ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শংকর লাল দাশ

মীরের ঈর্ষণীয় সাফল্য

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মীরের ঈর্ষণীয় সাফল্য

মীর মোহাম্মদ আলী ছোটবেলা থেকে আদর্শ করে নিয়েছেন- একটি সুন্দর পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে দৃঢ় সঙ্কল্প। সঙ্গে বাবা-মায়ের আশীর্বাদ। এই আদর্শই মীর মোহাম্মদ আলীকে দিয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সফলতা। শিক্ষা গ্রহণের প্রতিটি স্তরে অর্জন করেছেন প্রথম স্থান। কোন দিন কোথাও দ্বিতীয় হননি। এমনকি স্মাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য লাভ করেছেন চ্যান্সেলর এবং প্রধানমন্ত্রী পদক। এ ছাড়া লাভ করেছেন দেশী-বিদেশী অসংখ্য বৃত্তিসহ প্রচুর পুরস্কার। বিদেশী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা নিবন্ধ। সর্বশেষ তিনি ফিশারিজ, এ্যাকোয়াকালচার এ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের মৎস্য খাতের উন্নয়নে অবদান রাখার আকাক্সক্ষা নিয়েই যোগ দিয়েছেন শিক্ষকতায়। মীর মোহাম্মদ আলী খুলনার খানজাহান আলী থানার যোগীপোল গ্রামের কাদামাটি গায়ে মেখে বড় হয়ে উঠেছেন। বাবা মীর তৈয়ব জং খুলনা জুট মিলের মান নিয়ন্ত্রণ অফিসার। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় মীর মোহাম্মদ আলী ছোটবেলা থেকে দেখেছেন বাবার সৎ জীবনযাপন আর অল্প আয়ে মায়ের সংসার সামলানোর গোছানো কর্মদক্ষতা। বাবা-মাকে আদর্শ মেনে নিজেকে সৎ রেখে সমাজ এবং দেশের জন্য কিছু করার পরিকল্পনা সেই ছোট্ট বেলাতেই গ্রহণ করেছেন। তাই প্রথম শ্রেণী থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি শ্রেণীতে অর্জন করেছেন প্রথম স্থান। খুলনা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতেও জিপিএ ফাইভ। মায়ের ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হওয়ার। ভর্তি পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়েটিং লিস্টে নাম আসায় আর ডাক্তারী পড়া হয়নি। বরং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে শীর্ষে নাম আসায় মাথার মধ্যে চেপে বসে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। স্নাতকের প্রতিটি সেমিস্টারে তাক লাগানো ফলাফল করেন। এমনকি স্নাতক পর্যায়ের চারটি লেভেলে ডিন মেরিট লিস্ট এ্যাওয়ার্ড, ইউনিভার্সিটি গ্রান্ড কমিশন বৃত্তি ও ন্যাশনাল সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০১৩ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ থেকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। একই ভাবে সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে ২০১৫ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরই কৃতিত্বস্বরূপ তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক অর্থাৎ চ্যান্সেলর পদক লাভ করেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের হাত থেকে গ্রহণ করেন। এর আগে লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক। যা ২০১৭ সালের ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে তুলে দেন। পড়াশুনার প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় লাভ করেছেন প্রচুর বৃত্তি ও পুরস্কার। বলতে গেলে বৃত্তির অর্থেই তার পড়াশুনা চলেছে। এছাড়া, পড়াশুনার পাশাপাশি মীর মোহাম্মদ আলী স্নাতক পর্যায় থেকে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী এবং দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থা ও শিক্ষকদের সঙ্গে কখনও একক ভাবে আবার কখনও যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণার কাজ করেন। বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নেও তিনি একাধিক গবেষণা কাজ করেন। ইতোমধ্যে তার ৪০টির মতো গবেষণা প্রবন্ধ দেশী-বিদেশী নামকরা জার্নালগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিসের সঙ্গে। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার এ্যাশোসিয়েশনের কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। উপকূল অঞ্চলের কাঁকড়া ও কাঁকড়া চাষীদের নিয়ে এরই মধ্যে একটি গবেষণাধর্মী বই প্রকাশিত হয়েছে। কাজ করেছেন নদী দূষণ এবং এর ফলে সম্ভাব্য মানবদেহের ঝুঁকি নিয়ে। তার গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ হয়েছে বিশ্বমানের জার্নালে। মীর মোহাম্মদ আলীর পড়াশোনার পাশাপাশি রয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ। অবসরে প্রচুর বই পড়েন। রক্তে যেন তার ভ্রমণের নেশা। সারাদেশ বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্থানগুলো ঘুরে দেখার আগ্রহ প্রবল। নিজের পকেটের অর্থে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বইপত্র কিনে অন্যদের উপহার দিয়ে এক ধরনের তৃপ্তি খুঁজে পান। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও রয়েছে সমান আগ্রহ। অসহায় মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন অবিরাম। প্রতিটি ভাল কাজের সঙ্গেই যুক্ত হতে চান। নিজের এতসব সাফল্য সম্পর্কে মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এক নাগাড়ে কয়েক ঘণ্টা কোনদিনই পড়াশোনা করিনি। তবে প্রতিটি ক্লাসে মনোযোগ দিয়েছি। আর সে সঙ্গে পেয়েছি বাবা-মায়ের আশীর্বাদ। এতেই মিলেছে সাফল্য। তার মতে-প্রতিটি কাজের জন্য একটি সুন্দর পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দৃঢ় হতে হবে, তবে সাফল্য আসবেই আসবে। মীর মোহাম্মদ আলী মনে করেন, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। বিশেষ করে মৎস্য সেক্টরে এরই মধ্যে দেশ অনেক এগিয়েছে। আরও আগানোর সম্ভাবনা রয়েছে। কেবলমাত্র মৎস্য সেক্টরেই দেশ হতে পারে বিশ্বের রোল মডেল। এ জন্য দরকার প্রচুর গবেষণা ও তার সফল বাস্তবায়ন। আর এ কাজে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজেকে শতভাগ উজার করে দিতে চান।
×