ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পারিবারিক বন্ধন রাখতে শিশু পরিবারে এখন বৃদ্ধাশ্রম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  পারিবারিক বন্ধন রাখতে  শিশু পরিবারে এখন বৃদ্ধাশ্রম

অভিজ্ঞ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন) যারা পরিবারের অবহেলিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাদের পারিবারিক আবহের বন্ধনে রাখতে দেশে প্রতিটি শিশু পরিবারে বৃদ্ধাশ্রম খোলা হয়েছে। যেখানে পরিবারের অবহেলিত বয়স্ক ব্যক্তির নিজের বাড়ির মতো শিশুদের সঙ্গে থাকবেন। মনে করবেন তারাই নাতি নাতনি। জীবনের প্রান্ত বয়সে হেসেখেলে বাকি সময়টুকু পার করবেন। এ জন্য প্রতিটি শিশু পরিবারে দশটি করে আসনের বৃদ্ধাশ্রম খোলা হয়েছে। যা হবে বিশেষায়িত বৃদ্ধাশ্রম। ‘আপনজন’ তাদের অবহেলা করতে পারে, আশ্রিতের মতো থাকতে হতে পারে। প্রিয়জনের এমন আচরণে কোন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারেন। চোখের কোন থেকে অবচেতনেই গড়িয়ে পড়তে পারে দু’ফোঁটা অশ্রু। এসব বয়স্ক ব্যক্তির কথা ভেবে তিন বছর আগে সরকারীভাবে দেশে প্রথম বারের মতো প্রতিটি শিশু পরিবারে ৬৫ বছরের উর্ধে বয়সীদের (যাদের পরিচিতি অভিজ্ঞ নাগরিক বা সিনিয়র সিটিজেন) আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে শিশু পরিবার শুধু মেয়েদের জন্য নির্ধারিত সেখানে শুধু বয়স্ক নারী থাকতে পারেন। বগুড়ার শিশু পরিবার শুধু মেয়েদের জন্য নির্ধারিত। ১৯৫৯ সালে নগরীর উত্তরে ফুলবাড়ি এলাকায় শিশু পরিবার প্রতিষ্ঠা করা হয়। আগে নাম ছিল সরকারী এতিমখানা। ১৯৬২ সালে ১৩ দশমিক ২২ একর ভূমির ওপর অবকাঠামো নির্মিত হয়। নাম হয় সরকারী শিশু পরিবার। অবকাঠামো স্থাপনা ছাড়াও এর মধ্যে আছে প্রশস্ত সড়ক, বড় মাঠ, শিশু বিনোদনের স্থান, আম কাঁঠাল ও ফলফলাদির বাগান। তিনটি বড় পুকুর। যার একটি সান বাঁধা। ১৯৮৪ সাল থেকে বগুড়া শিশু পরিবার শুধু এতিম মেয়েদের নিবাস। তাদের নিবাসী বলা হয়। এই শিশু পরিবারের বৃদ্ধাশ্রমে অবহেলিত বৃদ্ধার থাকতে পারেন। তারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে জীবনের শেষ বেলাকার ঘরখানি খুঁজে পাবেন। যা বয়স্কদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। প্রকৃতির সান্নিধ্য তাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে। তারওপর শিশু পরিবারের নিবাসীরা তাদের সঙ্গে সময় কাটাবে নাতি নাতনির মতো। মনোস্তাত্ত্বিকদের ভায়ায় যা এক ধরনের আবেগের ¯েœহ ও ভালবাসা। বগুড়ার সবচেয়ে পুরনো এই মেয়ে শিশু পরিবারে মেয়ে নিবাসী আছে ১৬৩ জন। যারা প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করছে। পরে অনেকেই উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচ গান নাটক খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় সুনাম কুড়িয়েছে। বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্কগণ তাদের কাছে পেলে জীবনের দুঃখবোধ ভুলে গিয়ে জীবন বোধের নতুন ধারা খুঁজে পাবেন। যা তাদের শেষদিন পর্যন্ত হৃদয়াবেগে আনন্দের মধ্যে রাখবে। এই প্রশান্তি তাদের আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। এই বিষয়ে বগুড়া সমাজকল্যাণ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক শহীদুল ইসলাম খান জানান, বগুড়া শিশু পরিবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে। যেখানে বয়স্করা জীবনের প্রাপ্ত বয়সে শিশুদের সঙ্গে থেকে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। তাদের থাকা খাওয়া চিকিৎসা কাপড় ও আনুষঙ্গিক সব কিছুই সরকার বহন করবে। সুপরিসর জায়গা, গাছগাছালি, পুকুরঘাট সবই আছে। টেলিভিশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে। দেশের প্রতিটি শিশু পরিবারেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×