ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ই-গবর্নমেন্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ই-গবর্নমেন্ট

সরকারী অফিস-আদালতে কাগজপত্র তথা লিখিত মুসাবিদার দিন বুঝি শেষ হয়ে এলো। সম্ভবত অচিরেই বন্ধ হতে যাচ্ছে ফাইল চালাচালিও। অফিসই যদি হয় কাগজবিহীন এবং কোন নোট দেয়ার বালাই না থাকে তাহলে ফাইলের প্রয়োজন পড়বে কেন? অনুরূপ একটি লক্ষ্য নিয়ে মুজিববর্ষের মধ্যেই ই-গবর্নমেন্ট চালু করতে চায় সরকার। উল্লেখ্য, মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ১৭ মার্চ, যা চলবে ২০২১ এর ১৭ মার্চ পর্যন্ত। এর মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। আর এই শুভযোগ ও শুভলগ্নে প্রকৃত অর্থে একটি আধুনিক তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ কে না চায়? বর্তমান তথ্য প্রযুক্তিবান্ধব সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ব্যাপক জনগোষ্ঠীর স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা, আশা-অকাক্সক্ষা পূরণ। উল্লেখ্য, সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা তথা অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়েছে অনেক আগেই। ইতোমধ্যেই ই-টেন্ডার কার্যক্রম, ই-পাসপোর্ট ইত্যাদি সেবাও চালু রয়েছে। এখন সরকার চাচ্ছে ই-গবর্নমেন্ট চালু করতে জরুরী ভিত্তিতে। অর্থাৎ, সরকারী অফিস আদালতে চিঠি চালাচালি, কাগজপত্র ও নথি সংরক্ষণ, নোট আদান-প্রদান, ওপর-নিচে ফাইল পাঠানো ইত্যাদি কিছুই থাকবে না। লিখিত কাগজপত্র বা চিঠিপত্রের কোন বালাই নেই, বরং সব কার্যক্রমই চলবে ই-ফাইলিং ও ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। কমে আসবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অযথা সময়ক্ষেপণ, তদুপরি ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম-অব্যবস্থা, দীর্ঘসূত্রতা। ফলে স্বভাবতই সরকার ও প্রশাসন হবে আরও উন্নত, গতিশীল, তদুপরি আধুনিক ও যুগোপযোগী। এতে বহির্বিশ্ব বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগও অপেক্ষাকৃত সহজসাধ্য হবে। তবে এ কথাও ঠিক যে, হয়ত এ মুহূর্তে সব সরকারী অফিস-আদালতেই ই-গবর্নমেন্ট চালু করা সম্ভব হবে না। কেননা, এর জন্য চাই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল। সিনিয়র ও মধ্যম শ্রেণীর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এর উপযোগী নয়। তাদের জন্য দ্রুত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি প্রস্তুত করতে হবে সর্বস্তরের জনসাধারণকেও ই-সেবা গ্রহণে। কাজেই পত্রপাঠ এখনই কাগজকে ‘না’ বলা বোধহয় সঙ্গত হবে না। এর পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে হয়তো কাগজের প্রয়োজনীয়তা থেকেই যাবে শেষ পর্যন্ত। জাতীয় সংসদে পরিবেশিত এক তথ্যে জানা যায়, ২০২১ সাল নাগাদ দেশে আইসিটি সেক্টরে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, দেশে একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা। স্বনির্ভর ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। এও অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও আইসিটির ভূমিকা ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। বর্তমানে কৃষি, চাষাবাদ, খাদ্যশস্য বিপণন, পরিবহন ও যোগাযোগ এমনকি চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। অথচ ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তখন রাজধানীর বাইরে কোন ইন্টারনেট সংযোগ পর্যন্ত ছিল না। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষম। আরও যা আশার কথা তা হলো, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বিপুল এই জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। তথ্যপ্রযুক্তি-জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বিশ্বে হাত গুটিয়ে বসে থাকার অবকাশ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ যথার্থ অর্থে গড়ে তুলতে হলে আইসিটি সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন ও বিকাশ ছাড়া গত্যন্তর নেই। এটি ই-গবর্নমেন্ট প্রচলনের অন্যতম প্রধান শর্ত বৈকি।
×