ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ খাদ্যের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নিরাপদ খাদ্যের চ্যালেঞ্জ

বৃহস্পতিবার একটি সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা চাই। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া সহজ কাজ নয়। ভেজাল ও অন্যান্য দূষণের ফলে খাদ্য অনিরাপদ হয়ে ওঠে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়াও নানা কারণে খাদ্য দূষিত হতে পারে। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার যে কোন পর্যায়ে খাদ্য অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার রান্নাঘর পর্যন্ত খাদ্যের গুণগতমান নিশ্চিত রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষি জমিতে কী পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপন্ন হচ্ছে, সেই খাদ্যের প্রক্রিয়াজাতের বেলায় উদ্ভূত সঙ্কটগুলো কী উপায়ে মোকাবেলা করা হচ্ছে এবং ওই খাদ্যের মান নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা- এই তিনটি বিষয়ের ওপর মূলত নির্ভর করে খাদ্য নিরাপদ কি না। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গত বছর রাজধানীর খাবারের মান পরীক্ষার জন্য একটি সমীক্ষা চালায়। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ২০০ হোটেল-রেস্তরাঁ বেছে নেয়া হয় পরীক্ষার জন্য। মাত্র ৫৭টির খাবার স্বাস্থ্যসম্মত বলে বিবেচিত হয়েছে। এর বাইরের অন্য সব রেস্তরাঁর খাবারের মান অনেক নিচে। সম্প্রতি হাইকোর্ট এক আদেশে বলেছে, খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি বড় দুর্নীতি। সাধারণত নিরাপদ খাদ্যের ঝুঁকি দুই ধরনের-ক. জীবাণু সংক্রান্ত দূষণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ কারণে দূষিত খাদ্য মানবদেহে বিভিন্ন বিরূপ উৎসর্গের সৃষ্টি করে। খ. রাসায়নিক দ্রব্যাদি দ্বারা দূষণ। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত দ্রব্যাদি, পশুর ওষুধের অবশিষ্টাংশ, ভারি ধাতু অথবা অন্যান্য অবশিষ্টাংশ, যা অগোচরে খাদ্যে অনুপ্রবেশ করে। শিল্পোন্নত দেশে খাদ্যবাহিত রোগের সংখ্যা প্রতিবছর শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুন্নত দেশসমূহে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির দুর্বলতা থাকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, এ সব দেশেই দূষিত খাদ্যজনিত রোগের প্রকোপ ও ব্যাপকতা তুলনামূলক বেশি। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকিরই কারণ না, বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সার- এমন দুই শতাধিক রোগের জন্য দায়ী অনিরাপদ খাদ্য। দেশে উৎপন্ন এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন খাদ্যে জীবাণু ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসে এই প্রশ্নই উঠেছে, নিরাপদ খাদ্যের জন্য আমাদের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে কিছু উদ্যোগ আশা জাগাচ্ছে। যেমন, ইউএসএআইডির এভিসি প্রকল্পের সহায়তায় দক্ষিণ ডেল্টা অঞ্চলে সবজি ও ফসল চাষে লোকাল জিএপি (গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস) স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণের বিষয়ে ২০০ কৃষককে গত বছর থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে দেশের একটি শীর্ষ সুপার চেন শপ। সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন তৈরি করে সরকার। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর এই আইনের আওতায় ২ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তবে শুধু আইন ও কর্তৃপক্ষই শেষ কথা নয়, প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে নিরাপদ খাদ্য ক্রয় ও গ্রহণের ব্যাপারে। সম্মিলিত সচেতনতার ভেতর দিয়েই খাদ্যের নিরাপদ বলয় তৈরি করা সম্ভব।
×