ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুল জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সুবিদিত, উদ্বেগজনকও বটে। সত্যি বলতে, যথাযথ আইন করেও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা হ্রাসসহ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে জাতিসংঘও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত। বিশ্বব্যাংক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখতে পেয়েছে, বাংলাদেশে অধিকাংশ সড়কের অবকাঠামো আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত নয়; বরং ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক-মহাসড়কে সিগন্যালিং ব্যবস্থাও ত্রুটিপূর্ণ। তদুপরি মানুষসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের উপযোগী লেন নেই। নেই প্রয়োজনীয় গতিরোধক। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণসহ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী দশকে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ করতে হবে ৭৮০ কোটি ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬৬ হাজার তিন শ’ কোটি টাকা। অবশ্য এতে বিশ্বব্যাংক কত অর্থ দেবে অথবা কিভাবে সহায়তা করবে তা সুস্পষ্ট হয়নি এখনও। অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে জানা যায় যে, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করতে হলে প্রয়োজন প্রায় ৬০ কোটি ডলার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে বিশ্ব সংস্থার দাফতরিক ভাষা হিসেবে প্রচলনের চেষ্টা বাংলাদেশ করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। তবে প্রধানত অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন ও প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের অভাবে তা আটকে আছে। সরকারের এই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া যেতে পারে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি যেহেতু ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেহেতু বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। বিশ্বে প্রতি বছর ১৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়। পঙ্গু ও আহত ততোধিক। এর এক-তৃতীয়াংশ ঘটে দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত তথা শ্লথগতি করে দেয়। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ৬৭ শতাংশ বাংলাদেশী ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী। এছাড়া ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর চতুর্থ কারণ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত পরিবারগুলোতে একদিকে যেমন নেমে আসে মানবিক বিপর্যয়, অন্যদিকে হতে হয় সমূহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় যানজটে অচল রাজধানীকে সচল করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক। এটি নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর। পরিবহন খাতে যুগ যুগ ধরে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সড়কে চলমান নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। স্কুলের কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরাও সহপাঠীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে নেমে এসেছিল রাজপথে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল নৈরাজ্য কতদূর বিস্তৃত হয়েছে পরিবহন খাতে। এসব নিরোধে কোথাও কেউ নেই সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ২৮ গুণ বেশি। প্রতিবছর আট হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান সড়ক দুর্ঘটনায়। আহত ও পঙ্গুতে পরিণত হন অর্ধলক্ষাধিক। একটি দুর্ঘটনা মানে একটি পরিবারকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া। পঙ্গুত্বের অভিশাপে যারা ভোগে তারা পায় না ক্ষতিপূরণ। দুর্ঘটনার অনেক কারণের মধ্যে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো অন্যতম। সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান, নসিমন, করিমন, লেগুনা চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এসব ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ। এর পাশাপাশি ২০১৮-এর ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।
×