ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি কে?

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি কে?

অনলাইন ডেস্ক ॥ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৪৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই মারা গেছে দুই হাজার ৪৪৪ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭৬ হাজার ৯৪৭ জন। এই অবস্থায় চীন কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তির (জিরো পেশেন্ট) খোঁজ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো একটা বিশেষ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটিকে বলা হয় ‘পেশেন্ট জিরো’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকে চিহ্নিত করা খুবই জরুরি। কেন, কীভাবে এবং কোথায় এই সংক্রমণের সূচনা হয়েছিল, তা কেবল তার মাধ্যমেই জানা সহজ হবে। কেননা নিঃসন্দেহে তিনিই চলমান এই করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎস। সংক্রমণের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতে এর প্রাদুর্ভাব ঠেকানো-দু কারণেই পেশেন্ট জিরোকে চিহ্নিত করা জরুরি। তবে সেই ব্যক্তি আসলে কে-চীনের কর্তৃপক্ষ আর বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে একমত নন। তাকে চিহ্নিত করতে অনুসন্ধান এখনও চলছে। চীনের কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে প্রথম করোনাভাইরাস কেস ধরা পড়ে গত বছরে ৩১ ডিসেম্বর এবং চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুপাখির বাজারের সঙ্গে এর প্রথম সংক্রমণগুলোর সম্পর্ক আছে। চীনে যে ৭৫ হাজারেরও বেশি লোকের দেহে এ সংক্রমণ ঘটেছে তার ৮২ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে এই হুবেই অঞ্চল থেকে। এ তথ্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির। কিন্তু চীনা গবেষকদের এক জরিপ যা ল্যানসেট সাময়িকীতে (চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী) প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয়, কোভিড১৯ (করোনাভাইরাস) ভাইরাস সংক্রমণ প্রথম চিহ্নিত হয় এক ব্যক্তির দেহে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর। তবে ওই ব্যক্তির সঙ্গে উহান শহরের ওই বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ওই জরিপের অন্যতম প্রণেতা এবং উহানের জিনইন্টান হাসপাতালের চিকিৎসক উ ওয়েনজুয়ান বলেন, প্রথম রোগীটি ছিলেন একজন বয়স্ক পুরুষ যিনি আলঝেইমার্স ডিজিসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি যেখানে থাকতেন সেখান থেকে ওই বাজারে যেতে চার-পাঁচবার বাস বদলাতে হয়। তাছাড়া তিনি অসুস্থ থাকায় বাড়ি থেকেও বের হতেন না। তবে প্রথম দিকে যে ৪১ জন সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তার মধ্যে ২৭ জনই উহানের সেই বাজারের সংস্পর্শে এসেছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মনে করে, খুব সম্ভবত প্রথম একটি জীবিত প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটে করোনাভাইরাসের। পরে ওই মানুষটি থেকে অন্য মানুষে সংক্রমণ ঘটে। ইবোলা রোগের ভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় ১৯৭৬ সালে। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় যে ইবোলার প্রাদুর্ভাব হয় সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় আকারের। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ওই সময় ইবোলা ভাইরাসে মারা যায় ১১ হাজারের বেশি ব্যক্তি আর সংক্রমিত হয়েছিল ২৮ হাজার। দুবছর ধরে চলা এ সংক্রমণে আক্রান্ত লোক পাওয়া গিয়েছিল ১০টি দেশে। এর মধ্যে আফ্রিকান দেশ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, যুক্তরাজ্য এবং ইটালিও আছে। পরে বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে, এর উৎস ছিল গিনির মেলিয়ান্দো গ্রামের দুবছর বয়সের একটি শিশু। ওই সময় বিজ্ঞানীরা বলেন, খুব সম্ভবত বাদুড়ের ঝাঁক বাস করে এমন একটি গাছের কোটরে ঢুকে খেলতে গিয়েই সে সংক্রমিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ১৯০৬ সালের টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপের পেশেন্ট জিরো ছিলেন মেরি ম্যালন নামে এক নারী। আয়ারল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়া মেরি বিভিন্ন ধনী ব্যক্তির বাড়িতে রাঁধুনী হিসেবে কাজ করতেন। মেরি যে বাড়িতেই কাজ করেছেন সে বাড়ির লোকেরাই টাইফয়েডে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। কিন্তু মেরি ছিলেন এমন একজন ‘সুস্থ জীবাণু বাহক’ যার নিজের দেহে কোনো রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি। অথচ তার সংস্পর্শে আসা অন্তত ১০০ লোককে তিনি সংক্রমিত করছিলেন। তাই মেরিকে বলা হয়, প্রথম ‘সুপার স্প্রেডার’দের একজন। নিউইয়র্কের সেই টাইফয়েড মহামারিতে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের একজন মারা গিয়েছিলেন। মাত্র একজন লোক যদিও বা একটা মহামারির জন্ম দিতে পারে, তারপরও তাকে চিহ্নিত করার পক্ষে নন অনেক বিজ্ঞানীই। তাদের মতে, ওই রোগ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াতে পারে এবং সেই লোকটিও ভিকটিমে পরিণত হতে পারেন। এর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হলেন কানাডিয়ান গেটান ডুগাস, যাকে ভুলবশত এইডস মহামারির উৎস বা ‘পেশেন্ট জিরো’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন সমকামী এবং বিমানের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮০’র দশকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে এইচআইভি ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়। জানা যায়, এই অনুমান আসলে ভুল ছিল। তিন দশক পরে ২০১৬ সালের এক জরিপে বিজ্ঞানীর বলেন, ডুগাস এইডসের পেশেন্ট জিরো হতে পারেন না। এই ভাইরাস আসলে ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিল। ‘পেশেন্ট জিরো’ কথাটার জন্ম হয়েছিল ১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইচআইভি রোগের বিস্তার নিয়ে গবেষণার সময়ই। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নামের গবেষণাকেন্দ্রের গবেষকরা ক্যালিফোর্নিয়ার বাইরে থেকে আসা কোনো এক রোগীকে বোঝাতে আউটসাইড শব্দটির প্রথম অক্ষর ‘ও’ ব্যবহার করেছিলেন। অন্য গবেষকরা ভেবেছিলেন এই ‘ও’ অক্ষর দিয়ে শূন্য বা জিরো বোঝানো হয়েছে। কারণ ইংরেজিতে জিরোকে অনেক সময় ‘ও’ বলা হয়। এভাবেই পেশেন্ট ‘ও’ কথাটা পরিণত হয় পেশেন্ট জিরো-তে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×