ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বাংলাদেশ জিম্বাবুইয়ে টেস্ট শুরু

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

   আজ বাংলাদেশ জিম্বাবুইয়ে টেস্ট শুরু

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি আজ শুরু হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে নয়টায় টেস্টের বল মাঠে গড়াবে। এই ম্যাচটি দিয়েই দুই দলের মধ্যকার একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি২০ ম্যাচের সিরিজ শুরু হয়ে যাবে। টেস্ট ম্যাচটির পরে ১ মার্চ প্রথম ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ মাঠে গড়াবে। এরপর ৩ ও ৬ মার্চ যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এ ওয়ানডে সিরিজটি মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে সিরিজ হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে ৯ মার্চ প্রথম ও ১১ মার্চ দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় এক মাসের বাংলাদেশ সফরে এসে ১২ মার্চ জিম্বাবুইয়ে দল নিজ দেশে ফিরে যাবে। এবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে টেস্ট ম্যাচটিই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশ দল যে টানা টেস্টে হেরেই চলেছে। গত বছর একটি টেস্টেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। বছরের শেষে ভারতের বিরুদ্ধেও দুই টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে। মাঝপথে আফগানিস্তানের কাছেও বড় ব্যবধানে হেরেছে। গত বছর পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই লজ্জার হার হয়েছে। এ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। এটিতেও একই পরিণতি হয়। ইনিংস ব্যবধানে হার হয়। গত বছর থেকে টানা ছয়টি টেস্ট খেলে সবকটিতেই হারের মালা গলায় ঝুলেছে। শূন্য হাতেই প্রতিটি টেস্ট শেষ করতে হয়েছে। এখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল জিম্বাবুইয়েকে মিলেছে, তাই জয়ের ধারায় ফেরার আশা দেখা হচ্ছে। কিন্তু তা কী এতটাই সহজ? জিম্বাবুইয়ে দলটি খুব খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। মাঝখানে ক্রিকেট থেকে আবার নির্বাসনে ছিল। শেষ পর্যন্ত আবার দলটিকে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। ২০১৮ সালের নবেম্বরে যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিল, এরপর গত বছর আর কোন টেস্টই খেলতে পারেনি। এ বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলা দিয়ে আবার এই ধারায় ফিরে। এত বিরতির পরও শ্রীলঙ্কাকে এমন অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল জিম্বাবুইয়ে, তাতে প্রশংসাই কুড়িয়েছে দলটি। হারারাতে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে হারলেও দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের আশা তৈরি করে ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ড্র হয়। বৃষ্টির সুবাদে ম্যাচটিতে ফল মিলেনি। তবে দুটি টেস্টই পাঁচদিনে গড়ায়। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যখন এত দুর্দান্ত খেলেছে জিম্বাবুইয়ে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও যে খেলবে না এর নিশ্চয়তা কে দিতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশ তো জিম্বাবুইয়ের সবচেয়ে পরিচিত স্থান। এখানে বিশ্বের দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিম্বাবুইয়েই খেলেছে। বাংলাদেশের যে কোন লীগেই জিম্বাবুইয়ের ক্রিকেটারদের দেখা যায়। বাংলাদেশের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জিম্বাবুইয়ের ক্রিকেটারদের ভালই জানা আছে। আর তাই জিম্বাবুইয়ে যে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের পরীক্ষা ভালভাবেই নেবে তা ধারণা করা যায়। অবশ্য ম্যাচটি বাংলাদেশের মাটিতে হবে। আর তাই বাংলাদেশের জয়ের পাল্লাই