ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু রিফাতকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাগেরহাটে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু রিফাতকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার ৩

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের চিতলমারীর চাঞ্চল্যকর শিশু রিফাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও হত্যার সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চিতলমারী উপজেলার সাবোখালী গ্রামের হামিদ তালুকদারের ছেলে হাফিজুর রহমান তালুকদার ওরফে ছোট (২৯), শওকত তালুকদারের ছেলে ইকবাল তালুকদার (১৯) এবং আব্দুল হান্নান তালুকদারের ছেলে সাকিব তালুকদার (১৪)। শাকিব ও ইকবাল শিশু রিফাতের চাচাতো ভাই। এদের মধ্যে হাফিজুর রহমান বাগেরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক সমির মল্লিকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাসাতে নিকট আত্মীয়ের পরিকল্পনায় শিশু রিফাতের চাচাতো ভাইরাই শিশু রিফাতুলকে হত্যা করা হয় বলে পিবিআই জানায়। মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআই বাগেরহাট কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান খুলনা বিভাগীয় প্রধান বিশেষ পুলিশ সুপার আতিকুর রহমান মিয়া। এসময় বাগেরহাট কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার বলেন, ২০১৯ সালের ২৬ নবেম্বর চিতলমারী উপজেলার চৌদ্দহাজারী গ্রামের মান্নান তালুকদারের ৫ বছর বয়সী ছেলে রিফাতুল তালুকদারকে হত্যা করে স্থানীয় ওদুদ মেম্বারের পুকুরে ফেলে রেখে যায়। পরে ২৮ নভেম্বর চিতলমারী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। পরবর্তীতে পিবিআইকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে জানা যায়, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রিফাতুলের নিকট আত্মীয় নুরুল আমীন তালুকদার তার বন্ধু মোঃ হাফিজুর রহমান তালুকদার ওরফে ছোটকে বলে রিফাতুলকে হত্যা করতে হবে। হাফিজুর জানতে চাই ছোট শিশুকে কেন হত্যা করব। নুরুল আমীন বলেন, রিফাতুলের শারীরিক সমস্যা আছে এবং খালিদ হত্যার সকল আসামী জামিনে বের আসলে আমাদের আরও সমস্যা হবে। তাতে ছোট রাজী হয় না। এরপর নুরুল আমীন ছোটকে বলে তোর কিছু করতে হবে না। যা করার ইকবাল ও সাকিব করবে। সে অনুযায়ী ঘটনার দিন দুপুর একটার সময় ইকবাল ও সাকিব রিফাতুলকে বাড়ির পাশের মুকুল হালদারের সুপারীর বাগানে নিয়ে যায়। সাকিব রিফাতুলকে বাগানের পাশে পানিতে ফেলে গলা কাদার মধ্যে চেপে ধরে। এতে রিফাতুলের মৃত্যু হয়। তারপর নুরুল আমীন, সাকিব ও ইকবাল ছোটকে হুমকী দেয় তুই যদি কাউকে জানাস তাহলে তোকেও হত্যা করা হবে। ঘটনার পর ছোট ঢাকায় চলে যায়। ছোট হত্যার সাথে জড়িত নিশ্চিত হওয়ার পরে ২৬ জানুয়ারি পিবিআই তাকে গ্রেফতার করে। ছোট‘র স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে ইকবালকে এবং হাসপাতাল থেকে সাকিবকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যার সাথে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে শিশু রিফাতুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের খবর ও মূল আসামী ধরা পড়ায় ওই এলাকার নির্যাতিত শতাধিক নারী পুরুষ নানা বয়সী লোক পিবিআই কার্যালয়ের সামনে জড় হয়। এসময় তারা মূল আসামী ধরা পড়ায় পিবিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অন্য আসামীদেরকে গ্রেফতারের জন্য অনুরোধ জানান। চিতলমারী থেকে আসা চাঁদনী আক্তার, হাসিনা বেগম, সাইদুর রহমান তালুকদার, ডলিসহ কয়েক জন বলেন, শিশু রিফাতুল হত্যার পরে এলাকার অনেকের নামে মামলা হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে শিশু রিফাতের পরিবার এলাকার অনেকর উপর অত্যাচার ও ঘেরের মাছসহ মূল্যবান সম্পদ লুটে নেয়। এই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামী ধরা পড়ায় আমরা এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারব বলে আসা প্রকাশ করেন তারা।
×