ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুলে ফুলে রঙিন সাজেদার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 ফুলে ফুলে রঙিন সাজেদার স্বপ্ন

খেতজুড়ে বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুলে ফুলে রঙিন স্বপ্ন। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। দারিদ্র্যতার দুঃসহ স্মৃতি মুছে তিনি এখন স্বাবলম্বী। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে সংসারের হাল তার হাতে। সাজেদা বেগম এখন সফল ফুল চাষী। বলছিলাম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের ইমামুল হোসেনের স্ত্রী সাজেদা বেগমের কথা। ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত গদখালি-পানিসারা এলাকার এই সংগ্রামী নারী শুনিয়েছেন তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। সাজেদা বেগম বলেন, ২০০৪ সালে স্বামী ইমামুল হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে এক পা কেটে ফেলতে হয়। অসুস্থ স্বামীর অনুপ্রেরণা আর স্বল্প পুঁজি নিয়েই বাড়ির পাশেই বর্গা নেওয়া ১০ কাটা জমিতে শুরু করি জারবেরা ফুল চাষ। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার হাজার টাকা। পাঁচ মাস পরেই প্রায় ৮০ হাজার টাকার জারবেরা ফুল বিক্রি করি। ফুল বিক্রিতে লাভ হওয়ায় উৎসাহ বেড়ে যায়। ওই বছরেই আরও দুই বিঘা জমিতে গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করি। ফুলচাষ লাভজনক হওয়ায় চাষের পরিমাণ বাড়াতে থাকি। বর্তমানে পাঁচ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করছি। এর মধ্যে ১৫ কাটা জমিতে রজনীগন্ধা, দেড় বিঘা জমিতে জারবেরা, এক বিঘা জমিতে গাঁদা, ১০ কাটা জমিতে গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছি। নবেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। দামও তুলনামূলক বেশি থাকে। তবে সারা বছর গাঁদা ও গোলাপ বিক্রি করি।’ সাজেদা বেগম আরও বলেন, বর্তমানে পাঁচ বিঘা জমিতে নানা জাতের ফুল চাষ করে খরচ বাদে মাসিক আয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এই আয় দিয়ে দুই সন্তানকে পড়াশোনার পাশাপাশি অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ভালই চলছে সংসার। ফুল চাষের আগে খড়ের ঘর ছিল। এখন স্বামী সন্তানদের নিয়ে ইটের বসতবাড়িতে থাকতে পারছি। তাছাড়া নিজের সংসার দেখাশোনার পাশাপাশি ফুলের জমিতে দৈনিক পাঁচজন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন জায়গার পাইকারদের ফুল সরবরাহ করি। আগামী মৌসুমে আরও তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ফুল চাষের উদ্যোগ নিচ্ছি। দুই ছেলেমেয়ে যশোরের ঝিকরগাছা সরকারি শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজে লেখাপড়া করছে। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার দিপাঙ্কর দাস জানান, ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। ফুল চাষের জন্য পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে নিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আগে এই অঞ্চলে শতকরা ১০ভাগ নারী ফুলে চাষের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। বর্তমানে এটা বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা ৩০ শতাংশ হয়েছে। নারী ফুলচাষিদের ব্যাংক ঋণ সহজ করলে ও উৎপাদিত ফুল সহজে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতে পারলে চাষে আরও উৎসাহিত হবে। সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×