ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ জিম্বাবুইয়ে সিরিজ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ জিম্বাবুইয়ে সিরিজ শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্টে এ মুহূর্তে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে পছন্দের দল কোনটি? প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত হবে জিম্বাবুইয়ে। কারণ এই একটি দলের বিরুদ্ধেই এখন ম্যাচ শুরুর আগেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জয়ের কথা বলা যেতে পারে। অন্য আর কোন দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে যা বলা কঠিন। টেস্টে যে করুণ দশার মধ্যে পড়ে আছে বাংলাদেশ। আজ এই জিম্বাবুইয়ে দলটির বিরুদ্ধেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে খেলা। বাংলাদেশ যতই টেস্টে বিপদের মধ্যে পড়ে থাকুক, গত বছর থেকে টানা ছয়টি টেস্ট হারে নাজেহাল হোক, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্টে বাংলাদেশই ফেবারিট। নিজ দেশে খেলায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলও বাংলাদেশের কাছে হেরেছে। যদিও গত বছর আফগানিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবার দলটির ক্রিকেটাররা যে করেই হোক জেতার ক্ষুধায় মগ্ন। মুমিনুল, মুশফিক, তামিমরা দলকে জেতাতে বদ্ধপরিকর। আর প্রতিপক্ষ যেহেতু জিম্বাবুইয়ে, সেই সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টাতেও আছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু তা কী এত সহজ? সহজ নয়। কঠিন। জিম্বাবুইয়ে দলটির ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের মাটিতে খেলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের উইকেট, কন্ডিশন, ক্রিকেটারদের সক্ষমতা; সবকিছু সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা আছে জিম্বাবুইয়ানদের। বাংলাদেশের মাটিতে যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা। জিম্বাবুইয়ে দল টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ মিলিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে বিশ্বের অন্য দলগুলোর চেয়ে সবচেয়ে বেশি ৭১টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে টেস্ট খেলেছে ৯টি। নিজ দেশেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত বেশি টেস্ট খেলেনি জিম্বাবুইয়ে। যেহেতু বাংলাদেশের মাটিতে খেলা, তাই জিম্বাবুইয়ের হারের সংখ্যাই বেশি হওয়ার কথা। তা হয়েছেও। ৫টি টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে। ২টি টেস্টে জিম্বাবুইয়ে জিতেছে। ২টি টেস্ট হয়েছে ড্র। বাংলাদেশের মাটিতে ২০০১ সালে একটি টেস্ট জেতার পর আরেকটি টেস্ট জিততে ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে জিম্বাবুইয়েকে। ২০০৫ সাল থেকে টানা পাঁচ টেস্টের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। একটি টেস্ট ড্র হয়েছে। সর্বশেষ দুই দল বাংলাদেশের মাটিতে ২০১৮ সালের নবেম্বরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে। প্রথম টেস্টেই জয় তুলে নিয়েছিল জিম্বাবুইয়ে। তাতে করে বাংলাদেশের মাটিতে ১৬ বছর পর টেস্ট জেতার স্বাদ পায়। তবে দ্বিতীয় টেস্টেই আবার জয় হয় বাংলাদেশের। এই সিরিজের পর দুই দলের মধ্যকার আর টেস্ট খেলা হয়নি। এক বছর পর আবার দুই দল মুখোমুখি হবে। সেটি আবার বাংলাদেশের মাটিতেই। জয়ের আশা আছে বাংলাদেশেরই। