ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘৭১ এ মুকসুদপুর’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘৭১ এ মুকসুদপুর’ মঞ্চস্থ

নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ ॥ জাতীয় নাট্যোৎসবের অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে মঞ্চস্থ হলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘৭১ এ মুকসুদপুর’। শনিবার রাতে গোপালগঞ্জ শহরের শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি মিলনায়তনে এ নাটকটির মঞ্চায়ন করে মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী এলাকার সমতা থিয়েটার। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত এ নাটকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুকসুদপুরসহ আশপাশে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের বেশকিছু প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণহত্যার বাস্তব ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর কিভাবে মুকসুদপুরে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব শুরু করে, প্রশিক্ষণ নিয়ে কিভাবে তারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়- এ বিষয়গুলো নাটকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নাটকে সেখানকার বনবাড়ি এলাকায় ও জয়বাংলা বাজারে পাকবাহিনীর হামলা, গণহত্যা ও নির্যাতনের করুণ চিত্র নির্মাণ করেছেন নাট্যকার রফিকুল ইসলাম। এ নাটকে একদিকে যেমন মুকসুদপুরের বিভিন্ন গ্রামের রাজাকার তপু মিয়া, নওয়াব আলী ও হান্নানসহ অন্যান্য রাজাকারের লুটপাট, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, পাকবাহিনীকে সহায়তা, ধর্ষণ, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের বাস্তব কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে; তেমনই মুকসুদপুরের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হায়দার, কাশেম ও জাফরসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার জীবনের আশা-আকাক্সক্ষা, দেশপ্রেম, ভালবাসা ও ত্যাগের কাহিনীও চিত্রায়িত হয়েছে এ নাটকে। মুকসুদপুরের দিগনগর, সিঁন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বাটিকামারী, গোহালা ও বামনডাঙ্গার যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা সঠিক ইতিহাসের মঞ্চায়ন হয়েছে এ নাটকে। মুক্তিযুদ্ধে অকাতরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণদান, পাকবাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের মঞ্চায়ন দেখে নাটকে উপস্থিত দর্শকরাও অশ্রুসিক্ত হন, মুগ্ধ হন। নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে সমতা থিয়েটারের একঝাঁক নাট্যকর্মীর প্রাণবন্ত অভিনয় সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ৭১-এর সেই দিনগুলোই। আর নাটকের শেষ দৃশ্যে দিগনগর যুদ্ধে পাকবাহিনীর পরাজয়ের পর মুক্তিকামী মানুষের বিজয় উল্লাসের মধ্য দিয়ে বেদনামিশ্রিত সেই আনন্দের হাসিও পরিলক্ষিত হয় দর্শকদের চোখেমুখে। নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক রফিকুল ইসলাম জানান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও মুকসুদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে ধরতেই তারা এ নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। জেলা কালচারাল অফিসার আল মামুন বিন সালেহ বলেন, এ ধরনের বাস্তব ঘটনাধর্মী মুক্তিযুদ্ধের নাটক রচনা করে মঞ্চায়ন করা হলে, প্রতিটি অঞ্চলেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এলাকার মানুষ জানতে পারবে এবং ইতিহাস কেউ বিকৃতি করতে পারবে না।
×