ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সৈকতে উঁচু স্থাপনা নয়-

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 সৈকতে উঁচু স্থাপনা নয়-

নিসর্গের তীর্থস্থান সমুদ্রস্নাত কক্সবাজার বাংলাদেশের এক মনোরম ও আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে সারা বিশ্বে সুখ্যাত। শুধু তাই নয়, সমুদ্র সৈকতের দীর্ঘতম এই স্থানটিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলরাশির এক অকৃত্রিম সৌন্দর্য বিহার। ৮০ মাইল সুদীর্ঘ এর বহুল বিস্তৃতি। সঙ্গত কারণে পর্যটন শিল্পেও রয়েছে এর বহুমাত্রিক আবেদন। সারা বছর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ বিনোদনের সময় কাটানোর উৎকৃষ্টতম জায়গা হিসেবে কক্সবাজারের সমুদ্রস্নানে চলে আসে। সুবিশাল নীল জলরাশির জোয়ার-ভাটার অনাবিল মাধুর্য পর্যটকদের যে মাত্রায় অভিভূত করে তাও এই সমুদ্র সৈকতের এক অভাবনীয় নান্দনিকতা। নিসর্গের এই নয়নাভিরাম দৃশ্যকে আরও মনোহর আর আকর্ষণীয় করার উদ্যোগে গৃহীত হয়েছে একটি নতুন কর্মদ্যোতনা। ‘ট্যুরিজম পার্কে’র মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ রকম তিনটি পার্কের নির্দেশনা দিতে গিয়ে এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, বৈষয়িক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, কৃষ্টি সংস্কৃতির ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজার এলাকায় তিনটি বিশেষ পর্যটন পার্কের নির্মাণাধীন প্রকল্পের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে সরকারপ্রধান সতর্ক করে দেন সাগর তীরে উঁচু স্থাপনা কার্যক্রমের ব্যাপারে। সরকার কোনভাবেই অপরিকল্পিত উঁচু স্থাপনা তৈরি অনুমোদন করবে না। মূলত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে মহেশখালীর সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফের নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সাবরং ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের সর্ববিধ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এসব মেগা প্রকল্প পর্যটন শিল্পের দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সুরম্যতা বজায় রেখে দেশী-বিদেশী ভ্রমণকারীদের কিছু বৈষয়িক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপহার দেবে। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত হবে এই অঞ্চলের ভারসাম্য, আবহমান সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির অবারিত দানের অপার মহিমা, যা ঐতিহাসিক পরম্পরায় সুরক্ষিত হয়ে সর্বমানুষকে আনন্দ আর বিনোদনের অভাবনীয় অবদান রাখতে পারে। নিঃশর্তভাবে যে মহিমা অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে সেই প্রকৃতিও রুদ্র, রুষ্ট হতে সময় লাগে না। তাই সাগর পাড়ের মানুষের প্রাকৃতিক অবধারিত বিপর্যয়কে সামলে নিয়ে সৃষ্টি বৈচিত্র্যকে এক করে নেয়। ফলে ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতি বৃষ্টি এমন বিরূপ আবহকে আমলে নিয়েই নির্মাণাধীন প্রকল্পকে স্বপ্নের দুয়ারে নিয়ে যেতে হবে। সঙ্গত কারণে প্রাকৃতিক মনোরম স্নিগ্ধতায় কোন ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ করা থেকে যথাসম্ভব বিরতও থাকতে হবে। অনিন্দ্য সুন্দর, বৃহত্তম এই পর্যটন কেন্দ্রটি প্রকৃতির অবারিত দানকে অক্ষুণ্ণ রেখেই তার স্থাপনাসমূহ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে কেবলমাত্র সাবরং ট্যুরিজম পার্কটি তৈরি করা হবে বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের জন্য। বিশেষ এই পার্কগুলোর প্রকল্প ৩ বছরের মধ্যে শেষ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। কুয়াকাটার সামুদ্রিক স্থানটিও অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর এবং অভিভূত হওয়ার মতোই। সূর্য উদয় আর অস্ত দেখার এমন সুযোগ সত্যিই বিরল। এই কুয়াকাটাকে আরও উন্নত অবকাঠামোতে সমৃদ্ধ করে ভ্রমণকারীদের উপভোগ্য স্থানটিকে নতুন মাত্রা দেয়াও সময়ের দাবি। এখানেও সারা বিশ্ব এবং নিজ দেশ থেকে আসা প্রচুর পর্যটকের ভিড়। কুয়াকাটার অবারিত সৌন্দর্যরাশির সঙ্গে জোয়ার-ভাটার দ্বৈত মাধুর্য অবগাহন সত্যিই এক বিচিত্র অনুভব আর দেখার মতো অনাবিল রূপময়তা। সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা সবুজ বাংলাদেশ সমুদ্র, পাহাড়, নদী ও বনাঞ্চলের অপূর্ব মিলনসম্ভারে এক অনন্য নৈসর্গিক ইমারত। পর্যটন শিল্পের অগ্রযাত্রা যে এক অর্থে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সেকথা বলাই বাহুল্য।
×