ পণ্যের আমদানি-রফতানির ঘাঁটি বিধায় বিপুল বৈদেশিক মুুদ্রা উপার্জনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলাও কঠোরভাবে পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যে কারণে দেশটিকে বলা হয় ‘পুলিশ স্টেট’। সেখানে জেব্রাক্রসিং ছাড়া রাস্তা পার হলে কিংবা রাস্তায় থুথু ফেললেও জরিমানা গুনতে হয়। কোন বিরোধী রাজনৈতিক দল তথা গণতন্ত্রও অনুপস্থিত। মালায়েশিয়ার অবস্থাও অনুরূপ। তবে দেশটির রয়েছে বিশাল ভূখন্ড, বিপুল প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ। সেই অনুপাতে জনসংখ্যা কম। দেশটির অভাবনীয় উন্নতি ও উন্নয়ন সত্ত্বেও স্বীকার করতে হবে যে, সেখানেও গণতন্ত্র প্রায় অনুপস্থিত। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মালয়েশিয়া আর আগের অবস্থায় নেই। বরং দীর্ঘদিন একদলীয় শাসনে থেকে সেখানে ইতোমধ্যে ঘুষ-দুর্নীতির প্রায় অবাধ অনুুপ্রবেশ ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও লক্ষণীয়। কোন কোন প্রদেশে মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর তৎপরতারও খবর আছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল সীমিত ভূখ-ের দেশ। মাথাপিছু জমির প্রাপ্যতা খুব কম। সীমিত কৃষি জমির মাধ্যমে এত বিপুল জনগোষ্ঠীর ব্যাপক দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা পূরণ মোটেও কম কথা নয়। অকপটে স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমান সরকার এই কাজটি অত্যন্ত সফল ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পেরেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্য উৎপাদনে কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, সরু ও সুগন্ধি চালসহ কিছু খাদ্যপণ্য রফতানিও করছে বিদেশে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ বর্তমানে মৎস্যসম্পদ, শাক-সবজি, ফলমূল, গবাদিপশু ও দুধ, সর্বোপরি হাঁস-মুরগি উৎপাদনে প্রায় স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। এবার আসা যাক বিদ্যুত প্রসঙ্গে। বলার অবকাশ রাখে না, যে কোন দেশের অর্থনীতির চাকা সর্বদা সচল ও গতিশীল রাখার জন্য বিদ্যুত অপরিহার্য। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশ ডুবে ছিল প্রায়ান্ধকারে। নিত্য লোডশেডিং ছিল মানুষের জীবনের অঙ্গ। বর্তমানে দেশ বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। তদুপরি নির্মাণাধীন দুটি বড় কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হলে বাংলাদেশ কিছু পরিমাণে বিদ্যুত ভারত ও নেপালেও রফতানি করতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ভুটান ও নেপালে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর বাইরেও পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ অন্তত ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। বিদেশী বিনিয়োগের জন্যও বর্তমানে বাংলাদেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। বিশ্বের অন্যান্য দেশ, এমনকি চীন, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুরে যখন জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমছে, তখন বাংলাদেশ গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে আট শতাংশের ওপরে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলার। যে কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণও আশাব্যঞ্জক, ১৮ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ চীনে করোনাভাইরাস তথা কভিড-১৯-এর তীব্র মহামারীসদৃশ সংক্রমণ, অধুনা যার রেশ ছড়িয়ে পড়ছে সিঙ্গাপুরেও, বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলছে। ইতোমধ্যে তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পথও প্রশস্ত হয়েছে। বস্তুতপক্ষে এই প্রেক্ষাপটেই বিবেচনায় নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কারও প্রতি বিদ্বেষ বা প্রতিহিংসা পোষণ করেন না। ইতোপূর্বে এরশাদ বা খালেদা জিয়া তার প্রতি যে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চেয়েছিল, চট্টগ্রাম গণহত্যা কিংবা গ্রেনেড হামলা, তাও তিনি উল্লেখ করেন। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, এখানে রাজনীতি কত কঠিন ও প্রতিকূল। এসব মোকাবেলা করেই তার সরকার এগিয়ে যাবে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে। সবাইকে নিয়েই তিনি এগোতে চান দলমত ও সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে। আর এখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহত্ত্ব ও মাধুর্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি আন্তরিক, একনিষ্ঠ ও বদ্ধপরিকর।
×