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি, ভারতের বিরুদ্ধে দুটি ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি টেস্টে ইনিংস হার হয় বাংলাদেশের। এর মধ্যে গত বছর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টেও বড় ব্যবধানে হার। টেস্টে শুধু হেরেই চলেছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাতেই তা হয়েছে। জিম্বাবুইয়ে এখন প্রতিপক্ষ থাকায় সেই হারের গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার প্রত্যাশা আছে। আশা জেগেছে হারের বৃত্ত ভাঙ্গার। সেই আশা এখন নিরাশায় পরিণত না হলেই হয়। এই টেস্টটি শুরুর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মাথায় আরেকটি ব্যবধানও ঠকঠক করছে। টেস্টে এখনও যে জয়ের দিক দিয়ে জিম্বাবুইয়ের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০১১ সাল থেকে দুই দলের মধ্যকার ১৬টি টেস্ট লড়াই হয়। ব্যবধান ৬-৭। বাংলাদেশ ৬ টেস্টে জিতে। হারে একটি বেশি, ৭ টেস্টে। আর ৩টি টেস্ট হয় ড্র। এবার একমাত্র টেস্টটিতে বাংলাদেশ জিতলেই ব্যবধান ৭-৭ হয়ে যাবে। এরপর যখনই দুই দলের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ হবে তখনই এগিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই হবে। তবে এখন পর্যন্ত জিম্বাবুইয়েই এগিয়ে রয়েছে। টেস্ট খেলুড়ে সব দলের বিরুদ্ধেই টেস্ট খেলেছে জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের জয়ের হার বেশি। অবশ্য টেস্ট ম্যাচটি শুরুর আগে জিম্বাবুইয়ে দলটি যে বিসিবি একাদশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে, সেই ম্যাচ বাংলাদেশ দলের জন্য প্রেরণা হয়ে ধরা দিতে পারে। বাংলাদেশের মাটিতে খেলা। স্বাভাবিকভাবেই স্পিন দিয়েই বরাবরের মতো জিম্বাবুইয়েকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হবে। সেই চেষ্টায় যে সাফল্য মিলতে পারে তা প্রস্তুতি ম্যাচে স্পিনার শাহাদাত হোসেনের ৩ উইকেট নেয়া থেকেই বোঝা গেছে। নিয়মিত বোলিং করেন না শাহাদাত। যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের হয়ে খেলেও বোলিং করেননি। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে বোলিং করেই সাফল্য পান। তাহলে তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজরা তো আরও বেশি জ্বলে উঠবেন, ধারণা করাই যায়। আবার ব্যাট হাতে তানজিদ হাসান তামিম যে ঝড়ো সেঞ্চুরি করেছেন, সঙ্গে আল-আমিন জুনিয়রও ধৈর্য ধরে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং নৈপুণ্য তামিম, সাইফ, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক, মিঠুন, লিটনদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে। ব্যাটিং ব্যর্থতার ধারা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সেই সুযোগ ব্যাটসম্যানদের জন্য আছেও। তবে জিম্বাবুইয়ে দলটিকে আবার দুর্বল মনে করলেও চলবে না। ব্যাটিংয়ে দলটি শক্তিশালী। তা সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজেই দেখা গেছে। একটি টেস্ট হারলেও আরেকটি টেস্ট শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ড্র করেছে জিম্বাবুইয়ে। দুটি টেস্টই আবার পাঁচদিনে গড়িয়েছে। যদিও দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক অলরাউন্ডার, পারফর্মার শন উইলিয়ামস। তাতে জিম্বাবুইয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে সর্বশেষ বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলে যে সিলেটে একটি টেস্টে জিতেছিল, সেটি জিম্বাবুইয়ানদের সামনে প্রেরণা হয়ে ধরা দিচ্ছে। আর এক বছর পর টেস্ট খেলতে নেমেও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভাল খেলায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা। দলে স্পিনারও মজবুত। বাংলাদেশ যদি স্পিন দিয়ে জিম্বাবুইয়েকে বধ করার চেষ্টায় মশগুল থাকে, জিম্বাবুইয়েও সেই চেষ্টা করবে। তারাও জানে বাংলাদেশ কি করতে পারে। আবার বাংলাদেশ দলে নেই সাকিব আল হাসানও। তিনি এক বছর নিষিদ্ধ থাকায় জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এই টেস্টেও খেলতে পারবেন না। তাতে বাংলাদেশ দল খানিকটা হলেও পিছিয়ে থাকবে। অবশ্য সর্বশেষ ২০১৮ সালে যখন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশ, সেই সিরিজেও ছিলেন না সাকিব। সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। তবে একটি টেস্টে হেরেছিল। সেই শঙ্কা এবারও দূর করে দেয়া যাচ্ছে না। সব শঙ্কা, আতঙ্ক দূর হয়ে এখন বাংলাদেশ দল নিজ মাটিতে বছরের প্রথম ম্যাচটিতে, টেস্টটিতে জিতে আবার জয়ের ধারায় ফিরুক সেই আশাই করা হচ্ছে।
×