ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ নদী খনন

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যৌথ নদী খনন

দীর্ঘদিন পরে হলেও একটি সুসংবাদ মিলেছে। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে অন্তত দুটি নৌ-রুট খননে সম্মত হয়েছে। এ নিয়ে দেশ দুটির যৌথ মনিটরিং কমিটিও গঠিত হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে খনন উপযোগী নৌপথ পরিদর্শন করেছেন। এই দুটি নৌরুট হলো যমুনার সিরাজগঞ্জ থেকে দুইখাওয়া পর্যন্ত ২৯২ কিলোমিটার এবং আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত ২৮৫ কিলোমিটার নৌপথ। নদী খননের খরচ বহন করবে দুই দেশ যৌথভাবে। যাতে বাংলাদেশ কর ও ভ্যাটসহ ৩৫ শতাংশ এবং ভারত ৬৫ শতাংশ বহন করবে। উল্লেখ্য, গত বছর ডিসেম্বরে দুই দেশের নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে রাজশাহী থেকে পাকশী পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদী যৌথভাবে খননের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই খননের খরচের ৮০ শতাংশ ভারত এবং ২০ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। যৌথভাবে নদী খননের মাধ্যমে নাব্য রক্ষাসহ দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন, ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি-সর্বোপরি পারস্পরিক পর্যটনের পথ প্রশস্ত করার জন্যও এর প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। জনশ্রুতিতে বাংলাদেশে আট শতাধিক নদীর কথা শোনা গেলেও বর্তমানে কায়ক্লেশে টিকে আছে ৭১০টি। এর মধ্যে ৩শ’ বড় নদী এবং ৪শ’ শাখা নদী-উপনদী। ৫৭টি নদী আন্তর্জাতিক হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ৫৩টি ভারত থেকে প্রবাহিত, মিয়ানমার থেকে ৩টি এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবাহিত ১টি নদী। সত্যি বলতে কি, কোনটির অবস্থাই ভাল নয়। ফারাক্কা-গজলডোবাসহ নানা বাঁধ ও ব্যারাজে স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ প্রায়। তদুপরি প্রতিনিয়ত দখল-দূষণে জর্জরিতÑ দেশে ও বিদেশে সমানভাবে, ভূমিদস্যু ও জনমানুষ কর্তৃক। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে নদীর প্রবাহ সচল রাখাসহ নদী রক্ষায় ন্যূনতম সচেতনতা নেই বললেই চলে। যে কারণে ইতোমধ্যেই শতাধিক নদী বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলোরও যায় যায় অবস্থা। এমনকি দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ৪০৫টি নদী অবৈধ দখলদারদের কবলিত হওয়ায় মানচিত্রে সেগুলোর অবস্থান প্রায় বিলীনের উপক্রম। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি ও পরিবেশে। মরে যাচ্ছে গাছপালা। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ নিসর্গ প্রকৃতি। রীতিমতো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে মৎস্য প্রজাতি, প্রাণিকুল ও জীববৈচিত্র্য। মোটামুটি দুটি দেশের চিত্র একইরকম। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী, সর্বোপরি দেশের সব নদী ও শাখা নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করে সারা বছর ধরে নাব্য রাখার জন্য সরকার একটি মাস্টারপ্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে একদিকে যেমন নদীমাতৃক বাংলাদেশের আবহমান চিরায়ত প্রকৃতি ও রূপ ফিরে আসবে, তেমনি নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ মানুষের যাতায়াতের পথ সহজ, সুগম ও সুলভ হবে। সরকার যে দেশের নদ-নদীকে সারা বছর ধরে নাব্য বজায় রেখে দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে সচেষ্ট এবং আন্তরিক, তা ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। নদী দখল ও দূষণ প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নৌপথ সচলের পাশাপাশি সারা বছর নদীর নাব্য রক্ষাসহ সেচ সুবিধা ও চাষাবাদ অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সম্প্রসারিত হবে নিঃসন্দেহে। ইলিশসহ মাছের উৎপাদনও বাড়বে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, নদী না বাঁচলে বাঁচবে না বাংলাদেশ, ভারতও। সে অবস্থায় নদ-নদীর সুরক্ষায় দুই দেশেরই এগিয়ে আসা আবশ্যক যৌথভাবে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির সুসম বণ্টনও জরুরী।
×