ভারি। যদিও সর্বশেষ ২০১৮ সালে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতেই হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটিও জিম্বাবুইয়ানদের প্রেরণা হয়ে ধরা দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা এখন জেতার ক্ষুধায় মগ্ন। যেহেতু জিম্বাবুইয়েকে পেয়েছে, সেই ক্ষুধা মেটানোর তাড়নাও আছে। তাছাড়া জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৬টি টেস্ট খেলে যে জয়ের সংখ্যা বাংলাদেশেরই একটি কম (বাংলাদেশ ৬-৭ জিম্বাবুইয়ে, ৩টি ম্যাচ ড্র), সেই ব্যবধান এবার কমাতেও তো হবে। আবার জিম্বাবুইয়ে দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। কাইল জার্ভিস, টেন্ডাই চাতারাদের মতো পেসাররাও নেই। সুযোগটি তাই কাজেও লাগাতে হবে। হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে টেস্ট জয়ের ধারায়ও ফিরতে হবে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক অবশ্য জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তবে জিম্বাবুইয়েকে আবার দুর্বল ভাবতে নারাজ। শুক্রবার সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘জিম্বাবুইয়ে আমাদের দেশে আসছে মানে খাটো করে দেখার কিছু নেই। কোন দলই কিন্তু খাটো না। সবদলই ভাল। আমি জিম্বাবুইয়েকে সবসময় ভাল দল হিসেবেই কাউন্ট করি।’ সঙ্গে জয়ের ব্যাপারে বিশ্বাস নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘দেখেন প্রতেকটা সিরিজেই, ম্যাচেই যখন আমরা খেলতে নামি তখন আমরা কিন্তু জেতার জন্যই নামি। এটা জিম্বাবুইয়ে হোক, অস্ট্রেলিয়া হোক, যেই হোক। গুরুত্ব সহকারে ভাল ক্রিকেট খেলার ভাবনা সবার। এই ম্যাচটাও জেতার জন্যই নামব। অবশ্যই আশাবাদী, আশা না থাকলে তো হবে না। সঙ্গে বিশ্বাসও আছে। ভাল ক্রিকেট খেলব বলে আমরা আশাবাদী। আমরা যদি ম্যাচটা জিততে পারি পুরো জিনিসটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। পুরো জিনিসটা বলতে আগে হারছি ওইটা না, আমরা যে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটা ওভারকাম করা হবে। আমার কাছে মনে হয় খারাপ সময়টা অনেকটাই চেঞ্জ হয়ে যাবে, যেভাবে আমরা অনুশীলন করছি এবং ট্রেনিং সেশন চলছে এটা পুরোপুরি আরও সুন্দর হয়ে যাবে।’ উইলিয়ামস না থাকায় টেস্টে জিম্বাবুইয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার পরেরদিনই আত্মবিশ্বাসী সুরে কথা বলেছিলেন। ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ থাকায় বাংলাদেশ দলে নেই অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তাকে ছাড়া ২০১৮ সালে দুই দলের মধ্যকার হওয়া সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টটি জিতে নিয়েছিল জিম্বাবুইয়ে। এবারও সেই একই আশা দেখছেন। আরভিন বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের জন্য ভাল যে সে (সাকিব) খেলছে না। অবশ্যই সে বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য অংশ। আমরা পুরোপুরি তৈরি। আমরা এখানকার (বাংলাদেশের) কন্ডিশন জানি। দেশে আমরা দুটো ভাল টেস্ট খেলেছি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। দুটোই পাঁচদিনে গেছে। গত বছর (২০১৮ সালে, টেস্টে) সিলেটে জিতেছিলাম। আমাদের সেরাটা দিয়ে লড়তে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের মাঠে খেলা বরাবরই কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবু আমরা সামনে তাকাচ্ছি। সাকিব না থাকায় ব্যাটিং অলরাউন্ডারের জায়গায় তাদের একটা ঘাটতি আছে।’ তবে উইলিয়ামস, জার্ভিস ও চাতারার অভাব ভালভাবেই বোধ করছেন আরভিন। জানিয়েছেন, ‘তারা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। অন্যদের সামনে সুযোগ তাদের অনুপস্থিতিতে নিজেদের মেলে ধরার।’ শেষ পর্যন্ত দেখা যাক, দুই দলের মধ্যে কোন দল নিজেদের মেলে ধরে আজ শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টটিতে জয় তুলে নিতে পারে।
×