ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেনশনে কমবে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 পেনশনে কমবে দুর্ভোগ

সরকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা চাকরির নির্দিষ্ট মেয়াদ পার হওয়ার পর অবসরে যান। তার আগে ১ বছর অবসরকালীন ছুটি ভোগ করেন পূর্ণাঙ্গ বেতন ভাতাসহ। এ পর্যন্ত অবসরে যাওয়া সরকারী চাকরিজীবীদের তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। এরপর ধাপে ধাপে অর্জিত হয় সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন আর্থিক কার্যক্রম। ১৮ মাসের বেতন, পিএফএর টাকা, অবসরের আগে মারা গেলে সংশ্লিষ্ট মানুষটির জীবন বীমার অর্থ সবই এক সময় অর্জিত হতে থাকে। পরবর্তীতে পাওয়া যায় বিরাট অঙ্কের ১টি অর্থ, যাকে পরিপূর্ণভাবে পেনশন বলা হয়। আর এখানেই তৈরি হয় যত বিপত্তি, দীর্ঘসূত্রতা এবং অযথা সময় ক্ষেপণ। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে আরম্ভ করে প্রশাসনিক বিভিন্ন দাফতরিক কার্যক্রম পার হওয়াই এক বড় ধরনের সঙ্কট। এক সময় পেনশনকারীই নির্ধারণ করতেন তিনি পুরো টাকা নেবেন কিংবা সরকারের কাছে কিছুটা সমর্পণ করে আসবেন। তবে মারা গেলে তার জন্য তেমন সুযোগ থাকত না। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার একেবারে নিয়ম বেঁধে দেয় দুই-তৃতীয়াংশ টাকা পেনশন ভোগকারীরা পেলেও বাকিটা সরকারের কাছে থেকে যাবে। বিনিময়ে সরকার প্রতি মাসে নির্ধারিত স্কেলে বেঁচে থাকা পর্যন্ত সে টাকা দিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, বছরের ভাতাও সেই সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। সঙ্গে প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধিরও সুযোগ থাকে। ফলে অবসরের পরবর্তী সয়মটুকু কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আর নির্বিঘেœ সরকারী চাকরিজীবীরা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে পারেন। তবে সংশ্লিষ্ট মানুষ সঙ্কটাপন্ন অবস্থার মধ্যে পড়ে যায় যখন পেনশনের আসল টাকা উত্তোলনের সময় আসে। কিছু জায়গায় এই টাকা ওঠানোর ব্যাপারটা সহজসাধ্য হলেও অনেক ক্ষেত্রে সেখানে জটও পাকিয়ে যায়। প্রশাসনিক এই বিভাগ, ওই শাখা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত, অবসন্ন অবসরে যাওয়া মানুষটির প্রতিদিনের জীবন দুঃসহ অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। একে তো অবসরকালীন সময়, মনটা সুস্থির আর নিশ্চিন্ত থাকে না। তেমন মানসিক আর মানবিক বিপর্যয় সামলাতে গিয়ে হতোদ্যম হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। বর্তমান সরকার নতুন নিয়মে পেনশনের অর্থ তিন কার্য দিবসে উত্তোলন করার নিয়মবিধি চালু করেছে। যাতে কোন ভোগান্তি এবং দুর্ভোগ ছাড়া অবসরে যাওয়া ব্যক্তিবর্গ তাদের অধিকার, প্রাপ্য অর্থ সময়মতো পেতে পারেন। এমন নির্দেশ আসছে যাতে ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশসহ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর টাকা তার ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে। এ মর্মে অর্থ মন্ত্রণালয় ‘পেনশন সহজীকরণ আদেশ ২০২০’ জারি করেছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগে শুধু পেনশনের বিষয়টি নজরদারি করতে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। মূল পেনশনভোগীর মৃত্যুর কারণে তার পরিবারবর্গকে সমান সুযোগ-সুবিধায় প্রাপ্য অর্থ পাঠিয়ে দেয়া হবে ব্যাংক হিসাবে। আর এ জন্য অবসর গ্রহণের আগে ইএলপিসি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীকে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে। আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষও সময় ক্ষেপণ না করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হবে। সারা জীবন সরকারী চাকরি করে শেষ সময়টুকু যে অর্থ সংশ্লিষ্টদের নিরাপদে, নিঃসংশয়ে দিন যাপনে মূল ভূমিকা রাখে সেই টাকা উত্তোলন যাতে নির্বিঘœ আর নিরুদ্বিগ্ন হয়, তেমন ব্যবস্থা সরকার সবার হাতের নাগালে পৌঁছে দেবে। নতুন করে দেশের ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের মাঝে যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ এসেছে, সেটাও যেন দীর্ঘসূত্রতার জালে আটকে না পড়ে, তাও নজরদারি করা একান্ত জরুরী।
×