ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যারা ইংরেজী উচ্চারণে বাংলা বলে তাদের জন্য করুণা হয়

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যারা ইংরেজী উচ্চারণে বাংলা বলে তাদের জন্য করুণা হয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশে ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বাংলা উচ্চারণের দৈন্যদশা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে। তবে সেটা মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়। শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে পারার ওপর গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনকার সময়ের অনেক ছেলেমেয়েকে দেখা যায় ইংরেজী উচ্চারণে বাংলা বলার চেষ্টা করে। ‘বাংলা বলতে তাদের কেমন যেন কষ্ট হয়। অথচ তারা এই দেশের আলো বাতাসে, এই দেশের মাটিতেই বড় হয়েছে। ‘যারা বাংলাদেশের মাটিতে বড় হয়ে বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজী উচ্চারণে কথা বলে, তাদের জন্য করুণা করা ছাড়া কিছুই বলার নেই।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন প্রবাসে নির্বাসিত জীবন যাপনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পরিবারের অনেককে ছোটবেলায় বিদেশে থাকতে হয়েছে। তবু আমরা তাদের বাংলাটা গুরুত্ব দিয়ে শিখিয়েছি। যেন তারা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে এবং তারা বলেও। তাদের উচ্চারণে যদি কোন সমস্যা হয় সেখানে দোষ ধরার কিছু নেই। ‘আমার বরং নিজের দেশের, নিজের গ্রামের কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। বক্তৃতায় আমরা গোপালগঞ্জের ভাষা আর ঢাকার ভাষা মিলিয়েই বলি। কারণ ছোটবেলায় চলে এসেছি ঢাকা শহরে, সেই ভাষার প্রভাব। আর টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে জন্ম নিয়েছি সেটা একটা প্রভাব, সব মিলিয়েই বলি। এর মাঝে কোন লজ্জা নেই।’ বাংলার আঞ্চলিক ভাষার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয় ভাষণগুলোর প্রসঙ্গ টানেন প্রধানমন্ত্রী। ‘জাতির পিতার ভাষণে একেবারে গোপালগঞ্জের শব্দগুলো তিনি বলে গেছেন অকাতরে যা মানুষের ভেতরে একটা আবেদন সৃষ্টি করেছে। তিনি খুব দ্রুত মানুষের হৃদয়ে পৌঁছতে পেরেছেন। সে কারণে তিনি যখন নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা গ্রহণ করেছে।’ একুশে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ দিকে এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও পরে সরকার পরিবর্তনে কাজ থমকে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ইনস্টিটিউটের অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল (বিএনপি) তারা এই ইনস্টিটিউটের কাজে আর গুরুত্ব দেয়নি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আমি আবার শুরু করেছি। আমার জন্য এমন একটি কাজ রেখে দেয়ার জন্য বিএনপি নেত্রীকে ধন্যবাদ।’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি চাই এর ইন্টারেস্টের টাকা থেকে ভাষা শিক্ষার জন্য ফেলোশিপ চালু করা হবে। কোন কোন ভাষা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শেখানে হবে ইনস্টিটিউট সেই সিদ্ধান্ত নেবে। যারা শিখবে তারা টাকা দিয়ে পড়বে। পাশাপাশি ফেলোশিপ থেকেও কিছু টাকা দেয়া হবে।’ ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নে জাতির পিতার ভূমিকার কথা স্মরণ করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা ভাষাকে। ১৯৫২ সালে পিকিং শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার পর জাতির পিতা সেখানে বাংলা ভাষাতেই বক্তব্য রেখেছিলে। ‘একইভাবে জাতিসংঘেও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণে করে আমিও জাতিসংঘে বাংলাভাষায় বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি।’ অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলসহ অতিথিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
×