ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্পের ভারত সফর

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা  কতটুকু পূরণ হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ভারতের আহমেদাবাদ পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়াকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতে মোট তিনটি শহরে সফরের কথা রয়েছে তার। টাইম ও রয়টার্স। মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার ট্রাম্প ও মেলানিয়র সফর উপলক্ষে ১৪ মিলিয়নেরও বেশি ডলার ব্যয় করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন দুই পক্ষের জন্যই খুব কমই সফলতা অর্জিত হবে। এই ঘটনায় মোদি সাম্প্রতিক কিছু নীতিমালা, অর্থনৈতিক মন্দা ও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চলা বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বিরোধীদের রোষের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন। চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করার পর ট্রাম্প এবার মার্কিন পণ্যের জন্য আরও বাজার খুলে দিতে ভারতের সঙ্গেও একইরকম বাণিজ্যচুক্তি করতে চাইবেন। তবে এক্ষেত্রে চমকপ্রদ কোন অগগতি হওয়ার আশা ক্ষীণ। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছিলেন, এ ধরনের চুক্তি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পরে। তাছাড়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একে অপরের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের মধ্য দিয়েও টানাপোড়েনের সম্পর্ক চলেছে। গত মাস ধরে দু’পক্ষ একটি ছোটখাটো বাণিজ্যচুক্তি করার জন্য নিবিড় আলোচনা চালিয়ে আসলেও দুই দেশেরই কর্মকর্তারা বলেছেন সেটি হওয়া অনেক দূরের পথ। ওদিকে, বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি পূরণের জন্য আমেরিকার কৃষি ও ডেইরি পণ্যর রফতানি চান ট্রাম্প। কিন্তু ভারত তাতে রাজি নয়। বরং কিছুটা হলেও, সামরিক অস্ত্র কিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি পুষিয়ে দিতে চায় ভারত। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষেই বাদানুবাদ আছে। এ পরিস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে কোন বড় ধরনের সমঝোতার আশা তেমন নেই। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হতে প্রবাসী ভারতীয়দের ওপর নজর থাকবে ট্রাম্পের। তাই ভারত-বন্ধু হিসেবে একটা ইমেজ গড়ে তুলতে তিনি সচেষ্ট থাকতে পারেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। ভারতের অর্থনীতি এখন খুব ভাল যাচ্ছে না। এ সময় ভারত আর বেশি চায় যুক্তরাষ্ট্রের খোলা বাজার, আরও বেশি রফতানি সুবিধা। ভারতীয় পেশাদারদের জন্য উদার ভিসা-নীতি। উন্নত প্রযুক্তি, পুঁজি। কিন্তু ট্রাম্প যদি চাপ সৃষ্টির পথ বেছে নেন, তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। এ টানাপোড়েনেই ভারত-মার্কিন বাণিজ্যচুক্তি রয়ে যেতে পারে অধরা। সম্পর্কে চড়াই-উতরাই থাকলেও, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক প্রত্যাশিত পথেই প্রসারিত হচ্ছে। সেদিক থেকে ট্রাম্পের ভারত সফর গুরুত্ববাহী এবং কৌশলী ও অংশদারিত্বর পথে হেঁটে দুপক্ষে আলোচনা এবং সমঝোতারও বেশ কিছু ক্ষেত্র খোলা থাকছে। বাড়তে পারে মহাকাশ গবেষণার যৌথ পরিসর, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান। স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়, বিশেষ করে, ভারতের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং জেনেরিক মেডিসিন মার্কিন বাজারে পৌঁছে দেয়া, মনোরোগ সংক্রান্ত গবেষণাও মোদি ও ট্রাম্পের আলোচনার বিষয় হতে পারে। ট্রাম্পকে তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির বড়াই চালিয়ে যেতে দেয়ার জন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুল্ক কমাতে পারে ভারত। তাছাড়া, মোদি এবং ট্রাম্প, দু’জনই প্রথার বাইরে গিয়ে চমক দিতে সিদ্ধহস্থ, তাই এ সফরে অপ্রত্যাশিত কোন ঘোষণাও আসতে পারে।
×