ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যালয়ে ৭০ মৌচাক

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 বিদ্যালয়ে ৭০ মৌচাক

মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের চরকালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মৌমাছির স্কুলে পরিণত হয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রায় ৭০টি মৌচাকের কয়েক হাজার মৌমাছি পড়াশোনা করছে। দোতলা বিদ্যালয়টির চারদিক ঘিরে রয়েছে মৌচাকগুলো। শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী এবং মৌমাছি যেন একই পরিবারের সদস্যদের মতো অবস্থান করছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ও খেলাধুলায় কোন বাধা বা ক্ষতি করছে না মৌমাছি। বিদ্যালয়ের পুরো ভবনটির চারদিকে মৌচাক দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে। জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের চরকালিকাপুর তাল্লুক গ্রামে ১৯৪৫ সালে চরকালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের বর্তমান ভবনটি নির্মিত হয় ২০০২ সালে। নতুন এ ভবন নির্মিত হবার ৭/৮ বছর পর থেকে শীতের শুরুতে মাঝেমধ্যে কিছু মৌচাক তৈরি করত এবং ৫-৬ মাস থাকার পর অন্যত্র চলে যেত। গত ৫ বছর ধরে বিদ্যালয়টিতে মৌচাক বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বিদ্যালয়টির চারদিকে প্রায় সত্তরটি মৌচাক রয়েছে। কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক রাতের আঁধারে এ সব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করায় কিছু মৌচাক অন্যত্র চলে গেছে। বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা কিছু সময়ের জন্য হলেও বিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে মৌচাক দেখেন। মৌচাকগুলো বিদ্যালয়টির সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করেছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এসে মৌচাকগুলো দেখে যায়। যদি কোন মানুষ মৌচাকে আঘাত করে তা হলে হুল ফোটায়। আঘাত না করলে কাউকে আক্রমণ করে না। বিদ্যালয়ের ছোট-বড় শিক্ষার্থীরাও আনন্দের সঙ্গে মৌচাকের সামনে দিয়ে যাওয়া আসার মাধ্যমে ক্লাস করে। নির্ভয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। নয়ন নামের তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ের চারদিকের দেয়ালে প্রচুর মৌমাছি বাসা বেঁধেছে। মৌমাছির বাসা বাঁধার কারণে আমাদের লেখাপড়ায় কোন ক্ষতি হয় না। মৌমাছিগুলো খুব ভাল। আমাদের কোন ছাত্রছাত্রীকে কামড়ও দেয় না। কেউ যদি মৌমাছিদের আঘাত করে তাহলে কামড় দেয়ার চেষ্টা করে। সাঈম ইসলাম নামের পঞ্চম শ্রেণীর আরেক ছাত্র বলেছে, বিদ্যালয়ের চারদিকে যেভাবে মৌচাক বাসা বেঁধেছে তা দূর থেকে দেখলে ভয় লাগে। অথচ কোন একটা মৌমাছি আমাদের কাউকে কামড় দেয়নি। মৌমাছি আমাদের বন্ধু হয়ে গেছে। আমরা যখন ক্লাসে বসে লেখাপড়া করি কিছু মৌমাছি ক্লাসের ভিতর দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। দেখলে মনে হবে মৌমাছি আমাদের সাথে পড়াশোনা করছে। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিম জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ের মৌমাছিগুলো খুব ভাল। অনেক মৌমাছির বাসার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করি। বিদ্যালয়ের বারান্দা দিয়ে ও মাঠ দিয়ে আমরা যখন খেলাধুলা করি তখন আমাদের শরীরের সঙ্গে মৌমাছির ধাক্কা লাগে তারপরেও কামড় দেয় না। অথচ গ্রামের অন্য কোন জায়গার মৌমাছি সামান্য আঘাত পেলেই মানুষকে কামড় দেয়। বিদ্যালয়ের এ মৌমাছি আমাদের কোন ক্ষতি করে না। এত মৌমাছি থাকার পরে আমরা আনন্দে পড়ালেখা করছি। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হলে মাঝে মধ্যে আমরা মধু খেয়ে থাকি। মৌচাক দেখতে আসা দর্শনার্থী মাসুদ বলেন, সত্যিই আমি এত মৌচাক দেখে আনন্দিত হয়েছি। দোতলা বিদ্যালয়টির চারদিকে মৌচাকের বাসায় ঘেরা। বিদ্যালয়ের চারপাশ দিয়ে মৌচাক ঘোরাঘুরি করছে সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরাও ক্লাসে বসে পড়ালেখা করছে, মাঠ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। মৌমাছিগুলো কোন শিক্ষার্থীকে কামড় দিচ্ছে না। আমি বিদ্যালয়ে এত মৌমাছির কথা শুনে দূর থেকে দেখতে এসেছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মৌমাছির বন্ধন দেখে আমি আনন্দিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চায়না আক্তার বলেন, দুই বছর হলো আমি এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। আমি আশার পর থেকেই দেখি বিদ্যালয়ের চারপাশের দেয়ালে প্রচুর মৌচাক। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×